বিশেষ প্রতিনিধিঃ

‘করোনাকালীন সময়ে, সরকারী চাকুরে বাদে অন্য সব শ্রেণি পেশার মানুষের স্বাভাবিক আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এ ধাক্কায় অন্যদের মতো চরম বিপাকে পড়েন মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমগণ। ইমামতি করার সুবাদে মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের দুঃখ-দুর্দশা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। লকডাউনের পূর্বে মসজিদ থেকে পাওয়া সামান্য বেতন ও টিউশুনির অর্থে সংসার চালাতেন তারা। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে টিউশুনি থেকে আয়ের সেই পথ পুরাপুরি রুদ্ধ হয়ে যায়। প্রথমত তাদের কথা চিন্তা করে নিজের জমানো সামান্য অর্থ দিয়ে এবছর রমজান মাসে বাছাই করে অল্প কয়েকজনকে খাদ্য সামগ্রী ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দিয়ে সহয়তা করি। সহায়তা করতে গিয়ে নজরে আসে সমাজের বড় একটি অংশ বেশ দুর্বীসহ জীবন যাপন করছেন। তাদের নিয়ে ফেসবুকে পরপর কয়েকটি পোস্ট দেই। সেই পোস্টগুলোতে বেশ সাড়া মেলে। আর্থিক সহায়তার হাত বাড়ান অনেকে। পরবর্তীতে অন্যের সহযোগিতায় কমপক্ষে সাড়ে ৫’শ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ হয় এবং যা এখনও চলমান রয়েছে।’ কথাগুলো বলছিলেন তরুন সমাজ সেবক, ইমাম মুফতি ফারুক নোমানী।

নোমানী ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদবা গ্রামের শাহ জাহান আলীর ছেলে। তিনি কওমী মাদরাসা বোর্ড থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস এবং উচ্চতর ফেকাহ ও ফতোয়া প্রদানের বিশেষ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে কালীগঞ্জ জামিয়তুল ইসলামীয়া কাসিমুল উলুম কওমী মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত ও বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নোমানী জানান, লক ডাউনের শুরু থেকে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম পরিবারে কয়েকদিনের খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিতরণ বিতরন করি। এ পরিবারগুলোতে সহায়তা পৌঁছে দিতে গিয়ে অন্যদের দুঃখ দূর্দশা নজরে আসে। এ নিয়ে ফেসবুকে কয়েকটি পোস্ট দিলে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে তাদের আর্থিক সহায়তায় দিনমজুর, বিধাবা, অবহেলিত বয়স্ক মানুষ, অসহায় প্রতিবন্ধী, হরিজন সম্প্রদায় ও বেদে সম্প্রদায়ের অস্বচ্ছল মানুষের বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ বিতরন করি। রমজানের শুরুতেই ৫শতাধিক পরিবার ও শেষের দিকে কমপক্ষে ৫০টি পরিবারে ঈদ সামগ্রী প্রদান করা হয়। এছাড়া সুপার সাইক্লোন আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ, গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহনির্মাণ, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ মসজিদের জন্যে আর্থিক সহযোগিতাসহ বেকার যুবকের ভ্যান, অসহায় দুইজন নারীকে সেলাই মেশিন ও কাপড় কিনে দেয়া হয়। তিনি জানান, শুরুর দিকে তিনিসহ কয়েকজন তরুন আলেম করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফনের ব্যবস্থাও করেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নোমানী বলেন, তার এই সামাজিক কাজে হাফেজ মাওলানা নাজির আহমাদ, মাওলানা আবদুর রউফ, হাফেজ মাওলানা আবু রায়হান, আবু দারদা, হাফেজ মাওলানা মারুফ বিল্লাহসহ অনেকে সহযোগিতা করায় তিনি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন।

‘লকডাউন উঠে যাওয়ার পর এখন কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে নোমানী বলেন, এখন অসহায় মানুষদের রোজগারের পথ সচল রাখতে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছি। সম্প্রতি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার পানিবন্ধী ধাপুয়া পাড়া গ্রামে মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া নিজের গড়া সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদবী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপন ও রক্তদান কর্মসূচী চলমান রয়েছে তিনি জানান।

উপজেলার শিবনগর এলাকার এক মন্দিরের সভাপতি নিখিল জানান, লকডাউনের সময় ইমাম (নোমানী) সাহেব নিজে আমাদের বাড়িতে এসে প্রায় এক সপ্তাহের খাদ্য সামগ্রী দিয়ে যান। খুব ভালো মানুষ উনি।

মহেশপুর উপজেলার গড়াবাড়িয়া গ্রামের দুঃস্থ শামছুল হকের কণ্যা শিউলী খাতুন জানান, ইমাম সাহেব একটি সেলাই মেশিন ও কিছু কাপড় কিনে দিয়ে গিয়েছেন। কাজ শেখার চেষ্টা করছি। আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যে ভালো রোজগার করতে পারবো।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন ও জিনিয়াস ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ও ১ টাকার জীবনের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তফা ইবনে মাসুদ বলেন, করোনাকালীন সময়ে ইমাম ফারুক নোমানী যেভাবে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। একজন ইমাম হয়ে তিনি যেভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা সকলের জন্যই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার এই মানবিক কার্যক্রম অন্যান্য সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর প্রেরণা হয়ে থাকবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here