সাতক্ষীরাঃ

অবৈধভাবে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রাহকদের প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আল-কারিম ফাউন্ডেশন নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শহরের নবারুন স্কুলের সামনের কার্যালয় থেকে পাঁচ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। রোববার দুপুরে পুলিশ ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাদের আটক করেন।

আটককৃতরা হলেন, জেলার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা রহমতউল্লাহ, সহকারী হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা আব্দুল খালেক, সদর উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম ইহসানুর রহমানসহ পাঁচজন। এরমধ্যে বেশি টাকা আত্মসাৎকারী সদর উপজেলা জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন বেলাল হোসেন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়।

প্রতারণার স্বীকার ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান যশোর জেলার সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। প্রথমে তারা তেমন কোন সাড়া না পেলেও প্রতারক চেয়ারম্যান সাতটি উপজেলায় ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাঠকর্মী নিয়োগ দেয়। উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে স্থায়ী এবং অস্থায়ী আমানাত সংগ্রহ শুরু করে। ঈমাম মুয়াজ্জিনদের দেখে সাধারণ মানুষ সহজেই বিশ্বাস করে টাকা আমানত করতে শুরু করে। এভাবে সাতটি উপজেলায় ৫০ জন মাঠকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৬ সাল থেকে অদ্যাবধি তারা সাড়ে আট হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে।

তারা আরও জানান, আলÑকারীম ফাউন্ডেশনের নামে সাতক্ষীরার কোন ব্যাংকে হিসাব নেই। প্রতিদিন যে টাকা আদায় হয় তা চেয়ারম্যানের একাউন্টে পাঠাতে হয়। কোনো গ্রাহক সঞ্চয়ের টাকা বা কোনো ঋণ চাইলে চেয়ারম্যান যশোর থেকে তার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারের ব্যক্তিগত একাউন্টে চাহিদার আর্ধেক টাকা পাঠান। সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশী টাকা সংগ্রহ করেছেন সদর উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন বেলাল হোসেন। তিনি একাই সংগ্রহ করেছেন প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক শ্যামনগর উপজেলার দাউদ গাজীর ছেলে আইয়ুব গাজী জানান, আড়াই লাখ টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে লোন পেয়েছি ৫০ হাজার টাকা। সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ চাইলে বেলাল হোসেন বলেন, আপনি ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন বাকী টাকা পরিশোধ করুন তা না হলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এভাবে তারা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে দীর্ঘদিন।

আল-কারীম ফাউন্ডেশনের জেলা কর্মকর্তা রহমত উল্লাহ জানান, ২০০৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে গ্রহক সংখ্যা ৮ হাজার ৫০০ জন। সাধারণ গ্রাহকের টাকা আছে ৩ কোটি ৬৩ টাকা ও এফডিআর আছে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

কিভাবে এত বিপুল অংকের টাকা লেনদেন করেন এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, পাশ বই ও মানি রিসিটের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকি। কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া কিভাবে এত বিপুল পরিমান টাকা সংগ্রহ করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যশোরের সাজ্জাদ সাহেব যা করেন তাই হয়। আমরা এখানে সামান্য বেতনে চাকুরী করি।

আল-কারীম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন জানান, আমি ইসলামী আন্দোলনের একজন সদস্য। আমি যখন শুরু করি তখন এতো আইন-কানুন দেখা হয়নি। এখন সরকার না চাইলে আমি ২০২০ সালের মধ্যে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিবো।

এ ব্যাপারে জেলা সমবায় কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ বলেন, এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ভাবেই চালাতে পারেন না।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক দেবাশীষ সরদার জানান, গত এক সপ্তাহ আগে সমাজসেবা থেকে তারা একটি নিবন্ধন নিয়েছে। এই নিবন্ধনের আলোকে কোনো আর্থিক লেনদেন করার কথা নয়। অথচ তারা অনেক দিন ধরেই মোটা অংকের টাকা আমানাত সংগ্রহ করছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় আয়ূব আলী নামের একজন গ্রাহক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। অন্য গ্রাহকরা যাতে তাদের টাকা ফেরত পায় সেজন্য অভিযোগ পেলে পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা করবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here