এখনো অভিভাবকহীন মগবাজার–মৌচাক উড়ালসড়ক
সবুজদেশ ডেক্সঃ বছরখানেক ধরে ‘অভিভাবকহীন’ অবস্থায় রয়েছে মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক। দুই সিটি করপোরেশনের তা বুঝে নেওয়ার কথা থাকলেও তারা এখনো তা বুঝে নেয়নি। দেখাশোনার নির্দিষ্ট কেউ না থাকায় উড়ালসড়কের নানান অব্যবস্থাপনা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া এর নিচের জায়গা প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছে ডিএসসিসি।
অব্যবস্থাপনার কারণে উড়ালসড়কের সংকেতবাতি কয়েক দফা চুরি হয়েছে। সড়কবাতির তার চুরি হয়েছে কিছুদিন আগে। ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে যানবাহনকে। উড়ালসড়কের নিচে মালিবাগ রেলগেট থেকে মৌচাক, মৌচাক থেকে মগবাজার এবং মালিবাগ মোড়ের বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনার স্তূপ জমেছে। কোথাও আছে অবৈধ দখল। কোথাও বসেছে রিকশা, ভ্যান ও গাড়ি মেরামতের কারখানা।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পুরো উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর মধ্যে কয়েক দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। এর বিভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে উদ্বোধন করা হয়। ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত উড়ালসড়কটি গত অক্টোবরে যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা এবং উড়ালসড়ক প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বলেন, উড়ালসড়কসহ এর নিচের সড়ক বিভাজকের দেখভালের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার কথা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। গত বছরের সেপ্টেম্বরেই এলজিইডির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। উদ্বোধনের পর প্রকল্পের পক্ষ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্য দুই সিটি করপোরেশন বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। এর দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণও ডিএসসিসিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো তা বুঝে নেয়নি।
প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসড়কটির বেশির ভাগ অংশই ডিএসসিসিতে পড়েছে। কেবল মালিবাগ থেকে চৌধুরীপাড়ার আবুল হোটেল পর্যন্ত অংশ, মগবাজার মোড় থেকে সাতরাস্তা, এফডিসি থেকে সোনারগাঁও হোটেল মোড় পর্যন্ত অংশ ডিএনসিসিতে পড়েছে।
ডিএসসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উড়ালসড়কের ব্যবস্থাপনা, কারিগরি দিক, পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে দেখভাল করার জন্য ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের প্রতিবেদন দিতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগে। বিভিন্ন কমিটি গঠন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়াসহ নানা দীর্ঘসূত্রতার কারণে এখনো উড়ালসড়কের দায়িত্ব বুঝে নিতে পারছে না সংস্থা দুটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উড়ালসড়কের নিচে মালিবাগ রেলগেট থেকে মৌচাক, মগবাজার এবং মালিবাগ মোড়ের বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনার স্তূপ জমেছে। কোথাও আছে অবৈধ দখল। উড়ালসড়কের নিচে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য গাছ রোপণ করার কথা। কিছু কিছু গাছের চারা দেখাও যায়। কিন্তু যত্নের অভাবে এগুলো ধুলায় মলিন এবং অনেকগুলো গাছ মরে গেছে।
তবে গত বছরের শেষে মালিবাগ মোড়ে নকশার বাইরে উড়ালসড়কের নিচে একটি সিঁড়ি তৈরি করা হয়। বলা হয়, উড়ালসড়কের ট্রাফিক পুলিশের ওঠানামার জন্য এই সিঁড়ি ব্যবহার করা হবে। কিছুদিন আগে এই সিঁড়ির কাছেই আরেকটি স্থাপনা তৈরি হতে দেখা যায়।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল প্রথম আলোকে বলেন, মালিবাগ-মৌচাক উড়ালসড়কের ওপরের ট্রাফিক ব্যবস্থা, নিচের পার্কিং এলাকা, সড়ক বিভাজকের দেখভাল, ওপরে পানি জমাসহ আরও বেশ কিছু কারিগরি দিক কে বুঝে নেবে, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এখনো বাকি আছে। উড়ালসড়কের কাজ শেষে এলজিইডি সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব বুঝে নিতে বলেছে। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্য গঠন করা কমিটিগুলো মাসখানেক আগে তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে কিছু ফলাফল আছে, যেসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত লাগবে। তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করতে বলেছি। কারণ, উড়ালসড়কের দেখভালের জন্য প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বসবে। এরপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা উড়ালসড়কের দায়িত্ব বুঝে নিতে পারব।’
তবে কবে নাগাদ মন্ত্রণালয় এ নিয়ে সভায় বসতে পারে, তা ডিএসসিসি জানে না বলে তিনি জানান।
আর ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘উড়ালসড়কের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে চিঠিপত্র দেখে বলতে পারব। কিন্তু বুঝিয়ে নেওয়ার জন্য অন্য যেসব আনুষ্ঠানিকতা করার দরকার, তা হয়নি। এ কারণে ডিএনসিসি এখনো উড়ালসড়কের দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেনি।’