ঢাকা ০২:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উইন্ডিজ ক্রিকেটের নতুন নক্ষত্র শাই হোপ

Reporter Name

উইন্ডিজ ক্রিকেটের নতুন নক্ষত্র শাই হোপ - ছবি : সংগৃহীত

সবুজদেশ ডেস্কঃ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের কথা বললেই স্যার ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, কোর্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ ও স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্সদের মতো কিংবদন্তিদের নাম চলে আসে। কিন্তু এরপর কী হলো, কালের অতলে খেই হারিয়ে ফেলল দু’বার বিশ্বকাপ জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বলা যায়, সর্বশেষ শিবনারায়ণ চন্দরপল ছিলেন তাদের যোগ্য উত্তরসূরী। মাঝে ক্রিস গেইল- ড্যারেন ব্রাভোদের মাঝে তাদের ছায়া দেখলেও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট আর বোর্ডের আর্থিক দৈন্যতায় হারিয়ে গেলেন তারা।

গেইলের হয়তো জতীয় দলকে আরো অনেক কিছু দেয়ার ছিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেমন তাদের দাপট, টেস্ট-ওয়ানডে ফরম্যাটে ঠিক তার উল্টোটা। কিন্তু সম্প্রতি সম্ভাবনাময়ী একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারের আশাজাগানিয়া খেলা, উইন্ডিজ ক্রিকেট আবারো আপন জায়গায় ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর এ নতুন দিগন্তে মেরুন জার্সিয়ানদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাই দিয়েগো হোপ। তিনি উইন্ডিজ ক্রিকেটের নতুন নক্ষত্র।

বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, জো রুট ও বাবার আজমদের যুগে তাকে নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি হয় না। এখনকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের যে খ্যাতি তার বেশিরভাগটাই ওই কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের সৌজন্যে। কিন্তু এর বাইরেও ক্যারিবীয় শিবিরে এমন একজন ক্রিকেটার আছেন, যিনি টি-২০ ঝংকার থেকে বেশিরভাগ সময়ই দূরে থাকেন, তিনি হলেন হোপ। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মোটামুটি আলো ছড়ালেও রঙিন পোশাকের ৫০ ওভারের ফরম্যাটে দারুণ উজ্জ্বল। এখন পর্যন্ত ৮১ ওয়ানডেতে ৭৬ ইনিংসে খেলে ৫৩.৭৪ গড়ে ৩৫৪৭ রানই তার প্রমাণ। ১০টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ১৯টি হাফসেঞ্চুরি। সদ্য শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ওয়ানডেতে যথাক্রমে ১১০, ৮৪, ৬৪ ইনিংসে ২৫৮ রান করে হয়েছেন সিরিজ সেরা। সর্বশেষ ছয় ইনিংসে দু’টি সেঞ্চুরিসহ রয়েছে ৪টি অর্ধশতক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টানা ছয় ইনিংসে পঞ্চাশ কিংবা তারোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন এমন ক্রিকেটার আছেন নয়জন। স্বদেশি গেইল-গ্রিনিজও রয়েছেন এতে।

৩৪ টেস্টে দুই সেঞ্চুরি ও ৫ হাফসেঞ্চুরিতে ১৬০৩ রান হোপের। ১৩ টি-২০তে ১১ ইনিংসে দুই অর্ধশতকসহ করেছেন ২৫৮ রান। ২০১৬ সালে অভিষেকের পর থেকেই একদিনের ক্রিকেটে একপ্রকার রানমেশিন বলা চলে হোপকে। তার চোখ জুড়ানো কভার ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, গ্লান্স কিংবা লেট্ কাটে বিপক্ষ বোলিং দুমড়ে যায়। তার সাথে ধীর স্থির মানসিকতা নিয়ে ক্রিজে পৌঁছেন চার নম্বর জার্সিধারী।

চার বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তার প্রাপ্তিও কম নয়। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জন ক্যাম্পবেলের সাথে মিলে ওডিআই ক্রিকেট ইতিহাসে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ ৩৬৫ রানের পার্টনারশিপে অবদান রেখেছেন হোপ। যা এর আগে ছিল পাকিস্তানের ফখর জামান ও ইমাম-উল হকের (৩০৪)। সেই ম্যাচে ১৫২ বলে ক্যারিয়ের বেস্ট ১৭০ রান করেন ক্যারিবীয় উইকেটরক্ষক। কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডসকে (৪৮ ইনিংস) সরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্রুততম ২ হাজার রানের মালিকও হয়েছেন হোপ (৪৭ ইনিংস)। ২০১৭ সালে সে বছর উইজডেনের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকাতেও মনোনীত হন হন। ২০১৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন শাই হোপ। আইসিসির ২০২০ সালের বর্ষসেরা ওয়ানডে দলেও জায়গা পেয়েছেন তিনি।

১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণকারী হোপ পড়াশোনার জন্য একসময় পাড়ি দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। ক্লাব ক্রিকেট খেলতে খেলতে আশা ছিল ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে জড়ানোর। কিন্তু ভাগ্য নিজের ভিটে বার্বাডোজেই নিয়ে আসে ২৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে। তার বড় ভাই কাইল হোপও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন। এভিন লুইস, শিমরণ হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান ও কাইল মায়ার্সরা যদি সঙ্গ দিতে পারেন, তবে আবারো হাসবে উইন্ডিজ দ্বীপের ক্রিকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে নতুন তারকা হতে পারেন শাই হোপ।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:০০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ মার্চ ২০২১
২০৬ Time View

