ইবিতে ছাত্রীর র্যাগিংয়ে অসুস্থ জুনিয়র শিক্ষার্থী
ইবি প্রতিনিধিঃ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) তিন ছাত্রীর র্যাগিংয়ে জুনিয়র এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বর এলাকায় এবং পরে অনুষদ ভবনের সামনে তাকে দুই দফায় র্যাগ দেয়া হয়। এর ফলে ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বিভাগীয় সভাপতি বরাবর র্যাগিংয়ের অভিযোগ এনে নামসহ চার ছাত্রীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম (ছন্দা)। তিনি সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
র্যাগিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থী হলেন- আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শারমিন সাথী, অনন্যা নারগিস, তাজমীন নাহার এবং জান্নাত-ই-কাওনাইন মাকনুন।
ভুক্তভোগী ও অভিযোগপত্রের তথ্য মতে, অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে একই বিভাগের শিক্ষার্থী তুষারের সঙ্গে ঘুরতে দেখে তাদের পথরোধ করেন। এ সময় ছন্দা তার বন্ধুর (তুষার) সঙ্গে কেন ঘুরছে তার কারণ জানতে চান। পরে তুষার ছন্দার হয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে।
এ সময় অভিযুক্তরা তাদের ওপর চড়াও হলে কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ছন্দা ও তুষার সেখান থেকে চলে আসেন। পরে আবার দ্বিতীয় দফায় অনুষদ ভবনের সামনে এসে তাদের পথরোধ করেন অভিযুক্ত চার ছাত্রী।
এ সময় তাদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চলে আসায় তাদের মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে ছন্দাকে অকথ্য ভাষায় চরিত্র তুলে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের গালি-গালাজ, হুমকি এবং মারধর করতে উদ্বুদ্ধ হয়। এ সময় অভিযুক্তরা ওই দুই শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তুই কেমন করে ক্যাম্পাসে পড়িস দেখে নেব। তোর বিভাগ আমাদের কিছুই করতে পারবে না। তোর বিভাগের সিনিয়রদের দিয়ে তোকে র্যাগ দেয়াব।’
এ সময় ভুক্তভোগী ছাত্রী আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মেসে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে তুষার বলেন, ‘আমার অভিযুক্তদের সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। তারা কেন এমন উগ্র আচরণ করেছে আমি জানি না। আমি বাধা দিলেও তারা থামেননি। তবে তারা রাতে বন্ধুদের মাধ্যমে অভিযোগ করতে নিষেধ করে। আমি প্রশাসনের কাছে এর যথার্থ বিচার দাবি করছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের জুনিয়রদের মানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। গত সপ্তাহে তারা তার জুনিয়র সেশনের তিন ছাত্রীকে ডেকে মানষিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত শারমিন সাথী, জান্নাত-ই-কাওনাইন মাকনুনসহ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা যা বলার বলেছি। এ বিষয়ে মিডিয়াকে কিছুই বলব না। প্রক্টর স্যার মিডিয়াকে কোনো কিছু বলতে নিষেধ করেছেন।’
এ বিষয়ে ভিসির দায়িত্বে থাকা প্রো-ভিসি ও বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘প্রক্টর কেন মিডিয়াকে র্যাগিংয়ের বিষয়টি বলতে নিষেধ করবে? এটা তো তার উচিৎ নয়। প্রশাসন থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আমি র্যাগিংয়ের বিষয়ে একটি আবেদন পেয়েছি, সেটি প্রক্টরের কাছে হস্তান্তর করেছি। র্যাগিং কোনোভাবেই বরদাসত করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ বলেন, ‘অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত উভয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যৌন হয়রানির বিষয়ে বলেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’