ইভ্যালির চেয়ারম্যান-এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ঢাকা:
আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে ই-কমার্স প্লাটফর্ম ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞায় ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুক্রবার (৯ জুলাই) দুদকের একটি সূত্র জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ই-ভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী যিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন এমন শঙ্কায় তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে ইমিগ্রেশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে ই-ভ্যালির অনিয়ম অনুসন্ধানে গতকাল দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দুদক।
পরে এই ই-ভ্যালির এই দুই কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে দুদকের কমিটি। শুক্রবার সে আবেদন আদালত ও পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) পাঠানো হয়।
দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ই-ভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি রাসেল দেশ ত্যাগ করতে পারেন এমন একটি খবর দুদকের কাছে রয়েছে। এজন্য তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে ইমিগ্রেশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আদালতের অনুমতির বাধ্যবাধকতা থাকায় সেখানেও একই আবেদন পাঠানো হয়। এই নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন পাঠানোর নিয়ম থাকায় আমরা আগেই ইমিগ্রেশনে চিঠি পাঠিয়েছি। আদালত খুললে ১৫ দিন পর আবেদনটির বিষয়ে শুনানি হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, গত বছরের নভেম্বরে মন্ত্রণালয় থেকে ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদসমূহের পেপার কাটিংসহ একটি অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানের জন্য দুদকে প্রেরণ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে দুদকের মানি লন্ডারিং অনুবিভাগের দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেন।
জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত অভিযোগের মধ্যে ছিল- লোভনীয় অফার প্রদানের মাধ্যমে তার গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অগ্রীম আদায় করছে তবে গ্রাহকদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য প্রদান করছে না বা অন্য পণ্য প্রদান করছে, গ্রাহকের অর্ডারকৃত পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলেও যথাসময়ে গ্রাহকের পণ্যমূল্য ফেরত দিচ্ছে না ইত্যাদি।
পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের আলোকে আরও একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগে প্রাপ্তির পর কমিশন পূর্ববর্তী অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।
গতকাল দুদক একজন সহকারী পরিচালক ও একজন উপসহকারী পরিচালককে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সংস্থাটির মানি লন্ডারিং অনুবিভাগ থেকে করা ওই তদন্ত কমিটিকে ইভ্যালির গ্রাহক ও মার্চেন্টের ৩৩৯ কোটি টাকার হদিস না মেলার বিষয়টি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী ই-ভ্যালির চলতি সম্পদের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটি দায় বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ মার্চ, ২০২১ তারিখে ই-ভ্যালি.কম লিঃ এর চলতি সম্পদ প্রায় ৬৫.১৮ কোটি টাকা এবং মোট দায় প্রায় ৪০৭.১৮ কোটি টাকা। তন্মধ্যে, গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রীম হিসেবে গৃহীত দায় প্রায় ২১৪ কোটি টাকা এবং ই-ভ্যালির মার্চেন্টদের কাছে দায় প্রায় ১৯০ কোটি টাকা।
ফলে স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির নিকট চলতি সম্পদ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র ৬৫.১৮ কোটি টাকা, যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তার চলতি দায়ের বিপরীতে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। তদুপরি গ্রাহক ও মার্চেন্টদের নিকট হতে গৃহীত প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
ফলে সম্পূর্ণ অর্থ আত্মসাৎ অথবা অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়বস্তু আমলে নিয়ে কমিশনের নির্দেশক্রমে দুদকের অনুসন্ধান টিম অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি সংগ্রহ করছে।