ঢাকা ০৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় মৃত হিন্দু যুবকের সৎকার করলেন তিন মুসলমান শিক্ষার্থী

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৪০:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১
  • ৩৫৩ Time View

সাতক্ষীরাঃ

আতঙ্কিত স্ত্রী তার দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন রাতেই। আশপাশের আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীরাও গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। নিজ ঘরে পড়ে থাকা লাশের ধারেকাছেও কেউ আসেনি। ততক্ষণে লাশ পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে।

অবশেষে ১৫ ঘণ্টা পর খবর পেয়ে শ্যামনগর মহসীন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী হাফিজ, মিলন ও জামাল বাদশা জাতি-ধর্ম বিবেচনায় না এনে সৎকার করলেন করোনায় মৃত হিন্দু যুবক বিধান চন্দ্র মণ্ডলের।

শুক্রবার তারা অসাম্প্রদায়িকতার এ বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের গৌরীপুর গ্রামে।

এলাকাবাসী জানান, গৌরীপুর গ্রামের দিনমজুর বিধান চন্দ্র মণ্ডল (৩৭) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কয়েক দিন পর তাকে বাড়িতে নিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে রেখে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতেই মারা যান বিধান।

গ্রামবাসী জানান, চোখের সামনে তার মৃত্যু দেখেই আতঙ্কিত স্ত্রী শৈব রানী মণ্ডল বাড়ি থেকে পালিয়ে যান তার দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে। খবর পেয়ে প্রতিবেশী স্বজনরাও লাশের সৎকার করার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। রাতভর তার লাশ পড়ে থাকে ঘরেই।

শুক্রবার সকালে এ খবর আসে শ্যামনগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিওর কাছে। এই সংগঠনের তিন কলেজ শিক্ষার্থী যুবক জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিবেচনায় না এনে বিধানের লাশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘর থেকে বের করে আনেন। তারাই তাকে নিয়ে যান একটি শ্মশানের ধারে। পরে বিধান চন্দ্র মণ্ডলের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানেই মাটি খুঁড়ে শায়িত করেন তার লাশ।

তারা জানান, মৃত্যুর আগে বিধান চন্দ্র বলেছিলেন- তাকে আগুনে দাহ না করে মাটিচাপা দিয়ে সমাধি দিতে।

এ ঘটনা জানাজানি হতেই হাফিজ, মিলন ও জামাল বাদশাকে এলাকাবাসী ধন্যবাদ দিয়ে বলেন- তারা অসাম্প্রদায়িকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন বলেন, বিধানের লাশের সৎকার হচ্ছে না জানতে পেরে তিনি ও অধ্যক্ষ জাফরুল্লাহ বাবু হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের অনুরোধ করেন। তারা কেউই রাজি না হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিওর তিন মুসলিম যুবক তার সৎকার করেছেন।

তিনি আরও জানান, মৃত্যুর আগে তিনি বলেছিলেন- তাকে আগুনে দাহ না করে সমাধি দিতে। তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে মাটি খুঁড়ে সমাধি দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কলেজছাত্র হাফিজ, মিলন ও জামাল বাদশা অসাম্প্রদায়িকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সবুজদেশ/এসইউ

Tag :