ঢাকাঃ

গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আবরার ফাহাদ নামে এক ছাত্রকে নির্মম- নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ২০-২২জন নেতাকর্মী এই হত্যা মিশনে অংশ নেয়। কিন্তু আবরার হত্যাকারীদের পিতা-মাতার দাবি তাদের সন্তানরা আবরারকে হত্যা করেনি। নিজেদের সন্তানদের নির্লিপ্তভাবে নির্দোষ দাবি করছেন তারা। অথচ একজন মায়ের নিরীহ সন্তানকে হত্যা করা হলো সে বিষয়ে খুনীদের পিতা-মাতার কোনো অনুশোচনাবোধ নেই।

বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল। এই মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে বুয়েটে অসংখ্য নিরীহ ছাত্রকে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে। আবরারকে হত্যার রাতে এই ছাত্রলীগ নেতাই প্রথম মারধর শুরু করেছিলেন। অথচ তার বাবা-মা এমন খুনী সন্তানকে নির্দোষ দাবি করছেন। পরিবারের এই শিক্ষায় হয়ত তাকে খুনী হিসেবে তৈরি করেছে।

মেহেদী হাসান রাসেলের মা ঝর্ণা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ, আমি চাই আমার ছেলেকে খালাস দিক। রাসেলের মা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার ছেলে কাউকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এটা আমি বিশ্বাস করতে পারি না। মেহেদী হাসান রাসেলে বাবা রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো ছবি নাই, ফুটেজ নাই; অথচ আমার ছেলেকে এক নম্বর আসামী করা হয়েছে।’

আবরার হতকাণ্ডের দ্বিতীয় আসামী মুহতাসিম ফুয়াদ। তার চাচা দাবি করছেন ফুয়াদ কিছুই জানতো না, টিউশনি করে হলে ফিরছিল।

তিন নম্বর আসামী মেহেদী হাসান রবিন। তার বাবার স্বপ্ন ছিল তাকে মন্ত্রী বানাবে। তার বাবা বলেন, ‘এখনকার যারা বড় রাজনীতিবিদ মন্ত্রী-এমপি তারা তো ছাত্র রাজনীতি করেই সেখানে গেছে। অথ্যাৎ রাজনীতির নামে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড জায়েজ বলে তিনি হয়ত মনে করেছেন।

নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তান ইফতি মোশাররফ সকাল। তার বাবা সাংবাদিকদের কাছে নিজের ছেলেকে নিদোর্ষ দাবি করেন। ইফতির বাবা এমনভাবে নির্দোষ দাবি করেন যেন ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনি (ইফতির বাবা)। অথচ আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইফতিই প্রথম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।

আবরার হত্যার অন্যতম আসামী মনিরের বাবা পেশায় ব্যবসায়ী। সাংবাদিকদের কাছে তিনি নিজের ছেলের গুণগান করেছেন। তিনি জানান, তার ছেলে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিল। কিন্তু ছেলে একজন নিরীহ ছাত্রকে হত্যা করেছে তার ন্যূনতম অনুশোচনাবোধ দেখা যায়নি তার মধ্যে।

খুনীদের পিতা-মাতার দাবি তাদের ছেলেরা নির্দোষ। অথচ একটা পরিবারের স্বপ্ন চিরতরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে তাদের পিশাচ ছেলেরা। পরিবারের শিক্ষা হোক ‘মানুষের মতো মানুষ হওয়া’। আর কোনো মায়ের সন্তানকে যেন এমন নির্দয়ভাবে পেটানো না হয় সেটিই হোক পরিবারের শিক্ষা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here