ঢাকা ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনাভাইরাস: কীভাবে ঘরেই কোয়ারেন্টিন তৈরি করবেন

Reporter Name

সবুজদেশ ডেস্কঃ

শুধু হাসপাতালেই নয় ঘরের মধ্যেও কোয়ারেন্টিন হচ্ছেন করোনাভাইরাসে ঝুঁকিতে থাকা মানুষ। একে বলা হচ্ছে সেলফ কোয়ারেন্টিন। সংক্রমণ রোধে নিজেকে নিজেই আটকে রাখা। অনলাইনের মাধ্যমেই সাড়া হবে জরুরি কর্মকাণ্ড। যেমন এর মধ্যে গুগল, ফেসবুক তাদের কর্মীদের ঘরে বসে অফিস করার প্রতি উৎসাহ দিচ্ছে। আবার টুইটার সব কর্মীকে নির্দেশ দিয়েছে ঘরে বসেই অফিসের কাজ সারতে।

ইতিমধ্যে পুরো ইতালিকে কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যেক বাসিন্দা ঘরের মধ্যে সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। চীনের পর সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে দেশটিতে।

কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন এবং সোশ্যাল ডিসটেনস:

কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন এবং সোশ্যাল ডিসটেনস- এ তিনভাবে সাধারণ মানুষ থেকে নিজেকে দূরে রেখে সংক্রমণ রোধ করা যায়। মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর প্রটোকল এই তিন পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছে এই ভাবে:

সোশ্যাল ডিসটেনস: মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সীমিত করে ফেলা। সামাজিকভাবে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়া। আড্ডা, বৈঠক, অনুষ্ঠান, সমাবেশে অংশ গ্রহণ না করে। মূলত যেখানে ভিড় হয় এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থান থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

কোয়ারেন্টিন: কোনো ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের আগে কিংবা উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার আগে নিজেকে আবদ্ধ স্থানে আটকে ফেলা। যার মানে তাকে মানুষ থেকে আলাদা করে ফেলা হবে। শুরুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই কাজটা করলেও এখন নিজে নিজেকে কোয়ারেন্টিনের ঘটনা বাড়ছে। মূলত আক্রান্ত কোনো রোগীর সংস্পর্শে আসলে ওই ব্যক্তি এমন পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন। নিজের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কী না, সেটি পর্যবেক্ষণ করা। যারা পূর্ববর্তী অন্যান্য গুরুতর রোগের কারণে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারাও কোয়ারেন্টিনে থাকবে।

আইসোলেশন:  আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতাল নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা। যারা এখনো সুস্থ এবং ভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম তাদের কাছ থেকে আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।

কীভাবে কোয়ারেন্টিনের প্রস্তুতি নেবেন?

টয়লেট টিস্যু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পানির বোতল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ছাড়াও কোয়ারেন্টিন প্রস্তুত করার জন্য আরও বেশি কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও), সিডিসিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেগুলো তুলে ধরা হলো- 

শুরুতে ফ্লু থেকে নিয়ে সতর্কতা: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম, তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। এ ক্ষেত্রে সাধারণ বা নিয়মিত ফ্লু থেকে মুক্ত যে কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শক্তিশালী। তবে ফ্লু হলেই সতর্ক থাকতে হবে। ফ্লু সম্পর্কে সচেতন থাকলে করোনায় আতঙ্ক ভুগবে না মানুষ। এতে সাধারণ সর্দি কাশির জন্য হাসপাতালে ভিড় করবে না। শুধু নিজের ক্ষেত্রেই নয় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও ফ্লু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। ফ্লু যাতে দ্রুত সেরে যায় সে চেষ্টা করতে হবে, তাহলে করোনাভাইরাস আপনাকে আক্রমণ করছে না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

যেসব পণ্য-দ্রব্য সংরক্ষণে রাখবেন: কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য টয়লেট পেপার এবং খাবার সংরক্ষণে বেশি জরুরি। তবে যেখানে পানির কোনো সংকট নেই, সেখানে টয়লেট পেপার সংরক্ষণে রাখা খুব একটি জরুরি না। তবে মানুষের সংস্পর্শ থেকে আপনাকে দূরে থাকতে হবে, সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহে রাখতে হবে আপনাকে।

