ফারুক নোমানীঃ

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা।ব্যক্তিগত,পারিবারিক,সামাজিক,রাষ্ট্রীয় সকল সমস্যার সুষ্ঠুসমাধান একমাত্র ইসলামই দিয়েছে।তা অন্যান্য সকল ধর্ম ও মতবাদের মত গুটিকতেক উপাসনা ও নীতিকথার ভেতরই গ-ীভুত ও সীমাবদ্ধ নয়। এর সৌন্দর্য, স্বকীয়তা ও সার্বজনীনতা সর্বজন স্বীকৃত। এজন্যই আল্লাহ তা‘য়ালা ঘোষণা করেছেন, “ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট (গ্রহণযোগ্য) দ্বীন কেবল ইসলামই। (সূরা আলে ইমরান ৩ঃ ১৯) আর ইসলামের এই পূর্ণাঙ্গতা, সার্বজনীনতাকে বাস্তব কর্মজীবনে বাস্তবায়ন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ মানব ও আদর্শ স্বামী ।একজন স্বামী কেমন হবেন, কেমন হবে তার কর্ম ও আচরণ ? তিনি তা শিখিয়েছেন পৃথিবীকে।

দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে আল্লাহ তা‘য়ালার ঘোষণা:“ আর এক নির্দশন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গীনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে’’। (সূরা রুম ৩০ঃ২১)

আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর রাসূল সম্পর্কে বলেছেন: আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী । (সূরা কলম ৬৮ঃ০৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যের আদেশ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন,“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আর্দশ রয়েছে”। (সূরা আহযাব ৩৩ঃ ২১ )
“( হে নবী ! মানুষকে বলে দিন ) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”।(সূরা আলে ইমরান ৩ঃ ৩১)
আমাদের কল্পনায় একজন ভালো স্বামীর যে গুণ থাকতে পারে, তাঁর মধ্যে এরচে’ হাজারগুণ বেশি গুণাবলী বিদ্যমান ছিল।
উত্তম চরিত্র সম্পর্কে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

যার চরিত্র ভালো এবং যে নিজ পরিবার -পরিজনের সাথে দয়ার্দ্র ব্যবহার করে সে-ই ঈমানের দিক হতে পরিপূর্ণ মুমিন। (তিরমিযী হাঃ ২৬১২, আহমাদ হাঃ ২৪৬৭৭,২৪৬০৪)

তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম। (তিরমিযী হাঃ ৩৮৯৫) এ কথাকে আরো ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম লোক তারাই যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম। (ইবনু মাজাহ হাঃ ১৯৭৭, দারামী হাঃ ২৩০৬)

এ হাদীস দ্বারা আমরা জানতে পারলাম নবীজী পরিবার-পরিজন ও স্ত্রীদের সাথে সুন্দর আচরণের জন্য কত উৎসাহ প্রদান করেছেন। এখন দেখব তিনি বাড়িতে অবস্থানকালীন সময়ে কী করতেন?

স্ত্রীকে বাড়ির কাজে সহযোগিতা করা:

প্রখ্যাত তাবেয়ী আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ বলেন, আমি আয়শা রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গৃহে কী কাজ করতেন? তিনি বলেন, তিনি ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন, আর যখন আযান শুনতেন তখন নামাযের জন্য বেরিয়ে যেতেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ৪৯৭২,৫৩৬৩,৬০৩৯) আরেকটি বর্ণনায় আছে : তিনি অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ ছিলেন। কাপড় সেলাই করতেন, বকরীর দুধ দোহন করতেন ও নিজের কাজ-কর্ম করতেন। (আহমাদ হাঃ ২৬১৯৪)
এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হল পারিবারিক খুঁটিনাটি কাজ নিজহাতে করা ও স্ত্রীকে কাজে সহযোগিতা করা সুন্নাত ।

স্ত্রীকে আদর করে ভিন্ন নামে ডাকা:

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়শা রা. কে আদর করে কোন সময় আয়শু বলে ডাকতেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ৩৭৬৮,৬২০১, সহীহ মুসলিম হাঃ ২৪৪৭, দারামী হাঃ ২৬৪০, আহমাদ হাঃ ২৪৫৭৪)
কখনো হুমায়রা (সুন্দরী,রূপবতী) বলে ডাকতেন।(ইবনু মাজাহ হাঃ ২৪৭৪)
কখনো উম্মে আব্দুল্লাহ বলে ডাকতেন। (আবু দাউদ হাঃ ৪৯৭০, ইবনু মাজাহ হাঃ ৩৭৩৯,আহমাদ হাঃ ২৫১৮১,২৫৫৩০,২৬২৪২)

স্ত্রীর জন্য খরচ করা ও স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেয়া অনেক বড় ইবাদত:

আবু হুরায়রা রা.বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে দীনার (মূদ্রা) তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ, যে দীনার তুমি ব্যয় করেছ ক্রীতদাস মুক্তির জন্য, যে দীনার তুমি সদকা করেছ মিসকিনের জন্য, যে দীনার তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ, সাওয়াবের দিক হতে সর্বোত্তম হল, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করেছ। (সহীহ বুখারী হাঃ ২৭৪২,সহীহ মুসলিম হাঃ ৯৯৫, আহমাদ হাঃ ১০১১৯)

হযরত সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস রা. কে বলেছেন, তুমি যা খরচ করবে তা তোমার জন্য সদকা। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমা (খাদ্যকণা) তুলে দিবে এটাও তোমার জন্য সদকা (এর বিনিময়ে তোমাকে সাওয়াব দান করা হবে)। (সহীহ বুখারী হাঃ ৬৭৩৩,আবু দাউদ হাঃ ২৮৬৪, আহমাদ হাঃ ১৪৮০)

এক পাত্রে ও এক জায়গা থেকে খাওয়া:

হযরত আয়শা রা. বলেন, আমি পান করে পাত্রটা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে বাড়িয়ে দিতাম। তিনি আমার এঁটো করা স্থানেই মুখ লাগিয়ে পান করতেন। দাঁত দিয়ে গোশত ছিঁড়ে খাওয়ার পর আমার লালা লেগে থাকা স্থানেই তিনি মুখ লাগিয়ে খেতেন। (সহীহ মুসলিম হাঃ ৩০০, নাসায়ী হাঃ ৭০,৩৪১,২৮২,আবু দাউদ হাঃ ২৫৯)

স্ত্রীর গায়ে হেলান দিয়ে বসা:

আয়শা রা. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কোলে হেলান দিয়ে বসতেন। আমি হায়েয অবস্থায় (্ঋতুবতী) থাকলেও। (সহীহ বুখারী হাঃ ২৯৭,৭৫৪৯, সহীহ মুসলিম হাঃ ৩০১,আবু দাউদ হাঃ ২৬০, আহমাদ হাঃ ২৪৮৬২)

নিজমুখে স্ত্রীর প্রশংসা ও ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা:

আনাস ইবনু মালেক রা. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সারীদ যেমন সমস্ত খাবারের তুলনায় শ্রেষ্ঠ, আয়শা ও তেমনি অন্য নারীদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। ( সহীহ বুখারী হাঃ ৩৪১১,৩৪৩৩,৩৪৩৪,৩৭৬৯, সহীহ মুসলিম হাঃ ২৪৩১,২৪৪৬, তিরমিযী হাঃ ১৮৩৪,৩৮৮৭, নাসায়ী হাঃ ৩৯৪৭,৩৯৪৮, ইবনু মাজাহ হাঃ ৩২৪০, দারামী হাঃ ২১১৩, আহমাদ হাঃ ১২৫৯৭)

হযরত খাদীজা রা. সম্পর্কে তিনি বলেছেন, আমাকে খাদীজার ভালোবাসা দান করা হয়েছে। অর্থাৎ তার প্রতি ভালোবাসাটা আল্লাহর তরফ থেকে প্রাপ্ত। (সহীহ মুসলিম হাঃ২৪৩৫)

এমনকি তিনি স্ত্রীর বান্ধবীদেরও খোঁজ-খবর নিতেন। ছাগল যবাই হলে আলাদা করে কিছু গোশত রেখে দিয়ে বলতেন: এটা খাদীজার অমুক বান্ধবীর বাড়ি দিয়ে এসো। (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৪৩৫)

স্ত্রীর আবেগ-অনুভূতি, স্বভাব-প্রকৃতির প্রতি গভীর দৃষ্টি রাখা ও যথাযথ সম্মান ও মূল্যায়ন করা:

একবার হযরত আয়শা রা. কে বলেন, আয়শা ! তুমি কখন আমার প্রতি রাজি থাক আর কখন আমার প্রতি নারাজ থাক তা আমি বুঝতে পারি! তুমি আমার প্রতি খুশি থাকলে বল: মুহাম্মাদের রবের কসম, আর আমার প্রতি অখুশি থাকলে বল: ইবরাহীমের রবের কসম। (সহীহ বুখারী হাঃ ৫২২৪,৬০৭৪, সহীহ মুসলিম হাঃ ২৪৩৯, আহমাদ হাঃ ২৪৩১৮)

স্ত্রীর প্রতি সহনশীলতা:

আব্দুল্লাহ ইবনু যাম‘আ রা. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণ দিলেন, অতপর মহিলাদের উল্লেখ করে তাদের ব্যাপারে লোকজনকে উপদেশ দিয়ে বললেন, তোমাদের কেউ কেন তার স্ত্রীকে দাসীর মত বেত্রাঘাত করে? অথচ দিনের শেষেই সে আবার তার শয্যাসঙ্গী হয়! (সহীহ বুখারী হাঃ ৪৯৪২,৫২০৪, সহীহ মুসলিম হাঃ ২৮৫৫, তিরমিযী হাঃ ৩৩৪৩, আহমাদ হাঃ ১৫৭৮৮, দারামী হাঃ ২২২০)

তোমরা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ শুনে নাও। (তিরমিযী হাঃ ১১৬৩,৩০৮৭)
আয়শা রা. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং অপর কাউকেও প্রহার করেননি। (সহীহ বুখারী হাঃ ৩৫৬০,৬১২৬,৬৭৮৬,৬৮৫৩, সহীহ মুসলিম হাঃ ২৩২৮, আবু দাউদ হাঃ ৪৭৮৬, ইবনু মাজাহ হাঃ ১৯৮৪, দারামী হাঃ ২২৬৪, আহমাদ হাঃ ২৬৪০৪,২৫৯৫৬,২৫৭১৫,২৪০৩৪, মালেক হাঃ ১৬৭১)

স্ত্রীর সাথে গল্প করা ও গল্প শোনা:

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময় পেলেই স্ত্রীদের সাথে গল্প করতেন ও তাদের থেকে গল্প শুনতেন। হাদীস শরীফে চমৎকার একটি গল্পের বিবরণ আছে, যা ‘উম্মু যারা ’ নামে বিখ্যাত। (সহীহ বুখারী হাঃ ৫১৮৯, সহীহ মুসলিম হাঃ ৬৪৫৮, ইবনু হিব্বান হাঃ ৭১০৪, জামেউস সগীর হাঃ ১৪১, শামায়েলে তিরমিযী হাঃ ১১৮)

স্ত্রীকে নিষ্পাপ খেলাধুলা দেখার সুযোগ দেয়া ও তার সাথে চিত্তবিনোদনে অংশ নেয়া:

আয়শা রা. বলেন, আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে পুতুল নিয়ে খেলা করতাম। তিনি আমার বান্ধবীদেরকে আমার সাথে খেলা করার জন্য আমার নিকট পাঠিয়ে দিতেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ৬১৩০, সহীহ মুসলিম হাঃ ২৪৪০, আবু দাউদ হাঃ ৪৯৩১, নাসায়ী হাঃ ৩৩৭৮, ইবনু মাজাহ হাঃ ১৯৮২, আহমাদ হাঃ ২৪২৯৮,২৫৯৬৮)

তিন বলেন, ঈদের দিন সুদানীরা ঢাল-তলোয়ার জাতীয় যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলাধুলা করছিল। হয়ত আমি নবীজীর কাছে আবেদন করেছিলাম, কিংবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তোমার দেখার আগ্রহ আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ আছে। এরপর আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করালেন। আমার গাল তাঁর গালের উপর ছিল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছিলেন, এভাবে অনুশীলন জারি রাখ হে আরাফিদার বংশধরগণ! শেষ পর্যন্ত আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তখন তিনি বললেন, তোমার দেখা শেষ হয়েছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তবে যাও। (সহীহ বুখারী হাঃ ৪৫৪,৪৫৫,৯৮৮, ৩৫৩০,)

অন্য বর্ণনায় আছে : আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি যে, তিনি আমার হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতেন আর হাবশীরা তাদের অস্ত্র দিয়ে নবীজীর মসজিদের চত্বরে খেলত (যুদ্ধের অনুশীলন করত) তিনি তাঁর চাঁদর দিয়ে আমাকে ঢেকে রাখতেন যেন আমি তাদের খেলাধুলা দেখতে পারি এবং ফিরে না যাওয়া পযর্ন্ত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে থাকতেন। তোমরা অনুমান কর অল্পবয়স্কা ও খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী একজন বালিকা কতক্ষণ তা দেখতে পারে!
(সহীহ বুখারী হাঃ ৫২৩৬, সহীহ মুসলিম হাঃ ৮৯২, নাসায়ী হাঃ ১৫৯৫,১৫৯৬, আহমাদ হাঃ ২৪৫৪১,২৬৩২৮)

স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা:

আয়শা রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলের সাথে কোন এক সফরে বের হই। তখন আমি অল্প বয়স্কা ছিলাম। তিনি লোকদের বললেন, তোমর দ্রূত এগিয়ে যাও।তারা এগিয়ে গেল।এবার তিনি আমাকে বললেন, এসা তোমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করি! আমি দৌড় প্রতিযোগিতায় তাঁর আগে বেড়ে গেলাম (অর্থাৎ জিতে গেলাম)। তারপর যখন আমি মোটা স্থুলকায় হয়ে গেলাম। তখন পুনরায় তাঁর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলাম ও তিনি আমার আগে বেড়ে গেলেন।তখন তিনি বললেন, এটা তোমার প্রথমবার জেতার বদলা। (আবু দাউদ হাঃ ২৫৭৮, আহমাদ হাঃ ২৬২৭৭)

সফরে স্ত্রীকে সাথে রাখা:

আয়শা রা. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সফরের ইচ্ছা করলে স্ত্রীদের নামে লটারী করতেন। যার নাম বের হত সফরে তাকে সাথে নিতেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ২৫৯৩,২৬৮৮, ২৮৭৯,৫২১১, সহীহ মুসলিম হাঃ ২৪৪৫, ২৭৭০, আবু দাউদ হাঃ ২১৩৮, ইবনু মাজাহ হাঃ ১৯৭০, দারামী হাঃ ২২৫৪, আহমাদ হাঃ ২৪৮৩৪)

সফরে স্ত্রীর বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করা:

আনাস ইবনু মালিক বলেন,(খায়বার যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে )নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটুদ্বয় গেড়ে বসলেন আর সাফিয়্যাহ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাঁটুর উপর পা রেখে সাওয়ারীতে আরোহণ করলেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ৩৮৯৬, ২০৩৮,২২৩৫)

স্ত্রীকে সান্তনা দেয়া:

আনাস রা. বলেন, সাফিয়্যাহ রা. এর কানে পৌঁছে যে, হাফসাহ তাকে ইয়াহুদীর মেয়ে বলে ঠাট্টা করেছেন। তাই তিনি কাঁদছিলেন। তার ক্রন্দনরত অবস্থায় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ঘরে প্রবেশ করেন। তিনি বললেন, তোমাকে কিসে কাঁদাচ্ছে ? তিনি বললেন, হাফসাহ আমাকে ইয়াহুদীর মেয়ে বলে তিরস্কার করেছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই তুমি একজন নবীর কন্যা, তোমার চাচা একজন নবী এবং তুমি একজন নবীর সহধর্মীণী। অতএব কিভাবে হাফসাহ তোমার উপর অহংকার করতে পারে? তারপর তিনি বললেন, হে হাফসাহ আল্লাহ তা‘য়ালাকে ভয় কর। (তিরমিযী হাঃ ৩৮৯৪, আহমাদ হাঃ ১২৩৯২)

সাফিয়্যাহ ছিলেন ইয়াহুদী সর্দার হুয়াই ইবনু আখতারের কন্যা। আর হুয়াই হযরত হারুন আ. এর বংশধর। পিতামহ নবী ছিলেন এ হিসেবে তিনি নবীর কন্যা। এ হিসাবে মুসা আ. সাফিয়্যাহর চাচা। কিন্তু হাফসার পিতৃ বা মাতৃবংশে কোন নবী নেই। আর বংশ তুলে নিন্দা ও তিরষ্কার করা কুরআনে নিষেধ। তাই হাফসাকে কথাবর্তায় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন।

স্ত্রীদের অধিকারের ব্যাপারে সজাগ থাকা:

তিনি স্ত্রীদের প্রত্যেকের অধিকারের ব্যাপারে সদা সচেতন ছিলেন। এমনকি মৃত্যুশয্যায়ও এ ব্যাপারে অবহেলা করেননি। আয়শা রা. বলেন, মৃত্যু রোগকালীন অবস্থায় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করতেন, আমি আজ কোথায় আছি, আগামীকাল কার ঘরে থাকব?(সহীহ বুখারী হাঃ ১৩৮৯,৩৭৭৪,৪৪৫০,৫২১৭, সহীহ মুসলিম হাঃ ২৪৪৩)

স্ত্রীদের মাঝে সমতা রক্ষা না করার ধমকি:

আবু হুরায়রা রা.বলেন, যদি কারো দুই স্ত্রী থাকে আর সে তাদের মাঝে ইনসাফের সাথে সমব্যবহার না করে তবে সে তার একপার্শ্ব ভগ্ন অবস্থায় কিয়ামতের দিন উঠবে। ( তিরমিযী হাঃ ১১৪২, ইবনু মাজাহ হাঃ ১৯৬৯)

এভাবেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ ও সুন্দর ব্যবহার উম্মাতকে শিক্ষা দিয়েছেন। আদর্শ স্বামী হিসেবে পৃথিবীর বুকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।একমাত্র তাঁর আদর্শ ও মহান শিক্ষাই আমাদের দাম্পত্যজীবনে সুখ,শান্তি ও সমৃদ্ধির নিশ্চিত করতে পারে।

লেখক: ইমাম বাইতুল আমান জামে মসজিদ (মেইন বাসস্ট্যান্ড) কালীগঞ্জ।
মুুহাদ্দিস: আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া কাসিমুল উলুম (কওমী মাদরাসা) কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here