অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংসদে মুসলিম অভিবাসী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রস্তাবে দেশটিতে তুমুল নিন্দার ঝড় বইছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সিনেটর ফ্রেসার অ্যানিং এ প্রস্তাব পেশ করেন। সেই সঙ্গে ইংরেজি না জানা অভিবাসীদেরও দেশটিতে প্রবেশ করতে না দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
ফ্রেসারের এমন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল। অস্ট্রেলিয়া কখনোই বৈষম্যবাদকে সমর্থন করে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সংসদে হামলার ঘটনার পর ফ্রেসারের মন্তব্যই সবচে বড় বিবাদ সৃষ্টিকারী বক্তব্য বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রায় সব রাজনীতিবিদ।
অভিবাসন আইন কঠোর করা সংক্রান্ত বক্তব্যে ফ্রেসার তাঁর এই মুসলিম অভিবাসী নিষিদ্ধের প্রস্তাব রাখেন। তিনি বলেন, ‘মুসলমানেরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অপরাধের জন্য দায়ী। অস্ট্রেলিয়ায় জঙ্গিবাদ রুখতে মুসলিম অভিবাসীদের নিষিদ্ধ করাই চূড়ান্ত সমাধান।’ আর তাঁর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে একটি গণভোটের আয়োজন করারও আমন্ত্রণ জানান ফ্রেসার।
ফ্রেসারের এমন মন্তব্যে সংসদেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এমনকি উগ্র ডানপন্থী সিনেটর ওয়ান ন্যাশন দলের নেতা পোলিং হ্যানসনও ফ্রেসারের মন্তব্যের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁর কথায় হতভম্ব হয়েছি, আমি বিশ্বাস করি ফ্রেসার তাঁর সীমা ছাড়িয়েছেন এবং এমনটা গ্রহণযোগ্য নয়।’ তবে সমস্যা সমাধানে ফ্রেসারের গণভোটের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার সংসদে হ্যানসন মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে আগ থেকেই সমালোচিত।
প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল মুসলিম অভিবাসীদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য ইসলামি সন্ত্রাসবাদ কোনো কারণ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদের ভুক্তভোগী অধিকাংশই মুসলমান।
এদিকে ফ্রেসারের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সিনেটর অ্যানি এলি। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে অ্যানি বলেন, ‘বারবার ঘৃণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দাঁড়াতে আমি ক্লান্ত।…আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ রেখে যেতে আমাদের এই বৈষম্যবাদ বন্ধ করতে হবে।’ অ্যানি এলি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংসদের প্রথম মুসলিম নারী সাংসদ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান বিল শর্টেনও ফ্রেসারের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন।