ইলিশ কেজি মাত্র ৩৫০
সবুজদেশ ডেক্সঃ চরদুয়ানি-বরিশাল এইদিকে, সস্তায় বরিশাল এইদিকে’, ‘বরিশালের ইলিশ, কেজি মাত্র ৩৫০’, ‘বড় বড় ইলিশ, দেইখ্যা-শুইন্যা-বাইছ্যা লন’, ‘শ্যাষ হইলে পস্তাইবেন’, ‘আর মাত্র কয়েক দিন…’ মাইকে এ রকম নানা স্লোগান এখন খুলনা নগরের বিভিন্ন মাছ বাজারে শোনা যাচ্ছে।
খুলনায় চার-পাঁচ দিন ধরেই মাইকিং করে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের দামও আগের চেয়ে বেশ কমেছে। মূলত ক্রেতা টানতেই বিক্রেতারা এ পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। চলছে অন্য বিক্রেতাকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা।
ইলিশ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এ বছর ইলিশের মৌসুম শুরু হওয়ার কয়েক মাস পর্যন্ত নদীতে ইলিশ তেমন পড়েনি। দামও ছিল তুলনামূলক বেশি। এখন শেষ সময়ে এসে ইলিশ পড়ছে, দামও ব্যাপক কমেছে, সবাই ইলিশও কিনছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন ইলিশ কিনতে বাজারে ভিড় জমাচ্ছেন।
এ ছাড়া আগামী ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা, বিক্রি, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ ও বিনিময় নিষিদ্ধ করায় ক্রেতারা ইলিশ কেনায় ঝুঁকছেন। বিক্রেতারাও দাম কমিয়েছেন।
নগরের কেসিসি সন্ধ্যা বাজার, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারেই মাইকিং করে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন মহল্লায় ভ্যানেও মাইকিং করে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ ৮০০ টাকা, ৬০০ গ্রামের মাছ ৫৫০ টাকা, সাড়ে ৫০০ গ্রামের মাছ ৪০০ টাকা, ৪০০-৪৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতিদিন বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মাইকিং করে ইলিশ বিক্রি চলছে।
নগরের ময়লাপোতা মোড়ের কেসিসি সন্ধ্যা বাজারের বাইরে সোনাপোতা স্কুলের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে অন্তত ১০টি অস্থায়ী দোকানে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। সেখানে মাইকিং করে ইলিশ বিক্রি করছিলেন মো. মিজানুর রহমান। অন্তত ১০টি ঝুড়িতে থরে থরে ইলিশ রাখা। তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগেও বাজারে ইলিশের যে দাম ছিল, এখন তা অনেকটা পড়ে গেছে। প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে তিনি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ মণ ইলিশ বিক্রি করছেন।
অন্য একজন বিক্রেতা মো. সুজন বলেন, প্রতিদিন তিনি সাত-আট মণ করে ইলিশ বিক্রি করছেন। তাঁর মতো অনেকেই অন্য মাছ বিক্রি বন্ধ করে এখন ইলিশ বিক্রি করছেন।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনায় যে ইলিশ বিক্রি হয় তার বেশির ভাগ আসে বরিশাল, পাথরঘাটা, চরদুয়ানি থেকে। এগুলো প্রথমে নগরের ৫ নম্বর ঘাট ও রূপসা পাইকারি মাছের বাজারে আনা হয়। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা নিলামের মাধ্যমে সেগুলো কিনে থাকেন। গ্রেডিং করে এবং গড়পড়তা দুইভাবেই দাম ওঠে।
বাজারে ইলিশ কিনতে আসা নিরালা নাজিরঘাট এলাকার মনিরুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন পর নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। আর দাম আগের চেয়ে অনেক কমেছে। তাই বেশি করে ইলিশ কিনতে এসেছেন। ৫৫০ টাকা হিসাবে ৭ কেজি ইলিশ কিনেছেন তিনি।
এদিকে খুচরা বাজারের মতো নগরের ৫ নম্বর ঘাটের সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ও রূপসায় গিয়েও অনেকেই পাইকারি দামে ইলিশ কিনছেন বলে জানান ৫ নম্বর ঘাটের আড়তদার মো. সাঈদ হোসেন। সেখানে ইলিশ কিনতে আসা আশীষ মণ্ডল জানান, ইলিশের দাম কমেছে শুনে তিনি পাইকারি দামে ইলিশ কিনতে এসেছেন। দাম কম পাওয়ায় তিনি বেশ কয়েকটা ইলিশও কিনেছেন।
মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মনিষ কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর মৌসুমের শুরুর দিকে তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বরিশাল ও পটুয়াখালীর বিভিন্ন মোকাম থেকে মূলত খুলনার বাজারে প্রচুর ইলিশ আসছে। স্থানীয় নদনদীতেও জেলেরা ইলিশ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষাকালীন নিষেধাজ্ঞা এবং জাটকা ইলিশ শিকারকালীন নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে পালন করায় এভাবে ইলিশের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। সরবরাহ বাড়ায় ক্রেতা আকর্ষণে খুলনায় মাইকিং করে বিক্রি করা হচ্ছে রুপালি ইলিশ। সস্তায় স্বাদের সে মাছ কিনতে ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছেন বাজারে।