আ.লীগে প্রার্থীজট, অন্যরা স্বস্তিতে
একাধিক জনসভায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সাংসদ শামীম হায়দারের নাম ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। দলগতভাবে নির্বাচনের সুযোগ না থাকলেও জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী চূড়ান্ত। বিএনপির মনোনয়নের দৌড়ে এখন পর্যন্ত একজনই আছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে অন্য দলগুলোর এই যখন অবস্থা; তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে অন্তত আটজনের নাম এসেছে। এক বছরের ব্যবধানে দলের দুই সাংসদের মৃত্যুর পরস্থানীয় আওয়ামী লীগে নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দেয়। দলের কান্ডারি কে হবেন, তা খুঁজে পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পাঁচবার, আওয়ামী লীগ দুবার, জামায়াত (চারদলীয় জোট) একবার, ন্যাপ (মোজাফফর) একবার ও বিএনপি একবার জয়লাভ করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজুরুল ইসলাম সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর মনজুরুল খুন হন। এই আসনের সাবেক সাংসদ জামায়াত নেতা আবদুল আজিজকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি পলাতক আছেন। মনজুরুলের মৃত্যুর পর গত বছরের ২২ মার্চের উপনির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা নির্বাচিত হন। ১৯ ডিসেম্বর তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। চলতি বছরের ১৩ মার্চ দ্বিতীয় দফা উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের আফরুজা বারীকে হারিয়ে সাংসদ হন জাপার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা জানান, দলের মনোনয়ন পেতে তৎপর আছেন আটজন। তাঁরা হলেন সাবেক সাংসদ মনজুরুলের বড় বোন শিল্পপতি আফরুজা বারী, মনজুরুলের স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা খুরশিদ জাহান, সাবেক সাংসদ গোলাম মোস্তফার বড় ছেলে মেহেদী মোস্তফা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম, সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র আবদুল্লাহ-আল-মামুন, উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দা মাকছুদা খাজা এবং উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম।
খুরশিদ জাহান বলেন, ‘দল মনোনয়ন দিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’ তাঁর সমর্থকেরা মনে করেন, খুরশিদ জাহান দীর্ঘদিন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। সাংসদ স্বামীর উন্নয়নকাজে সহায়তা করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দাবিদার তিনি।
আফরুজা বারী বলেন, ‘উপনির্বাচনে ৬৮ হাজার ৯১৩ ভোট পেয়েছি। দল মনোনয়ন দিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’ তাঁর সমর্থকেরা মনে করেন, এলাকায় আফরুজার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তারপরও দলের কিছু নেতা-কর্মীর অসহযোগিতার কারণে উপনির্বাচনে তিনি হেরেছেন।
সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দলীয় মনোনয়ন চাইব।’ আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ‘দুই দফায় মেয়র হয়ে অনেক উন্নয়ন করেছি। গোটা উপজেলার উন্নয়নে একাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাহবুবর রহমান জানান, ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসন। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬২ হাজার ৪৫৭ জন এবং নারী ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৯২ জন।
জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও বর্তমান সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী এখানে দলীয় প্রার্থী। সম্প্রতি গাইবান্ধার একাধিক জনসভায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। শামীম হায়দার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। তাই উপনির্বাচনে জয়ী হতে পেরেছি। আসন্ন নির্বাচনেও আসনটি জাপাকে উপহার দিতে পারব। এখানে ১৮-৪০ বছর বয়সের ভোটার ৬০-৭০ ভাগ। তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে আছি।’
এই আসনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলমের নাম দলীয় প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে মনোনয়ন চাইব। ৫ জানুয়ারির মতো ভোট ডাকাতি না হলে জয়ী হব। কারণ, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন মানুষ দেখেছে।’
দলগতভাবে নির্বাচনের সুযোগ না থাকলেও এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও বর্তমান সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। মাজেদুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে অনেক উন্নয়ন করেছি। সাংসদ নির্বাচিত হলে উন্নয়নের সুযোগ বাড়বে। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’
অন্য দলগুলো প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। উপজেলা সিপিবির সভাপতি নুরে আলম দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জিয়া জামান খান ও গণফ্রন্টের শরিফুল ইসলাম প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। নুরে আলম বলেন, ‘দ্বিদলীয় বৃত্তের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তুলতে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব।’