অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে: এনবিআর চেয়ারম্যান
ঢাকাঃ
অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে; এর ফলে ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। গতকাল এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে মুজিববর্ষের কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাইলট বেসিসে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সাড়া বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য সাড়া না পাওয়া গেলেও পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়ছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ফলে ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে। তবে রিটার্নের ক্ষেত্রে তেমন সাড়া পড়েনি। আয়কর রিটার্ন এলে বোঝা যাবে কী পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে চায়, সেক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন করতে পারবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ে প্রশ্ন করে আমরা এমন সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে না। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রশ্ন তোলে তবে তাদের সেটা অন্যায়, অনুচিত হবে। এক্ষেত্রে কেউ চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। সরকার আইন করে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে বলেছেন। এখানে কেউ প্রশ্ন রাখতে পারে না। তবে আমার মনে হয় কাউকেই আইনের আশ্রয় নিতে হবে না।’
উল্লেখ্য, চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে এ অর্থ বিনিয়োগ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। পুঁজিবাজার ছাড়াও ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা তাদের আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, ভবন, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দেওয়া সাপেক্ষে তা আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবেন।
করোনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, রাজস্ব ঘাটতি বাড়বে, সে ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সাধারণভাবে রাজস্ব আহরণের চেষ্টা করছি। তবে কাউকে হয়রানি করে নয়। আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি বকেয়া ও মামলা থেকে রাজস্ব আহরণের।’
ইএফডি বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভ্যাটের অনিয়ম বন্ধ করতেই ইএফডি চালু করা হচ্ছে। ইএফডি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এর ফলে কথিত হয়রানি দূর হবে ও রাজস্ব আহরণের ব্যয় ও ব্যবসায়িক খরচ কমবে। কর পরিহারের সুযোগ থাকবে না। রাজস্ব আদায়ে গতি আশার পাশাপাশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অটোমেশনের আওতায় আসবে।’
তিনি বলেন, ‘ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাবে আশা করছি। আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারব। প্রাথমিকভাবে ১০০ মেশিন বসানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আগামী তিন মাসের মধ্যে এক হাজার ইএফডি মেশিন বসানো হবে। আগামী জুনের মধ্যে এক লাখ ইএফডি মেশিন বসানো হবে। আমরা মেশিন নজরদারি করব।’
ভ্যাটদাতাদের পুরস্কৃত করার বিষয়টি উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভোক্তার ফোন নম্বর আমাদের কাছে সংরক্ষিত থাকবে। নির্দিষ্ট সময় শেষে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ভোক্তাকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।’
তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকায় দুটি কমিশনারেটের আওতাধীন ৮০টি ও চট্টগ্রাম কমিশনারেটের আওতাধীন ২০টি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি স্থাপন করা হয়েছে। উদ্বোধনের পরপরই এসব মেশিন চালু হয়ে যায়। ২৪ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করছে এনবিআর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালভাবে যুক্ত ছিলেন কম্পট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব বাংলাদেশ মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ।