আখুন্দজাদাই হচ্ছেন নতুন তালেবান সরকারের প্রধান!
সবুজদেশ ডেস্কঃ
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়া তালেবানের নেতৃত্বে গঠিত হতে যাওয়া নতুন সরকারে রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন সশস্ত্র রাজনৈতিক দলটির প্রধান মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা।
রোববার আফগানিস্তানে তালেবান সংশ্লিষ্ট ও পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এই খবর জানায় দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
খবরে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছে তালেবানের প্রধান মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। একইসাথে তালেবান যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত নতুন আফগান সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালেবানের প্রথম শাসনামলে দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান মোল্লা মোহাম্মদ ওমর রাষ্ট্রপ্রধান ও সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা দায়িত্ব পালন করলেও তার তিন সহকারি, তালেবানের রাজনৈতিক দফতরের প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদার, সামরিক শাখার প্রধান মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি গঠিত হতে যাওয়া নতুন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
২০০১ সালে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হামলার জন্য আলকায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেন। ওই সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের কাছে তাদের আশ্রয়ে থাকা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান বুশ।
তালেবান সরকার ওসামা বিন লাদেনকে তুলে দেয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মার্কিনিদের কাছে প্রমাণ চায়। প্রমাণ ছাড়া তারা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
বুশ প্রশাসন ও তালেবানের মধ্যে বিরোধের জেরে ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু করে মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় তালেবান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়।
তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলতে থাকে দেশটিতে।
এরইমধ্যে আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলোও যুক্ত হয়। মার্কিনিদের সমর্থনে নতুন প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠে দেশটিতে।
২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সৈন্যদের এক ঝটিকা অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। ২০১৩ সালে অজ্ঞাতবাসে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের মৃত্যু হয়।
তা স্বত্ত্বেও তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে।
দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।
চলতি বছরের মে মাসে সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহারের কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এপ্রিলে এক ঘোষণায় ১১ সেপ্টেম্বরে নাইন-ইলেভেনের ২০তম বার্ষিকীতে সৈন্য প্রত্যাহার শেষ করার কথা জানান। পরে জুলাই সময়সীমা আরো কমিয়ে এনে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি।
তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই ৩০ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেয়া হলো।
মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তালেবানের অভিযোগ, আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো শুরু করে তালেবান।
৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তারা। যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ১০ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলে পৌঁছে যায় তালেবান যোদ্ধারা। ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়ার প্রায় ২০ বছর পর ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান।
সূত্র : দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল