আগামী জুনের মধ্যে সব ইউনিয়নে ইন্টারনেট : তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী
সবুজদেম ডেক্সঃ দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) ক্ষেত্রে আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থা চালু করে গ্রাহকদের আন্তঃলেনদেন সুবিধা প্রদানে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সোমবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে মেটলাইফ ফাউন্ডেশন ও মাইক্রোসেভের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে আই থ্রি কর্মসূচি উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। ২০১৯ সালের জুনে এমন কোনো ইউনিয়ন পাওয়া যাবে না যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে না। প্রযুক্তিতে দেশের উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী বিষয়গুলোকে যেন স্থায়ী রূপ দেয়া যায় সেটি নিয়ে সরকার কাজ করছে।
আয়োজকরা জানান, আই থ্রি কর্মসূচির ফলে ব্যাংক হিসাবহীন ৬০ শতাংশ মানুষের কাছে ব্যাংকিং এবং আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
আয়োজকরা আরও জানান, পৃথিবীতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ৮ শতাংশ বাংলাদেশি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবায় যুক্ত আছে বাংলাদেশের ৫ কোটি মানুষ। ব্যাংক এখনো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছতে পারেনি। ৬০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সুবিধার আওতার বাইরে। নারীদের ক্ষেত্রে এটি ৬৫ শতাংশ।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আন্তঃলেনদেন সুবিধা দ্রুত চালু করা উচিত। তাহলে এক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক অন্য প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন করতে পারবেন, যেমনটা আমরা এখন ব্যাংকগুলোর মধ্যে করতে পারি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবির ও মেটলাইফ বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ হাম্মাদুল করিম, মাইক্রোসেভ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক মি. মনোজ শর্মা, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইপে’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকারিয়া স্বপন, এটুআই’র ডিএফএস প্রোগ্রাম সমন্বয়ক মো. তহিরুল ইসলাম, ব্রাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর.এফ হোসাইন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মিজানুর রহমান, মাইক্রোসেভের কান্ট্রি ম্যানেজার জাকিরুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়াও ব্যাংকার, ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, মোবাইল ফোনভিত্তিক আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ফিনটেক (ফিনান্সিয়াল টেকনোলজি) উদ্যোক্তাসহ এই খাতের শতাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মাইক্রোসেভের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আই থ্রি কর্মসূচির অধীনে বিদ্যমান উদ্যোগগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে সম্ভাব্য সুযোগ সনাক্ত, প্রযুক্তি ব্যবহার, বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কর্মসূচিতে অবদান রাখার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন।
মেটলাইফ বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ হাম্মাদুল করিম বলেন, নিম্ন আয়ের বাংলাদেশিদের জন্য আর্থিক স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজছে বাংলাদেশ। আমি বলতে গর্ববোধ করছি যে, মেটলাইফ ফাউন্ডেশনে নিম্ন থেকে মধ্য আয়ের মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকারের সঙ্গে আমার সুসংবদ্ধ। ডিজিটাল পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব প্রদানকারী আই থ্রি কর্মসূচি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা আশা করি এ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ২০ লাখ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে।
আই থ্রি কর্মসূচির উদ্যোগের সঙ্গে মাইক্রোসেভের ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মাইক্রোসেভ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক মি. মনোজ শর্মা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিল্প উদ্যোক্তা এবং রেগুলেটর, ব্যাংক, এমএফএস প্রদানকারী, ফিনটেক এবং দাতাগণ বাংলাদেশ অর্থবহ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন।