ইবিতে রাতভর বখাটেদের হয়রানির শিকার ছাত্রীরা
কুষ্টিয়াঃ
মেসে অবস্থান করা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চার ছাত্রী রাতভর দফায় দফায় বখাটেদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত দুই দফায় ওই ছাত্রীদের জানালার সামনে অশ্লীল কথাবার্তা ও বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ বাজে মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে এ ঘটেছে। ভুক্তভোগী ওই চার ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন তারা। পরে তাদের সহপাঠী, শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় পুলিশকে জানানো হয়। ভোর ৪টার দিকে টহলরত পুলিশের একটি দলের ঘটনাস্থলে উপস্থিতি লক্ষ্য করতে পেরে বখাটেরা পালিয়ে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বৃহস্পতিবার সকালেই ওই ভাড়া করা মেস ছেড়ে দিয়েছেন তারা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন তারা। পরে নিজেদের মালামাল আবাসিক হলে রেখে প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় বাড়ি ফিরে গেছেন চার ছাত্রী।
এ ঘটনা জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইবিয়ানরা। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওয়াত এনে শাস্তির দাবি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যাতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা বরাবরই আমদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করি।
ভুক্তভোগীরা জানান, তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করায় কোনো উপায় না পেয়ে চারজন বান্ধবী মিলে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে পড়াশুনা করছিলেন। হঠাৎ পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্তে তারা বিপাকে পড়ে যান। ওই বাসায় মেস মালিকের স্ত্রী ও এক মেয়েও তাদের সঙ্গে থাকেন। ওই বাসায় কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় প্রায়ই স্থানীয় বখাটেরা আশপাশে ঘুরাফেরা করে থাকে। রাত হলেই তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। ওই এলাকায় বখাটেরা মাদক সেবন করে থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ছাত্রীদের অভিযোগ, রাত সাড়ে ১২টার দিকে বখাটেরা মেসের পাশে এসে অশ্লীল ভাষায় কথাবার্তা বলতে থাকে। এ সময় জানালার নিচের ফাঁকা অংশ দিয়ে কক্ষের ভেতরে তাকানো ও বিভিন্ন বাজে ভাষায় মন্তব্য করে বলে অভিযোগ তাদের। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ছাত্রীরা চিৎকার করলে মেস মালিক ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় ১ ঘণ্টা পর তারা পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি সহপাঠীদের মাধ্যমে ইবি থানা পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের জানানো হয়। একই সঙ্গে ওই সময় শৈলকুপা থানার টহলরত পুলিশকে জানালে তাৎক্ষণিক কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
দ্বিতীয় দফায় রাত ৩টার দিকে আবারো ফিরে আসে বখাটেরা। এ সময় তারা আরও বেশি অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকে। এ সময় ছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে মেস মালিকের কক্ষে আশ্রয় নেন।
শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমাকে বিষয়টি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা মেস মালিকের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্তদের নাম জানার চেষ্টা করছি। প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। কারও নাম জানা গেলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আবদুস সালাম বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই প্রক্টর ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলেছি। শুধু আজকের জন্য নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী বাসা/মেসে অবস্থান করে থাকেন। তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য জানিয়েছি।