ইসরাইলে আরব হত্যা বাড়ছে যে কারণে
সবুজদেশ ডেস্কঃ
ইসরাইলের সংখ্যালঘু আরব জনগোষ্ঠীর ওপর সাম্প্রতিক সময়ে হত্যার ঘটনা বেড়েছে। দিন দিন এ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দেশটির বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে ইসরাইলে অপরাধের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ৯৭ জন আরব নাগরিক। সেই অনুপাতে ইহুদি জনগোষ্ঠীর মানুষ মারা গেছে এর অর্ধেকেরও কম।
ইসরাইলের জনসংখ্যার মাত্র প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ সংখ্যালঘু আরব জনগোষ্ঠী। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দেশটিতে হত্যার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে এই আরব জনগোষ্ঠীর মধ্যেই।
অ্যাব্রাহাম ইনিশিয়েটিভ গ্রুপ নামে একটি ইহুদি আরব সংগঠনের জরিপে এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে সংগঠনটি।
তাদের জরিপে দেখা যাচ্ছে, এ বছরেও ইতোমধ্যেই ৬০ জন ইসরাইলি আরব অপরাধে প্রাণ হারিয়েছে।
ইসরাইলে আরব সম্প্রদায়ের যেসব মানুষ বাস করেন- যারা নিজেদের ‘ইসরাইলের ফিলিস্তিনি নাগরিক’ হিসাবে পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করেন, তত্ত্বগতভাবে ইসরাইল রাষ্ট্রে তাদের এবং দেশটির ইহুদি নাগরিকদের সমান অধিকার পাবার কথা। কিন্তু তারা নিয়মিতভাবেই বৈষম্যের অভিযোগ করেন।
মাদার্স ফর লাইফ নামে একটি সংস্থার অধিকার কর্মী মাইসাম জালজুলি বলেন, এই পরিসংখ্যান স্তম্ভিত হওয়ার মত। আগে আমরা ভাবতাম এধরনের অপরাধীরা নারী এবং শিশুদের গায়ে হাত দেয় না, কিন্তু এখন আর ওরা কাউকে ছাড় দিচ্ছে না।
তিন সন্তানের মা সুহা এপ্রিল মাসে কাজ করছিলেন পার্লারে। ভেতরে দুজন কাস্টমারও ছিলেন। মাথায় হুড লাগানো এক হামলাকারী খুব কাছ থেকে সুহাকে লক্ষ্য করে পাঁচ বার গুলি চালায়। এখনও পর্যন্ত তার হত্যার জন্য কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
নিহতদের শোকাহত পরিবারগুলো এবং আরব কর্মকর্তারা দাবি করছেন যে আরব অধ্যুষিত এলাকাগুলো সহিংসতায় জর্জরিত হয়ে ওঠার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা।
ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের এক শহরের বাসিন্দা এক আরব মা বলেন, আমি শোকে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আমাকেই কেউ খুন করেছে, বা আমার চোখ উপড়ে নিয়েছে। ওরা আমার ছেলেকে খুন করেছে। সে ছিল আমার একমাত্র ছেলে।
‘পুলিশ কিছুই করছে না। আরব সম্প্রদায়ের মধ্যে এধরনের ঘটনা ঘটলে তারা গায়ে মাখে না,’ তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন।
হারেৎস সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, এ বছর যত হত্যার ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ তার মধ্যে আরবদের হত্যার মাত্র ২৩ ভাগ ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়েছে বা হত্যার কিনারা করেছে। সে তুলনায় ইহুদিদের হত্যার ৭১ ভাগ ঘটনা পুলিশ সমাধান করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত প্রায় এক দশক ধরে পুলিশ ইহুদি ইসরাইলি কুখ্যাত গুণ্ডা আর অপরাধীদের বিরুদ্ধে বড়ধরনের দমন অভিযান চালিয়েছে। আর এরপর থেকেই সংগঠিত অপরাধ চক্রগুলোর কার্যকলাপ আরব অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় বহু গুণ বেড়ে গেছে। তাদের মতে এরা আরব এলাকায় তাদের নতুন ঘাঁটি গেড়েছে।
তারা বলছেন, ভারী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে গ্যাংগুলো এখন আরব এলাকাগুলোয় সুরক্ষার নামে গুণ্ডামি, চাঁদাবাজি করছে, তারা সেখানে দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে নানাধরনের মহাজনি কারবার এবং অর্থ লেনদেনের একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে তুলেছে, মানুষজনকে হুমকি দিচ্ছে এবং লোকদের ব্ল্যাকমেইল করছে।
ইসরাইলের বর্তমান জোট সরকারে এই প্রথমবারের মত একটি ইসলামপন্থী আরব পার্টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সরকার সামগ্রিক সব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা