এক দশকে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়। গুগল ক্রোমের ক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন দেখেছেন এর ব্যবহারকারীরা। ১০ বছর আগে ২ সেপ্টেম্বর গুগল তাদের ক্রোম ব্রাউজার প্রথম উন্মুক্ত করেছিল। ব্রাউজারের জগতে নতুন সংযোজন হিসেবে বাজারে ছাড়া হয় ওই ব্রাউজার। শুরুতে একে শুধু উইন্ডোজ প্ল্যাটফর্মে বেটা অ্যাপ হিসেবে চালু করা হয়। পরে ২০০৯ সালে লিনাক্স ও ম্যাকওএসে এটি চালু করা হয়।

এমন এক সময়ে গুগল এ ব্রাউজার চালু করে, যখন ডেভেলপার আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজার হিসেবে হতাশায় ভুগছিলেন। ওই সময়ে ফায়ারফক্স ব্রাউজার জনপ্রিয় হতে শুরু করেছিল।

গুগল তাদের এ ব্রাউজার তৈরিতে অ্যাপল ওয়েবকিট রেন্ডারিং ইঞ্জিনের টুলকিট ও মজিলার ফায়ারফক্সের টুলকিট ব্যবহার করে। এর ক্রোমিয়াম প্রকল্পের আওতায় সবার জন্যই ক্রোমের সোর্সকোড উন্মুক্ত রেখে দেয়। গুগল ওয়েব স্ট্যান্ডার্ড বা ওয়েবের মান ও এইচটিএমএল ৫-এর ওপর জোর দেয়। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারে ওয়েবের মান নিয়ে মাইক্রোসফট যখন লড়াই করছিল, গুগলের ওই পদক্ষেপ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়।

ক্রোমের প্রথম সংস্করণের আরেকটি ধারণার নাম ছিল ‘স্যান্ডবক্সিং’ নামের একক ব্রাউজার ট্যাব তৈরি, যাতে একটি ট্যাব ক্রাশ করলেও অন্য ট্যাবের কোনো সমস্যা না হয়। এতে ক্রোম ব্রাউজারের গতি ও স্থায়িত্ব বাড়ে। গুগলের ভি ৮ জাভাস্ক্রিপ্ট ইঞ্জিনের পাশাপাশি ওয়েবকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে কাজ করে গুগল।

এক দশক পরে এসে ওয়েব ব্রাউজারের জগতে রাজত্ব করছে গুগল ক্রোম। ডেস্কটপে প্রায় ৬০ শতাংশ বাজার দখল করেছে এ ব্রাউজার। গুগল ক্রোমের প্রকৌশলীরা এখনো হালনাগাদ ওয়েবের মান অনুযায়ী এর ফিচার উন্নত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

গুগল ক্রোম এখন অবশ্য শুধু আর ব্রাউজার হিসেবে গণ্য হয় না। ক্রোমকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনায় ধরা যায়, যা উইন্ডোজ, ম্যাকওএস, লিনাক্স, অ্যান্ড্রয়েড, এমনকি আইওএস প্ল্যাটফর্ম সমর্থন করে।

ক্রোম ওএসের কেন্দ্রে আছে ক্রোম। ক্রোম ওএস হচ্ছে গুগলের হালকা অপারেটিং সিস্টেম, যা ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়। যদিও ট্যাবলেটে জন্য ক্রোম ওএস পুরোপুরি প্রস্তুত নয়, তাই গুগল ক্রোম ওএসে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে লিনাক্স অ্যাপ ক্রোম ওএসে চলে আসবে।

গুগল অবশ্য দীর্ঘদিন ক্রোমের নকশায় পরিবর্তন নিয়ে আসেনি। তবে শিগগিরই ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন রিফ্রেশ নামের হালনাগাদ নকশা এতে যুক্ত হতে যাচ্ছে।

১০ বছর আগে শুধু ব্রাউজার হিসেবে শুরু হওয়া ক্রোমের ভবিষ্যৎ অনেকটাই কার্যকর প্ল্যাটফর্মের মতো দাঁড়াবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ওয়েব ডেভেলপারদের প্রাধান্যের কারণে এর ভবিষ্যৎ ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৬-এর মতো দাঁড়াতে পারে বলেও দুশ্চিন্তা রয়েছে। গুগলের প্রকৌশলীরা একে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে অন্য ব্রাউজার নির্মাতাদের ওপর চাপ বাড়ছে। গুগল ক্রোমকে ধরতে হলে আরও কাজ করতে হবে তাদের। যদি এক দশকেই একটি ব্রাউজার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে ওঠে, তবে পরবর্তী এক দশকে এতে আরও বিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here