*অন্তত ৩০ দিনের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, পেইন কিলার, ঠাণ্ডাজনিত অসুখের জন্য ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে।

*হাত পরিষ্কার করার জন্য সাধারণ সাবান ও টিস্যু নিতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার খুব একটু জরুরি নয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন, বাচ্চাদের জন্য ডায়াপার, স্কিনকেয়ার, কন্ডিশনার এগুলোও রাখতে হবে।

*খাবারের মধ্যে চাল, ডাল, ক্যানড ফিশ, তেল, লবণ, মসলা নিতে হবে। ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন মাংস, ডিম, সবজি, ফলফলাদি। তবে মাছ বেশি দিন রাখলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। *এ ছাড়া চা, কফি পানীয়, বিস্কুট, বাদামজাতীয় খাবার রাখতে পারেন।

যেভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন

*খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। নিয়মিত পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে। ভিডিও কনফারেন্সে বা অনলাইনে কাজ সেরে ফেলার চেষ্টা করতে হবে

*গৃহস্থালি কাজ কমিয়ে দিতে হবে। যদিও বিষয়টি মেনে চলা একটি কঠিন। এরপরেও দোকানে, লন্ড্রিতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। থালা-বাসন পরিষ্কার করাসহ অন্যান্য কাজ কমিয়ে দিতে হবে। রুটিন কাজ সীমিত করতে হবে। তবে শোয়ার আগে বিছানা পরিষ্কার করতে হবে অবশ্যই।

*কোয়ারেন্টিনে থাকলেই যে আপনি একেবারে ঘর থেকে বের হতে পারবেন না, তেমন কিন্তু নয়। পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে আপনার দেখা করা প্রয়োজন হতে পারে, জরুরি যে কোনো কাজেই আপনি বের হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে খুব সীমিত আকারে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধোয়া এবং মুখে মাস্ক পরার নিয়ম মেনে চলতে হবে। তবে এটি এও মনে রাখতে হবে যে, সুস্থ মানুষের জন্য মাস্ক ব্যবহার জরুরি নয়।

সূত্র: সিএনইটি

About Author Information
আপডেট সময় : ০৭:১৪:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০
৩৯১ Time View

করোনাভাইরাস: কীভাবে ঘরেই কোয়ারেন্টিন তৈরি করবেন

আপডেট সময় : ০৭:১৪:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০

সবুজদেশ ডেস্কঃ

শুধু হাসপাতালেই নয় ঘরের মধ্যেও কোয়ারেন্টিন হচ্ছেন করোনাভাইরাসে ঝুঁকিতে থাকা মানুষ। একে বলা হচ্ছে সেলফ কোয়ারেন্টিন। সংক্রমণ রোধে নিজেকে নিজেই আটকে রাখা। অনলাইনের মাধ্যমেই সাড়া হবে জরুরি কর্মকাণ্ড। যেমন এর মধ্যে গুগল, ফেসবুক তাদের কর্মীদের ঘরে বসে অফিস করার প্রতি উৎসাহ দিচ্ছে। আবার টুইটার সব কর্মীকে নির্দেশ দিয়েছে ঘরে বসেই অফিসের কাজ সারতে।

ইতিমধ্যে পুরো ইতালিকে কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যেক বাসিন্দা ঘরের মধ্যে সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। চীনের পর সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে দেশটিতে।

কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন এবং সোশ্যাল ডিসটেনস:

কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন এবং সোশ্যাল ডিসটেনস- এ তিনভাবে সাধারণ মানুষ থেকে নিজেকে দূরে রেখে সংক্রমণ রোধ করা যায়। মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর প্রটোকল এই তিন পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছে এই ভাবে:

সোশ্যাল ডিসটেনস: মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সীমিত করে ফেলা। সামাজিকভাবে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়া। আড্ডা, বৈঠক, অনুষ্ঠান, সমাবেশে অংশ গ্রহণ না করে। মূলত যেখানে ভিড় হয় এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থান থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

কোয়ারেন্টিন: কোনো ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের আগে কিংবা উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার আগে নিজেকে আবদ্ধ স্থানে আটকে ফেলা। যার মানে তাকে মানুষ থেকে আলাদা করে ফেলা হবে। শুরুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই কাজটা করলেও এখন নিজে নিজেকে কোয়ারেন্টিনের ঘটনা বাড়ছে। মূলত আক্রান্ত কোনো রোগীর সংস্পর্শে আসলে ওই ব্যক্তি এমন পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন। নিজের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কী না, সেটি পর্যবেক্ষণ করা। যারা পূর্ববর্তী অন্যান্য গুরুতর রোগের কারণে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারাও কোয়ারেন্টিনে থাকবে।

আইসোলেশন:  আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতাল নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা। যারা এখনো সুস্থ এবং ভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম তাদের কাছ থেকে আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।

কীভাবে কোয়ারেন্টিনের প্রস্তুতি নেবেন?

টয়লেট টিস্যু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পানির বোতল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ছাড়াও কোয়ারেন্টিন প্রস্তুত করার জন্য আরও বেশি কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও), সিডিসিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেগুলো তুলে ধরা হলো- 

শুরুতে ফ্লু থেকে নিয়ে সতর্কতা: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম, তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। এ ক্ষেত্রে সাধারণ বা নিয়মিত ফ্লু থেকে মুক্ত যে কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শক্তিশালী। তবে ফ্লু হলেই সতর্ক থাকতে হবে। ফ্লু সম্পর্কে সচেতন থাকলে করোনায় আতঙ্ক ভুগবে না মানুষ। এতে সাধারণ সর্দি কাশির জন্য হাসপাতালে ভিড় করবে না। শুধু নিজের ক্ষেত্রেই নয় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও ফ্লু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। ফ্লু যাতে দ্রুত সেরে যায় সে চেষ্টা করতে হবে, তাহলে করোনাভাইরাস আপনাকে আক্রমণ করছে না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

যেসব পণ্য-দ্রব্য সংরক্ষণে রাখবেন: কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য টয়লেট পেপার এবং খাবার সংরক্ষণে বেশি জরুরি। তবে যেখানে পানির কোনো সংকট নেই, সেখানে টয়লেট পেপার সংরক্ষণে রাখা খুব একটি জরুরি না। তবে মানুষের সংস্পর্শ থেকে আপনাকে দূরে থাকতে হবে, সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহে রাখতে হবে আপনাকে।

*অন্তত ৩০ দিনের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, পেইন কিলার, ঠাণ্ডাজনিত অসুখের জন্য ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে।

*হাত পরিষ্কার করার জন্য সাধারণ সাবান ও টিস্যু নিতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার খুব একটু জরুরি নয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন, বাচ্চাদের জন্য ডায়াপার, স্কিনকেয়ার, কন্ডিশনার এগুলোও রাখতে হবে।

*খাবারের মধ্যে চাল, ডাল, ক্যানড ফিশ, তেল, লবণ, মসলা নিতে হবে। ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন মাংস, ডিম, সবজি, ফলফলাদি। তবে মাছ বেশি দিন রাখলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। *এ ছাড়া চা, কফি পানীয়, বিস্কুট, বাদামজাতীয় খাবার রাখতে পারেন।

যেভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন

*খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। নিয়মিত পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে। ভিডিও কনফারেন্সে বা অনলাইনে কাজ সেরে ফেলার চেষ্টা করতে হবে

*গৃহস্থালি কাজ কমিয়ে দিতে হবে। যদিও বিষয়টি মেনে চলা একটি কঠিন। এরপরেও দোকানে, লন্ড্রিতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। থালা-বাসন পরিষ্কার করাসহ অন্যান্য কাজ কমিয়ে দিতে হবে। রুটিন কাজ সীমিত করতে হবে। তবে শোয়ার আগে বিছানা পরিষ্কার করতে হবে অবশ্যই।

*কোয়ারেন্টিনে থাকলেই যে আপনি একেবারে ঘর থেকে বের হতে পারবেন না, তেমন কিন্তু নয়। পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে আপনার দেখা করা প্রয়োজন হতে পারে, জরুরি যে কোনো কাজেই আপনি বের হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে খুব সীমিত আকারে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধোয়া এবং মুখে মাস্ক পরার নিয়ম মেনে চলতে হবে। তবে এটি এও মনে রাখতে হবে যে, সুস্থ মানুষের জন্য মাস্ক ব্যবহার জরুরি নয়।

সূত্র: সিএনইটি