ইউপি সদস্যের পরিবারের সকলের নামে ভিজিডি কার্ড!
কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ
দেশের তৃণমূল সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তার প্রকল্পের আওয়তায় দেয়া ভিজিডি ও ওএমএস কার্ডধারীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারী খাদ্য বন্টনে অনিয়ম, দুর্ণীতির বেহাল চিত্র বেড়িয়ে আসছে একের পর এক। দুস্থদের এই চাল খোদ ইউপি সদস্য ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নামেই ইস্যুকৃত ভিজিডির কার্ড করে সরকারী চাল বিধিবহির্ভুত ভাবে ইউপি চেয়ারম্যান বিলি-বন্টন করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত সুবিধা বঞ্চিত দুস্থরা
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ৪নং মরিচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলগীর বলছেন,“এরা নিজেরাই সব দুস্থ্য গরীব,আমার ইউনিয়নের ম্যাক্সিমাম মেম্বাররাই গরীব” তাই এরা না বুঝে এসব কার্ড করেছেন। তাছাড়া বিধিসম্মত না হলে সরকারী অফিসাররাই বা কিভাবে এসব কার্ড দিযেছেন বলে পাল্টা অভিযোগ এই ইউপি চেয়ারম্যানের।
এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না উপজেলা খাদ্য সহায়তা কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার। তিনি বলেন, এবিষয়ে যা কিছু জানতে চান মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন। উনি ভালো বলতে পারবেন। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বলছেন, ভিজিডি কার্ড ইস্যু ও বিতরণে কোন অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে এই কমিটির সভাপতি ইউএনও স্যার অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ৪নং মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত (১, ২ ও ৩) নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য শারমিন সুলতানা নিজ নামে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ইস্যুকৃত ০৬নং ভিজিডি কার্ডের অনুকুলে দেওয়া মাসিক ৩০ কেজি খাদ্যশস্যে(চাল) তুলছেন বলে স্বীকার করে বলেন, নিয়ম না থাকলেও আমার উপর চেয়ারম্যান সাহেবের একটু নেক নজর আছে তাই কোন সমস্যা হয়নি। কিছু মেম্বাররা আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।
ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বৈরাগীরচর গ্রামের বাসিন্দা জামাল সরদারের (৬০) অভিযোগ, ২০১৭ সালে আমার নামে (ওএমএস) ১০ টাকা কেজি দরে চাউলের কার্ড ইস্যু হয়। কিন্তু সে কার্ড আজ অবধি হাতে পায়নি। আমাকে জানানোও হয়নি এই কার্ড সম্পর্কে। কয়েকদিন পূর্বে এলাকায় আর্মির লোক এসেছিলো খাদ্য সহায়তা দিতে। তাই দেখে ভয়ে মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানা আমার বাড়িতে এসে কার্ডটি পৌছে দেয়। কিন্তু ওই কার্ডে তিন বছর ধরে টিপ সই দিয়ে চাল তুলে খাইছেন উনি। আমি ওই কার্ড নিতে চাইনি তবুও শারমিন মেম্বার জোর করে বাড়িতে কার্ড রেখে যায়।
২ নং ওয়ার্ড ভুরাপাড়া গ্রামের জিয়ারুলের স্ত্রী মানছুরা খাতুনের অভিযোগ, ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে আমার নামে ইস্যুকৃত ০৪নং ভিজিডি কার্ড হলেও তা হাতে পায়নি। গত ১৫ মাস ধরে প্রতি মাসে ৩০কেজি করে চাল ওঠানো হয়েছে তার নামীয় কার্ড থেকে। দুই বছর আগে মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানা ভিজিডির কার্ড করে দেয়ার কথা বলে আমার ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়েছিলেন। এই কার্ডের জন্য বহুদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরলেও ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর জানান আমার নামে কোন কার্ড হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি সদস্য জনান, এখানে নিয়ম অনিয়ম যা কিছুই হোক না কেন ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজসেই হয়। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সকল সদস্যই নিজ নামে বা পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে ওএমএস ও ভিজিডি কার্ড ইস্যু করে সরকারী চাল নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসির উদ্দীন তার নিজের স্ত্রী, মা, বোনসহ নিকট আত্মীয়দের নামে ভিজিডি ও এমএসএর কার্ড করেছেন স্বীকার করে বলেন, এসব কার্ড যখন আসে তখন চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের সবার মাঝে ভাগ করে দেন।
এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ-আলমগীর বলেন, ইউপি সদস্যের নামে ভিজিডির কার্ড করা যাবে কিনা সেটা আমার জানা ছিলো না। অনেক মেম্বারই না বুঝে এমনটি করেছে। তাছাড়া নিয়ম না থাকলে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসব কার্ড অনুমোদন দিলেন কিভাবে ? এমন পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন এই চেয়ারম্যান। এভাবে দেখলে আমার ইউনিয়নের প্রায় সব সদস্যই কোন না কোন ভাবে সরকারী এসব নানা সুবিধা নিচ্ছেন। আবার মেম্বাররা একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছুড়াছুড়ি করছে।
দৌলতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, কোনো জনপ্রতিনিধি অথবা সরকারি কর্মচারীর নিজ নামে ভিজিডিসহ এ ধরনের কার্ড ইস্যু করার নিয়ম নেই। অসচ্ছল হলেও এটি আইনসম্মত নয়। এমন নিয়ম বহির্ভুত কিছু হয়ে থাকলে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানাও নেই, বলারও নেই। আপনারা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। যদি কোন অনিয়ম করে এবং তা প্রমানিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।