সবুজদেশ ডেস্কঃ

বিকল্প ধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। সোমবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি আদালত এই রায় দিয়েছে। অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে এই রায় দিয়েছেন বিচারক। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।

২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ২০১৯ সালের এপ্রিলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করে তাকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে তুলে দেয় ইকুয়েডর। ওইদিনই তাকে জামিন শর্ত ভঙ্গের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ব্রিটিশ আদালত। তখন থেকে বেলমার্শ নামক কুখ্যাত কারাগারে সাজা ভোগ করছেন অ্যাসাঞ্জ। এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কম্পিউটার হ্যাক ও গুপ্তচর আইন লঙ্ঘনসহ ১৮টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। মার্কিন প্রশাসন তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে চায়। ব্রিটিশ পুলিশও অ্যাসাঞ্জকে হেফাজতে নিয়েই জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হবে কিনা সে সংক্রান্ত মামলার বিচার চলছে ব্রিটিশ আদালতে। করোনা মহামারির কারণে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর সেপ্টেম্বর থেকে আবারও শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে সোমবার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে আদালত।

যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড জুরি অ্যাসাঞ্জকে যে ১৮টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে, তার মধ্যে ১৭টি অভিযোগই মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তি আইনের আওতায় পড়েছে। সেদেশে দোষী সাব্যস্ত হলে ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাশালীদের মুখোশ উন্মোচনকারী এই ব্যক্তির।

২০১০ ও ২০১১ সালে গোপন নথি প্রকাশের দায়ে যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তার ফাঁস করা তথ্যে তাদের দেশের আইন ও জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরোধিতায় আইনি লড়াই করেছেন। তার দাবি, এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সোমবার ব্রিটিশ বিচারক অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। ডিস্ট্রিক্ট জাজ ভ্যানেসা বারাইতজার রায়ে বলেছেন, মার্কিন প্রসিকিউটররা অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণের প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন কিন্তু তার আত্মহত্যার চেষ্টা ঠেকানোর সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।

বিচারক আরও জানান, অ্যাসাঞ্জ নিজের ক্ষতিসাধন করতে এবং আত্মহত্যার ভাবনা রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, সার্বিক অবস্থা হলো হতাশার এবং অনেক সময় বেপরোয়া মানুষ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীত থাকেন।

ব্রিটিশ বিচারক আরও বলেন, এইচএমপি বেলমার্শে প্রায় বিচ্ছিন্ন ও সুরক্ষা ফ্যাক্টর না থাকায় অ্যাসাঞ্জের জীবনের ঝুঁকি কমে গেছে। অ্যাসাঞ্জ আত্মহত্যার চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্র তা ঠেকাবে না বলে বিচারে উঠে এসেছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মানসিক ক্ষতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ হবে নিপীড়নমূলক।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here