উইন্ডিজ ক্রিকেটের নতুন নক্ষত্র শাই হোপ

আপডেট সময় : ০৯:০০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ মার্চ ২০২১

সবুজদেশ ডেস্কঃ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের কথা বললেই স্যার ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, কোর্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ ও স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্সদের মতো কিংবদন্তিদের নাম চলে আসে। কিন্তু এরপর কী হলো, কালের অতলে খেই হারিয়ে ফেলল দু’বার বিশ্বকাপ জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বলা যায়, সর্বশেষ শিবনারায়ণ চন্দরপল ছিলেন তাদের যোগ্য উত্তরসূরী। মাঝে ক্রিস গেইল- ড্যারেন ব্রাভোদের মাঝে তাদের ছায়া দেখলেও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট আর বোর্ডের আর্থিক দৈন্যতায় হারিয়ে গেলেন তারা।

গেইলের হয়তো জতীয় দলকে আরো অনেক কিছু দেয়ার ছিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেমন তাদের দাপট, টেস্ট-ওয়ানডে ফরম্যাটে ঠিক তার উল্টোটা। কিন্তু সম্প্রতি সম্ভাবনাময়ী একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারের আশাজাগানিয়া খেলা, উইন্ডিজ ক্রিকেট আবারো আপন জায়গায় ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর এ নতুন দিগন্তে মেরুন জার্সিয়ানদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাই দিয়েগো হোপ। তিনি উইন্ডিজ ক্রিকেটের নতুন নক্ষত্র।

বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, জো রুট ও বাবার আজমদের যুগে তাকে নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি হয় না। এখনকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের যে খ্যাতি তার বেশিরভাগটাই ওই কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের সৌজন্যে। কিন্তু এর বাইরেও ক্যারিবীয় শিবিরে এমন একজন ক্রিকেটার আছেন, যিনি টি-২০ ঝংকার থেকে বেশিরভাগ সময়ই দূরে থাকেন, তিনি হলেন হোপ। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মোটামুটি আলো ছড়ালেও রঙিন পোশাকের ৫০ ওভারের ফরম্যাটে দারুণ উজ্জ্বল। এখন পর্যন্ত ৮১ ওয়ানডেতে ৭৬ ইনিংসে খেলে ৫৩.৭৪ গড়ে ৩৫৪৭ রানই তার প্রমাণ। ১০টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ১৯টি হাফসেঞ্চুরি। সদ্য শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ওয়ানডেতে যথাক্রমে ১১০, ৮৪, ৬৪ ইনিংসে ২৫৮ রান করে হয়েছেন সিরিজ সেরা। সর্বশেষ ছয় ইনিংসে দু’টি সেঞ্চুরিসহ রয়েছে ৪টি অর্ধশতক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টানা ছয় ইনিংসে পঞ্চাশ কিংবা তারোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন এমন ক্রিকেটার আছেন নয়জন। স্বদেশি গেইল-গ্রিনিজও রয়েছেন এতে।

৩৪ টেস্টে দুই সেঞ্চুরি ও ৫ হাফসেঞ্চুরিতে ১৬০৩ রান হোপের। ১৩ টি-২০তে ১১ ইনিংসে দুই অর্ধশতকসহ করেছেন ২৫৮ রান। ২০১৬ সালে অভিষেকের পর থেকেই একদিনের ক্রিকেটে একপ্রকার রানমেশিন বলা চলে হোপকে। তার চোখ জুড়ানো কভার ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, গ্লান্স কিংবা লেট্ কাটে বিপক্ষ বোলিং দুমড়ে যায়। তার সাথে ধীর স্থির মানসিকতা নিয়ে ক্রিজে পৌঁছেন চার নম্বর জার্সিধারী।

চার বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তার প্রাপ্তিও কম নয়। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জন ক্যাম্পবেলের সাথে মিলে ওডিআই ক্রিকেট ইতিহাসে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ ৩৬৫ রানের পার্টনারশিপে অবদান রেখেছেন হোপ। যা এর আগে ছিল পাকিস্তানের ফখর জামান ও ইমাম-উল হকের (৩০৪)। সেই ম্যাচে ১৫২ বলে ক্যারিয়ের বেস্ট ১৭০ রান করেন ক্যারিবীয় উইকেটরক্ষক। কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডসকে (৪৮ ইনিংস) সরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্রুততম ২ হাজার রানের মালিকও হয়েছেন হোপ (৪৭ ইনিংস)। ২০১৭ সালে সে বছর উইজডেনের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকাতেও মনোনীত হন হন। ২০১৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন শাই হোপ। আইসিসির ২০২০ সালের বর্ষসেরা ওয়ানডে দলেও জায়গা পেয়েছেন তিনি।

১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণকারী হোপ পড়াশোনার জন্য একসময় পাড়ি দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। ক্লাব ক্রিকেট খেলতে খেলতে আশা ছিল ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে জড়ানোর। কিন্তু ভাগ্য নিজের ভিটে বার্বাডোজেই নিয়ে আসে ২৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে। তার বড় ভাই কাইল হোপও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন। এভিন লুইস, শিমরণ হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান ও কাইল মায়ার্সরা যদি সঙ্গ দিতে পারেন, তবে আবারো হাসবে উইন্ডিজ দ্বীপের ক্রিকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে নতুন তারকা হতে পারেন শাই হোপ।