ঢাকা ১২:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা

আজও আদালতের কাজ বন্ধ, মানববন্ধনে খুনিদের ফাঁসি দাবি

সবুজদেশ ডেস্ক:

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে খুনের আসামিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। ছবি সংগৃহীত-

 

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে আদালতের কার্যক্রম। আজ বৃহস্পতিবারও চট্টগ্রামের ৭৪টি আদালতে কোনো শুনানি হয়নি। সকালে জেলা আইনজীবী সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ জানান আইনজীবীরা।

আইনজীবী খুনের আসামিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি রয়েছে। মানববন্ধনে তাঁরা আইনজীবী সাইফুলের খুনিদের ফাঁসি চান। দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তাঁরা মানববন্ধন করেন। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনও আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কালো ব্যাজ ধারণ করে হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। জোহরের নামাজের পর কোর্ট হিল মসজিদে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সহকর্মীকে হারিয়ে শোকাহত আইনজীবীরা। আদালত প্রাঙ্গণের সোনালী ব্যাংকের সামনে কয়েকজন আইনজীবীকে স্মৃতিচারণা করতে শোনা যায়। তাঁদের একজন মঈনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার আদালত প্রাঙ্গণে রাখা তাঁর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন চিন্ময় দাসের অনুসারীরা। বিষয়টি জেনে সাইফুল দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে তিনি হামলা, ভাঙচুরের প্রতিবাদে মিছিলে অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এন এম হুমায়ুন কবির আজ বলেন, চট্টগ্রাম আদালতের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কোনো মামলার শুনানি হচ্ছে না। মামলাগুলো পরবর্তী তারিখে রাখা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ থাকার বিষয়টি বিচারপ্রার্থীরা আগেভাগে জানতে পেরে আদালতে আসেননি। তবে কিছু লোকজন এসে ফিরে যান।

গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে রঙ্গম সিনেমা হল-সংলগ্ন এলাকায় সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তাদের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা করে। এসব মামলায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার মধ্যে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার আটজন রয়েছেন। পুলিশ বলছে, কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করছে।

গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করা হয়। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। তাঁরা এ সময় বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আড়াই ঘণ্টা পর বেলা তিনটার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত সোমবার বিকেলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে চট্টগ্রামে আনা হয়। গত ৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সবুজদেশ/এসইউ

About Author Information
আপডেট সময় : ০৪:৩৩:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
৬ Time View

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা

আজও আদালতের কাজ বন্ধ, মানববন্ধনে খুনিদের ফাঁসি দাবি

আপডেট সময় : ০৪:৩৩:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

 

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে আদালতের কার্যক্রম। আজ বৃহস্পতিবারও চট্টগ্রামের ৭৪টি আদালতে কোনো শুনানি হয়নি। সকালে জেলা আইনজীবী সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ জানান আইনজীবীরা।

আইনজীবী খুনের আসামিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি রয়েছে। মানববন্ধনে তাঁরা আইনজীবী সাইফুলের খুনিদের ফাঁসি চান। দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তাঁরা মানববন্ধন করেন। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনও আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কালো ব্যাজ ধারণ করে হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। জোহরের নামাজের পর কোর্ট হিল মসজিদে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সহকর্মীকে হারিয়ে শোকাহত আইনজীবীরা। আদালত প্রাঙ্গণের সোনালী ব্যাংকের সামনে কয়েকজন আইনজীবীকে স্মৃতিচারণা করতে শোনা যায়। তাঁদের একজন মঈনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার আদালত প্রাঙ্গণে রাখা তাঁর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন চিন্ময় দাসের অনুসারীরা। বিষয়টি জেনে সাইফুল দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে তিনি হামলা, ভাঙচুরের প্রতিবাদে মিছিলে অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এন এম হুমায়ুন কবির আজ বলেন, চট্টগ্রাম আদালতের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কোনো মামলার শুনানি হচ্ছে না। মামলাগুলো পরবর্তী তারিখে রাখা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ থাকার বিষয়টি বিচারপ্রার্থীরা আগেভাগে জানতে পেরে আদালতে আসেননি। তবে কিছু লোকজন এসে ফিরে যান।

গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে রঙ্গম সিনেমা হল-সংলগ্ন এলাকায় সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তাদের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা করে। এসব মামলায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার মধ্যে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার আটজন রয়েছেন। পুলিশ বলছে, কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করছে।

গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করা হয়। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। তাঁরা এ সময় বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আড়াই ঘণ্টা পর বেলা তিনটার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত সোমবার বিকেলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে চট্টগ্রামে আনা হয়। গত ৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সবুজদেশ/এসইউ