ঢাকা ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অ্যাডহক কমিটিতে বিএনপির প্রার্থী বাদ পড়ায় তুলকালাম

সবুজদেশ ডেস্ক:

ছবি সংগৃহীত-

 

যশোরের বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। বিএনপির প্রার্থী বাদ পড়ায় মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দফায় দফায় মিছিল ও মহড়ায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় ক্যাম্পাসে। আর বিএনপির প্রার্থী বাদ পড়ায় সভা পণ্ড করার অভিযোগ করেন নতুন সভাপতি। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

নতুন সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নূরে আলম সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূবের অনুসারীদের মহড়ায় সভা পণ্ড হয়ে গেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব জানিয়েছেন, এসব কিছুর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদের অপব্যবহার করে তিনি সভাপতি পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। বাঘারপাড়ার সাধারণ মানুষ তা মেনে নেয়নি বলেই বিক্ষোভ হয়েছে।

সরেজমিনে কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূবের মনোনীত প্রার্থী, তার ভাগনে আসাদুজ্জামানকে। গত ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আসাদুজ্জামানের মনোনয়ন পরিবর্তন করে সভাপতি করা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নূরে আলম সিদ্দিকীকে। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন বর্তমান সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীকে নিয়ে পরিচিত সভার আহ্বান করেন মঙ্গলবার। আর এতে ক্ষুব্ধ হন টিএস আইয়ূবের অনুসারী বিএনপি নেতারা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বাদ পড়ায় এবং নতুন সভাপতি নিয়ে এলাকায় বিএনপির একাংশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অ্যাডহক কমিটির সভাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ছাত্রদলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাস এলাকায় অবস্থান নেন। মিছিলে মিছিলে কলেজ এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কলেজের অধ্যক্ষ ও অ্যাডহক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা অনুপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ প্রহরায় কলেজে প্রবেশ করেন নতুন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী। এসময়ও কলেজ ক্যাম্পাসে নেতাকর্মীদের মহড়া দিতে দেখা গেছে।

নতুন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন, ‘কলেজের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বর অ্যাডহক কমিটির পরিচিতি সভার আহ্বান করা হয়। কিন্তু সোমবার থেকে টিএস আইয়ূব কলেজের অধ্যক্ষ, কমিটির অন্য সদস্য ও পুলিশ প্রশাসনকে হুমকি দিয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব কমিটিকে হুমকি দেওয়ায় মিটিংয়ে সদস্যসহ অধ্যক্ষ উপস্থিত হননি। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বিএনপি ও ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা কলেজ চত্বরে মিছিল করেন। এমনকি আমি আমার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কলেজে ঢুকতে চাইলে কলেজের কর্মচারীরা গেট খুলেও সহযোগিতা করেনি।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব বলেন, ‘নুরে আলম সিদ্দিকী যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এর সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা আমার নেই। কী কারণে অধ্যক্ষসহ কমিটির অন্য সদস্যরা সভায় উপস্থিত হননি তার দায় কেন আমার ওপর আসবে?’

তিনি বলেন, নূরে আলম বাইরের লোক। তার কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান নেই। তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদের অপব্যবহার করে সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এটা অনৈতিক। বাঘারপাড়ার লোক সংগ্রাম করবে, আর উনি বাইরের লোক হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিনকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সকালে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। মিটিংয়ের সকল প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) শোভন সরকার বলেন, ‘মঙ্গলবার বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে অ্যাডহক কমিটির প্রথম সভা আহ্বান করা হয়েছিল। বাধা দেওয়ায় সভা হয়নি। তবে কারা বাধা দিয়েছে সেটা জানি না। প্রথম থেকে আভাস পেয়েছিলাম গোলযোগ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে, তাই আগে থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে কলেজে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে পুলিশের মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে যায়।

সবুজদেশ/এসইউ

About Author Information
আপডেট সময় : ০২:৫১:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
২৮ Time View

অ্যাডহক কমিটিতে বিএনপির প্রার্থী বাদ পড়ায় তুলকালাম

আপডেট সময় : ০২:৫১:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

 

যশোরের বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। বিএনপির প্রার্থী বাদ পড়ায় মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দফায় দফায় মিছিল ও মহড়ায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় ক্যাম্পাসে। আর বিএনপির প্রার্থী বাদ পড়ায় সভা পণ্ড করার অভিযোগ করেন নতুন সভাপতি। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

নতুন সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নূরে আলম সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূবের অনুসারীদের মহড়ায় সভা পণ্ড হয়ে গেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব জানিয়েছেন, এসব কিছুর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদের অপব্যবহার করে তিনি সভাপতি পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। বাঘারপাড়ার সাধারণ মানুষ তা মেনে নেয়নি বলেই বিক্ষোভ হয়েছে।

সরেজমিনে কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূবের মনোনীত প্রার্থী, তার ভাগনে আসাদুজ্জামানকে। গত ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আসাদুজ্জামানের মনোনয়ন পরিবর্তন করে সভাপতি করা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নূরে আলম সিদ্দিকীকে। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন বর্তমান সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীকে নিয়ে পরিচিত সভার আহ্বান করেন মঙ্গলবার। আর এতে ক্ষুব্ধ হন টিএস আইয়ূবের অনুসারী বিএনপি নেতারা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বাদ পড়ায় এবং নতুন সভাপতি নিয়ে এলাকায় বিএনপির একাংশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অ্যাডহক কমিটির সভাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ছাত্রদলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাস এলাকায় অবস্থান নেন। মিছিলে মিছিলে কলেজ এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কলেজের অধ্যক্ষ ও অ্যাডহক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা অনুপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ প্রহরায় কলেজে প্রবেশ করেন নতুন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী। এসময়ও কলেজ ক্যাম্পাসে নেতাকর্মীদের মহড়া দিতে দেখা গেছে।

নতুন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন, ‘কলেজের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বর অ্যাডহক কমিটির পরিচিতি সভার আহ্বান করা হয়। কিন্তু সোমবার থেকে টিএস আইয়ূব কলেজের অধ্যক্ষ, কমিটির অন্য সদস্য ও পুলিশ প্রশাসনকে হুমকি দিয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব কমিটিকে হুমকি দেওয়ায় মিটিংয়ে সদস্যসহ অধ্যক্ষ উপস্থিত হননি। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বিএনপি ও ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা কলেজ চত্বরে মিছিল করেন। এমনকি আমি আমার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কলেজে ঢুকতে চাইলে কলেজের কর্মচারীরা গেট খুলেও সহযোগিতা করেনি।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব বলেন, ‘নুরে আলম সিদ্দিকী যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এর সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা আমার নেই। কী কারণে অধ্যক্ষসহ কমিটির অন্য সদস্যরা সভায় উপস্থিত হননি তার দায় কেন আমার ওপর আসবে?’

তিনি বলেন, নূরে আলম বাইরের লোক। তার কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান নেই। তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদের অপব্যবহার করে সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এটা অনৈতিক। বাঘারপাড়ার লোক সংগ্রাম করবে, আর উনি বাইরের লোক হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিনকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সকালে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। মিটিংয়ের সকল প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) শোভন সরকার বলেন, ‘মঙ্গলবার বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে অ্যাডহক কমিটির প্রথম সভা আহ্বান করা হয়েছিল। বাধা দেওয়ায় সভা হয়নি। তবে কারা বাধা দিয়েছে সেটা জানি না। প্রথম থেকে আভাস পেয়েছিলাম গোলযোগ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে, তাই আগে থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে কলেজে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে পুলিশের মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে যায়।

সবুজদেশ/এসইউ