বিশেষ করে সংশোধনের মাধ্যমে আরপিওতে ভোটে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। মূলত ইভিএম ব্যবহার নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান বিপরীতমুখী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায় ভোটে ইভিএম ব্যবহার হোক। অন্যদিকে বিএনপি কারচুপির আশঙ্কায় শুরু থেকেই ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে।
দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার জন্য ইসি আরপিও সংশোধন করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির এমন অবস্থানের মধ্যেই ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধন করবে না।
জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। সরকার এদের মাধ্যমে তাদের চাওয়া পূরণ করছে। কিছুদিন আগেই ইসি বলেছে, তারা আরপিও সংশোধন করবে না। এখন বলছে, করবে। এতে তো সাধারণ মানুষের বোঝার বাকি নেই, ইসি এমন কিছু করতে যাচ্ছে যা সবাই গ্রহণ করবে না। কেননা ইসি যখন আরপিও সংশোধন না করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তখন তো কোনো রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করেনি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হয়। ইভিএম এখন সময়ের দাবি। এটা আইনে থাকা মানে এই নয় যে আগামী নির্বাচনে এটা ব্যবহার হবে বা ব্যাপকভাবে ব্যবহার হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এমনিতেই ভোটে অংশ নিতে পারেন না। তবে উচ্চ আদালতে এ ব্যাপারে দুই ধরনের আদেশ আছে, ফলে এখানে বিএনপির চেয়ারপারসনকে লক্ষ্য করে আইন পরিবর্তন হবে, এ ধারণা বিএনপি কোথায় পেল সেটা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, ইসি তো আইন সংশোধন করে না। কেবল প্রস্তাব পাঠায়। সরকার যাচাই-বাছাই করবে, তারপর তা সংসদে পাস হবে। এটা লম্বা প্রক্রিয়া। এখনই এ নিয়ে আলোচনার কী আছে।
নির্বাচনী আইন সংশোধন বিষয়ে আগামীকাল রোববার সকাল ১০টায় বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মো. নুরুল হুদার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ সংশোধন ও ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়টি বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে।
কমিশন সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আরপিও সংশোধন বিষয়ে ইতিপূর্বে কমিশন বৈঠকে যেসব প্রস্তাব এসেছে, এগুলোর বিষয়ে রোববার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখানে ইভিএমসহ আরও অন্যান্য কিছু বিষয় থাকতে পারে।’ এ ছাড়া আগামী ৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।
গত বছর জুলাইয়ে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করে পাওয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে এত দিন পর একাদশ সংসদ নির্বাচনের চার মাস আগে ফের তোড়জোড় শুরু করলো ইসি। সম্প্রতি ইভিএম ব্যবহারসহ সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে কমিশনে আলোচনার কথা সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। আরপিও সংশোধনের কিছু প্রস্তাবের ব্যাপারে কমিশনে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তবে কবিতা খানম নিজেই মনে করেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কমিশনের সক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে। লোকবল লাগবে। সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থারও ব্যাপার আছে।