ঈদ আসতেই মসলার দাম বাড়ছে
ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসতেই চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-আছদগঞ্জে বাড়ল মসলার দাম। এক থেকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ছয় ধরনের মসলার দাম কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের বাজার ধরতে খুচরা ব্যবসায়ীরা যখন পাইকারি বাজার থেকে কেনাকাটা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনই এসব মসলার দাম বাড়ানো হয়েছে।
আমদানিকারকেরা বলছেন, মৌসুম শেষ হওয়ায় কিছু মসলার বিশ্ববাজার এখন চড়া। বন্দরে কনটেইনারজটের কারণে সময়মতো আমদানি করা মসলা হাতে আসছে না। এর পাশাপাশি চাহিদাও বেশি।
জানতে চাইলে আমদানিকারক ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এলাচির দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। পাশাপাশি জিরা, দারুচিনি, গোলমরিচ, জায়ফল ও লবঙ্গের দাম প্রতি কেজি ২০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। দেশ ও মানভেদে মসলার দামে অনেক বেশি ব্যবধান থাকে।
দেশে মসলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে ঈদুল আজহায়। এ সময় মাংস রান্নার জন্য বাড়তি পরিমাণে জিরা, এলাচি, দারুচিনি, গোলমরিচ, লবঙ্গ ইত্যাদি মসলা কেনেন ক্রেতারা। এসব মসলাকে দেশে গরমমসলা বলা হয়। এগুলো দেশে উৎপাদিত হয় না, চাহিদার প্রায় পুরোটুকুই বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে মেটানো হয়।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে গুয়াতেমালা থেকে আমদানি করা সবচেয়ে ভালো মানের এলাচির দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। খুচরায় প্রতি ১০০ গ্রাম এলাচি মিলছে ১৭০-১৮০ টাকা দরে, অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। পাইকারিতে ভারতীয় জিরার দাম প্রতি কেজি ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। এই জিরা খুচরা বাজারে প্রতি ১০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। বাজারে অবশ্য সিরিয়া ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা জিরার দাম ভারতীয় জিরার চেয়ে বেশি। এ দুটি দেশের জিরা প্রতি কেজি ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দারুচিনি আমদানি হয় চীন ও ভিয়েতনাম থেকে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দারুচিনির দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা গতকাল খাতুনগঞ্জ থেকে প্রতি কেজি চীনা দারুচিনি কিনেছেন ২৭০ টাকায়। ভিয়েতনামের দারুচিনি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২৪০ টাকা। খুচরা বাজারে দারুচিনি প্রতি ১০০ গ্রাম ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
দেশে জায়ফলের চাহিদা তুলনামূলক কম। এটি আমদানি হয় শ্রীলঙ্কা ও ভারত থেকে। পাইকারি বাজারে জায়ফল প্রতি কেজি ৪০০ টাকা ও গোলমরিচ প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দুটি মসলা খুচরায় ১০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, অর্থাৎ প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা।
লবঙ্গ আমদানি হয় ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার ও ব্রাজিল থেকে। দেশ ও মানভেদে লবঙ্গের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বাজারে ভারতীয় লবঙ্গ প্রতি কেজি ৮৮০-৮৯০ টাকা ও ইন্দোনেশিয়ার লবঙ্গ ৯২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় প্রতি ১০০ গ্রাম লবঙ্গ মিলছে ১০০ টাকায়।
আমদানি বেড়েছে
চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রধান ছয় ধরনের মসলা আমদানি হয়েছে ৪ কোটি ৫৪ লাখ কেজি। বন্দর থেকে খালাসের পর এসব মসলার দাম পড়ে ১ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে মসলা আমদানি বেড়েছে ৪৪ লাখ কেজি। অবশ্য চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও স্থলবন্দর দিয়ে সামান্য পরিমাণে মসলা আমদানি হয়ে থাকে।
গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪০ লাখ কেজি এলাচি আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৯ লাখ কেজি বেশি। একই সময়ে ২ কোটি ৭২ লাখ কেজি জিরা আমদানি হয়, যা আগের বছরের চেয়ে ৩২ লাখ কেজি বেশি। দারুচিনি আমদানিও বেড়েছে। গত অর্থবছর দারুচিনি আমদানি হয় ১ কোটি ১৩ লাখ কেজি, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৮ হাজার কেজি বেশি। আলোচ্য সময়ে জায়ফল আমদানি হয় ২ লাখ ৮০ হাজার কেজি।
বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, মসলার পর্যাপ্ত মজুত আছে। ফলে ঈদে সরবরাহে কোনো সংকট হবে না। তিনি বলেন, ভারতে কয়েকটি প্রদেশে বন্যার কারণে এলাচির আবাদ নষ্ট হয়েছে। ফলে সেখানে দাম বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। তবে জিরা, দারুচিনি, গোলমরিচসহ অন্যান্য মসলার দাম তেমন একটা বাড়েনি।