ঢাকা ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক নজরে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট

Reporter Name

ঢাকাঃ

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেলে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের বাজেট বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি।

২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের এই অর্থ জোগান দিতে রাজস্ব, অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণের শরণাপন্ন হবে সরকার।

এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা, যা বিগত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের চেয়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি। মোট আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৬ হাজার কোটি টাকা।

বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) অনুমোদন হয়েছে এডিপি।

বাজেটের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ল
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাখাতে ৩২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রমসমূহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাখাতে এ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।

গত অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি। টাকার হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। করোনা মোকাবিলায় এবারও থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।

স্বাস্থ্যখাতের অর্জনসমূহকে টেকসই করা ও ভবিষ্যতে মহামারির অভিঘাত হতে পরিত্রাণ পাওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মানসম্পন্ন গবেষণাভিত্তিক স্বাস্থ্যশিক্ষার সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য আগামী অর্থবছরেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

টাকার অঙ্কে বাড়ল শিক্ষাখাতের বরাদ্দ
২০২১-২২ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরে দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৭১ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এবার দুই মন্ত্রণালয় ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ পেল। গত বছরের তুলনায় শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত অর্থবছরের থেকে এবার কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে ৮০৯ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সড়কপথের উন্নয়নে ৪৫২ প্রকল্প
দেশে সড়কপথের উন্নয়নে ৪৫২টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, একটি আধুনিক ও টেকসই মহাসড়ক সংযোগ গড়ে তোলার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। গত ১২ বছরে সরকার সড়কপথের উন্নয়নে ৩৩১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে ৪৫৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার এবং তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে এবং চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ইত্যাদি চার লেনে উন্নীত করার কাজ এগিয়ে চলছে।

গ্রামে বাড়ি বানাতে দিতে হবে কর
বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে শহরে বা গ্রামে যেকোনো জায়গায় বাড়ি করতে হলে টিআইএন নিতে হবে। এতে বাড়ির মালিক করের আওতায় আসবেন। এছাড়া যেকোনো সমবায় সমিতির নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ভ্যাট ফাঁকির জরিমানা কমছে
যারা ভ্যাট ফাঁকি দেয় তাদের জরিমানা কমিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল। তবে এর ফলাফল কী হবে তা তিনি সময়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান অতিরিক্ত কঠোর করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রায়োগিক জটিলতার সৃষ্টি করে, যা স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করে। এ কারণে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এ জরিমানা ও সুদের হার কমানোর প্রস্তাব করছি।’

করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা
২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার জন্য বিদ্যমান করহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে নতুন অর্থবছরেও ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকাই থাকছে।

নির্মাণসামগ্রীর দাম কমছে
প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক-কর কমানোর ফলে রড সিমেন্টসহ বেশ কিছু নির্মাণসামগ্রীর দাম কমছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটে সিমেন্ট ও স্টিল শিল্পে আগাম কর প্রত্যাহার করার কারণে সিমেন্ট, স্টিল, রড ইত্যাদি নির্মাণসামগ্রীর দাম কমছে। এবারের বাজেটে লৌহজাত পণ্য প্রস্তুতে ব্যবহার্য কতিপয় কাঁচামাল, স্ক্র্যাপ ভেসেল এবং পিভিসি, পিইটি রেইজিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ইথানেল গ্লাইকলসহ বিভিন্ন পণ্যে আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ-জ্বালানিখাত
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। এবার বরাদ্দের পরিমাণ বেড়েছে ৭২৬ কোটি টাকা।

বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী প্রস্তাব করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আগে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ছিল ১২ হাজার টাকা। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বয়স্ক ভাতায় নতুন করে যুক্ত হবেন ৮ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে বাল্যবিবাহ নির্মূলের পরিকল্পনাও রয়েছে বাজেটে।

কমছে কর্পোরেট কর
বাজেটে কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দুই লাখ টাকার কম সঞ্চয়পত্রে লাগবে না টিআইএন। বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়ের ১৫ শতাংশ করের প্রস্তাবও করা হয়েছে এই বাজেটে।

প্রবাসীদের প্রণোদনা
সেবার মান বাড়াতে রেলওয়েতে ৪৭ হাজার জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানীতে মেট্রো রেল চলবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এছাড়া প্রবাসীদের জন্য দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাড়ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি
করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বেড়ে যেতে পারে বলে এমন শঙ্কা শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের। বিষয়টি আমলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ঠেকাতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তুফা কামাল।

মোটরসাইকেল-মাইক্রোবাসের দাম কমবে
মহাসড়কে নসিমন, করিমন, আলমসাধু ও লেগুনার মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ যানবাহন নিরুৎসাহিত করে মাইক্রোবাসকে গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহারে উৎসাহী করা হচ্ছে। তাই বাজেটে মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহিত করবে সরকার।

ভূমিসেবা বাড়াতে ১৮ সফটওয়্যার
দেশে ভূমি সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা ১৮টি সফটওয়্যারের মাধ্যমে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, পর্চা সংগ্রহ, সব ধরনের সেবা দ্রুত এবং ভোগান্তিমুক্ত করার উদ্দেশ্যে সারা দেশে ‘‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’’ করা হবে। ভূমি সংক্রান্ত সব সেবা ১৮টি সফটওয়ারের মাধ্যমে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে।

আইন-বিচার বিভাগেও বরাদ্দ বেড়েছে
এছাড়া বিচার কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় দেশের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করা হবে। এবার আইন ও বিচার বিভাগে এক হাজার ৮১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

Tag :

About Author Information
Update Time : ০৯:২৮:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুন ২০২১
৪৪৪ Time View

