ঈদের আগে মাছ-মুরগির দাম বেশি
ঢাকার কারওয়ান বাজারে মসলার বাজার প্রায় ফাঁকা। বিক্রেতা আছেন, ক্রেতা নেই। দুই ঘণ্টা ধরে সেই বাজারে এদিক-সেদিক ঘুরে মসলার বাজারে ফের উঁকি দিয়েও ক্রেতার দেখা পাওয়া গেল না। শুক্রবার বলেই কি ক্রেতাশূন্য? বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা।
পবিত্র ঈদুল আজহার আগে মসলার বাজার যেভাবে জমে ওঠে, এবার সেভাবে এখনো জমে ওঠেনি। তাঁদের দাবি, মসলার দাম সেভাবে না বাড়লেও, বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি চলে যাওয়ায় ক্রেতা কমে গেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
সকালে কারওয়ান বাজারে মসলার পাইকারি দোকান আলতাফ জেনারেল স্টোরে কথা হয় বিক্রেতা আবুল বাশারের সঙ্গে। হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘দেখছেন না ক্রেতা নাই, মসলার বিক্রিও নাই।’ তিনি দাবি করেন, ঈদের আগে মসলার দাম যেভাবে বাড়ে, এবার তেমন বাড়েনি। ক্রেতা কম থাকায় তাঁরা চিন্তিত।
বাশার বলেন, দুই ধরনের জিরা পাওয়া যায়। একটি সিরিয়ার, অন্যটি ভারতের। সিরিয়ার জিরার দাম কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা ছিল। ভারতের জিরার দাম ছিল ৩২০ টাকা কেজি। দুটো জিরার দামই ২০ টাকা করে বেড়েছে। ছোট এলাচির দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা, এখন তা বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা হয়েছে। দারুচিনির দাম বাড়েনি। ২৯০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনিগুঁড়া পোলাওয়ের চাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা মসলার দোকানদার ছোবহান জেনারেল স্টোরের মালিক ছোবহান বলেন, ‘সব মানুষ ঢাকা ছাইড়া চইলা যাইতেছে, মসলা কেনার লোক নাই। সকাল থাইকা অল্প কিছু বেচছি। মানুষ পাইতেছি না।’ তিনিও জানান, এবারে মসলার দাম সেভাবে বাড়েনি। যতটুকু বেড়েছে তা খুব সামান্যই। এতটুকু দাম বাড়লে ক্রেতা কমে না।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, মাছের মধ্যে কেবল ইলিশের চাহিদা বেশি। অন্য মাছ কম কিনছেন ক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে মাছের দোকানদার কামরুজ্জামান এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে। এর চেয়ে কিছুটা ছোট ইলিশ ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন। কামরুজ্জামান বলেন, ‘অখন ইলিশের মৌসুম। মাছ ধরাও পড়ছে বেশি আর কিনছেও বেশি। এখনকার ইলিশ স্বাদে ভালো, তাই বিক্রি বেশি।’ তাঁর মতে, মানুষ ঈদে মাংস খেতে খেতে কিছুটা অন্য স্বাদের খাবার খোঁজে, যা ইলিশ দিয়ে পূরণ হয়।
ইলিশ মাছ কিনছিলেন পূর্ব রাজাবাজারের বাসিন্দা আকলিমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘দুটি এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনলাম। ঈদে মানুষ বেড়াতে আসে। মাংসের পাশাপাশি ইলিশ মাছ দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করতেই ইলিশ মাছ কিনে নিলাম।’
ইলিশ বাদে অন্যান্য মাছের চাহিদা কিছুটা কম বলে জানালেন আরেক মাছ বিক্রেতা সুকুমার দাস। তিনি জানালেন, বড় সাইজের রুই মাছ ৪০০ টাকা কেজি আর মাঝারি সাইজের মাছ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। সুকুমার বলেন, এই ঈদে ট্রাকের চাপে মাছ আসতে সমস্যা হচ্ছে বলে দাম কিছুটা বেশি। তবে ঈদের আগে আগে ও পরে দাম কিছুটা কমবে। মানুষ মাংস বেশি খাবে বলে মাছের চাহিদা কমে আসবে।
ব্রয়লার মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেল, মুরগির কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। মুরগির দাম বাড়ার যুক্তি দেখালেন বিক্রেতা মো. হোসেন। তিনি বললেন, রাস্তায় এখন চাঁদা ওঠানো হচ্ছে। গরুর ট্রাকের পাশাপাশি তাঁদেরও এই চাঁদা দিতে হচ্ছে। এই ভয়ে মুরগির সরবরাহ অনেক কমে গেছে। তাই দাম বেশি। তবে ঈদের পরপর দাম আবার কমতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
কাঁঠালবাগান এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন কারওয়ান বাজারে এসেছেন বাজার করতে। তিনি ঈদ ঢাকাতেই করবেন বলে বেশি পরিমাণে বাজার করছেন। তিনি বলেন, সবকিছুরই দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। ঈদের আগে বলে এটি হতে পারে। কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উৎসবে অন্য দেশে পণ্যের দাম কমে যায়। আর আমাদের দেশে পুরো উল্টো। উৎসব এলে দাম বেড়ে যায়।’