এক নজরে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট

Update Time : ০৯:২৮:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুন ২০২১

ঢাকাঃ

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেলে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের বাজেট বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি।

২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের এই অর্থ জোগান দিতে রাজস্ব, অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণের শরণাপন্ন হবে সরকার।

এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা, যা বিগত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের চেয়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি। মোট আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৬ হাজার কোটি টাকা।

বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) অনুমোদন হয়েছে এডিপি।

বাজেটের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ল
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাখাতে ৩২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রমসমূহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাখাতে এ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।

গত অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি। টাকার হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। করোনা মোকাবিলায় এবারও থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।

স্বাস্থ্যখাতের অর্জনসমূহকে টেকসই করা ও ভবিষ্যতে মহামারির অভিঘাত হতে পরিত্রাণ পাওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মানসম্পন্ন গবেষণাভিত্তিক স্বাস্থ্যশিক্ষার সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য আগামী অর্থবছরেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

টাকার অঙ্কে বাড়ল শিক্ষাখাতের বরাদ্দ
২০২১-২২ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরে দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৭১ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এবার দুই মন্ত্রণালয় ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ পেল। গত বছরের তুলনায় শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত অর্থবছরের থেকে এবার কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে ৮০৯ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সড়কপথের উন্নয়নে ৪৫২ প্রকল্প
দেশে সড়কপথের উন্নয়নে ৪৫২টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, একটি আধুনিক ও টেকসই মহাসড়ক সংযোগ গড়ে তোলার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। গত ১২ বছরে সরকার সড়কপথের উন্নয়নে ৩৩১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে ৪৫৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার এবং তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে এবং চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ইত্যাদি চার লেনে উন্নীত করার কাজ এগিয়ে চলছে।

গ্রামে বাড়ি বানাতে দিতে হবে কর
বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে শহরে বা গ্রামে যেকোনো জায়গায় বাড়ি করতে হলে টিআইএন নিতে হবে। এতে বাড়ির মালিক করের আওতায় আসবেন। এছাড়া যেকোনো সমবায় সমিতির নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ভ্যাট ফাঁকির জরিমানা কমছে
যারা ভ্যাট ফাঁকি দেয় তাদের জরিমানা কমিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল। তবে এর ফলাফল কী হবে তা তিনি সময়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান অতিরিক্ত কঠোর করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রায়োগিক জটিলতার সৃষ্টি করে, যা স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করে। এ কারণে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এ জরিমানা ও সুদের হার কমানোর প্রস্তাব করছি।’

করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা
২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার জন্য বিদ্যমান করহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে নতুন অর্থবছরেও ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকাই থাকছে।

নির্মাণসামগ্রীর দাম কমছে
প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক-কর কমানোর ফলে রড সিমেন্টসহ বেশ কিছু নির্মাণসামগ্রীর দাম কমছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটে সিমেন্ট ও স্টিল শিল্পে আগাম কর প্রত্যাহার করার কারণে সিমেন্ট, স্টিল, রড ইত্যাদি নির্মাণসামগ্রীর দাম কমছে। এবারের বাজেটে লৌহজাত পণ্য প্রস্তুতে ব্যবহার্য কতিপয় কাঁচামাল, স্ক্র্যাপ ভেসেল এবং পিভিসি, পিইটি রেইজিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ইথানেল গ্লাইকলসহ বিভিন্ন পণ্যে আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ-জ্বালানিখাত
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। এবার বরাদ্দের পরিমাণ বেড়েছে ৭২৬ কোটি টাকা।

বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী প্রস্তাব করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আগে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ছিল ১২ হাজার টাকা। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বয়স্ক ভাতায় নতুন করে যুক্ত হবেন ৮ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে বাল্যবিবাহ নির্মূলের পরিকল্পনাও রয়েছে বাজেটে।

কমছে কর্পোরেট কর
বাজেটে কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দুই লাখ টাকার কম সঞ্চয়পত্রে লাগবে না টিআইএন। বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়ের ১৫ শতাংশ করের প্রস্তাবও করা হয়েছে এই বাজেটে।

প্রবাসীদের প্রণোদনা
সেবার মান বাড়াতে রেলওয়েতে ৪৭ হাজার জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানীতে মেট্রো রেল চলবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এছাড়া প্রবাসীদের জন্য দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাড়ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি
করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বেড়ে যেতে পারে বলে এমন শঙ্কা শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের। বিষয়টি আমলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ঠেকাতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তুফা কামাল।

মোটরসাইকেল-মাইক্রোবাসের দাম কমবে
মহাসড়কে নসিমন, করিমন, আলমসাধু ও লেগুনার মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ যানবাহন নিরুৎসাহিত করে মাইক্রোবাসকে গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহারে উৎসাহী করা হচ্ছে। তাই বাজেটে মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহিত করবে সরকার।

ভূমিসেবা বাড়াতে ১৮ সফটওয়্যার
দেশে ভূমি সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা ১৮টি সফটওয়্যারের মাধ্যমে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, পর্চা সংগ্রহ, সব ধরনের সেবা দ্রুত এবং ভোগান্তিমুক্ত করার উদ্দেশ্যে সারা দেশে ‘‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’’ করা হবে। ভূমি সংক্রান্ত সব সেবা ১৮টি সফটওয়ারের মাধ্যমে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে।

আইন-বিচার বিভাগেও বরাদ্দ বেড়েছে
এছাড়া বিচার কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় দেশের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করা হবে। এবার আইন ও বিচার বিভাগে এক হাজার ৮১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।