ঢাকা ০৯:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় সময় কাঁটছে ছাদে ঘুড়ি উড়িয়ে

Reporter Name

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

যশোর সার্কিট হাউজ পাড়ার ফাহিম, রাসেল, মিলন, সাকিব সকলেই বাল্য বন্ধু। স্ব-স্ব কর্মেই ব্যস্ত। তবে করোনার কারণে সবাই আজ নিজ গৃহে বন্দি। করোনায় অফিস-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ থাকায় পড়ন্ত বিকালে ঘুড়ি আর নাটাই নিয়েই সময় কাটছে তাদের। বন্ধুরা সব একত্র হয়ে উঠে পড়েন যেকোন এক বন্ধুর বাড়ি ছাঁদে। বিকেল হলেই যেন বাড়ির ছাঁদেই চলে ঘুড়ি উৎসব। ঘুড়ির সুতোয় কাটাকাটি খেলে কিংবা দূর আকাশে ঘুড়ি পাঠিয়ে এ যেন করোনাকালীন ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করার ফিরে যান শৈশবে। বিকেল হলেই যশোরে অধিকাংশ ভবনের ছাঁদ এবং মাঠে-ময়দানে দেখা যাচ্ছে রঙবে রঙয়ের ঘুড়ি ওড়ানোর দৃষ্ট। অনেকেই আবার ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ফেসবুকেও ছবি আপলোড করছেন।

ঘুড়ি প্রেমিরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি কবে হবে তা বলা যাচ্ছে না। আবার বাসায় দীর্ঘদিন অবস্থান করার ফলে অনেকের মধ্যেই ক্লান্তি ও অবসাদ ভর করছে। অনেকেই ঘুড়ি উড়িয়ে সেই ক্লান্তি ও অবসাদ মুছে ফেলতে চাইছেন। মুক্ত আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে বদ্ধ হয়ে থাকা এক মানসিক যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মেলছে। অন্যদিকে করোনার কারণে এক দিকে যেমন ঘুড়ি বেচাকেনা বেড়েছে তেমনি দোকানপাট বন্ধ থাকায় পর্যাপ্ত কাগজ, সুতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় ঘুড়ি উৎপাদন হচ্ছে কম এবং দাম আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ।

জানা যায়, ঘুড়ি উড়ানো এদেশে ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। মুঘল আমল থেকে খোলা মাঠে ঘুড়ি উড়ানো হত। কিন্তু ব্যস্ততার যাতাকলে পিষ্ট নাগরিক জীবনে ঘুড়ি উড়ানোর প্রবণতা কমেছে। ফলে কালে বির্বতনে প্রাচীন এ ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধিতে মানুষ ঘরে অলস সময় পার করছে। তাইতো শহরে মানুষের একটু অন্য রকম বিনোদনের খোরাক হিসেবে বিকাল বেলায় ছাঁদে ঘুড়ি উড়াছেন তারা। দোকানে ক্রেতা ঘুড়ি কিনতে না পারাই অনেকে বাড়িতে ঘুড়ি তৈরি করছে পাতলা কাগজ বা পলিথিন দিয়ে। ছোটরা পলিথিনের ব্যাগ কেটে নারকেল পাতার শলা দিয়ে ঘুড়ি তৈরি করছে। আর বড়দের জন্য দোকানীরা পাতলা কাগজ ও বাঁশের পাতলা চটা দিয়ে ঘুড়ি তৈরি করে। তবে ঘুড়ি বাহারি রকম নাম রয়েছে। যেমন চোখদ্বার, মালাদ্বার, পঙ্খীরাজ, চশমাদ্বার, কাউঠাদ্বার, চাপালিশ, চানদ্বার, এক রঙা ইত্যাদি নামের ঘুড়ি।

শহরের কারবালা এলাকায় ঘুড়ি উড়াতে দেখা যায় শিক্ষক পলাশ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ‘ছোট বেলায় গ্রামে বন্ধুদের সাথে মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম। কিন্তু প্রযুক্তির দাপটে এখন ঘুড়ি উড়ানোর চলন নেই বললেই চলে। ফলে ছেলে মেয়েরা ঘরের মধ্যে ভিডিও গেমস খেলে সময় পার করে। অনেক দিন পরে ছেলে-মেয়েদের সাথে ঘুড়ি উড়াচ্ছি। সেই ছোট বেলার অনেক পুরানো স্মৃতি মনে পড়ছে’।

সার্কিট হাউজ পাড়ার সাকিব মাহমুদ জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ঘুড়ি বা যেকোন খেলার করার সময় পায়না। করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু বন্ধ থাকায় সব বন্ধুরা মিলে ছাঁদে ঘুড়ি উড়াচ্ছি নিয়মিত। করোনা যেন স্কুল জীবনের স্মৃতিতে ফিরিয়ে দিয়েছে।

শহরের বারান্দী পাড়ার ঘুড়ি কারিগর ফয়সাল ইসলাম বলেন, ‘যশোরের বিগত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ ঘুড়ি চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাজারে প্রর্যাপ্ত কাগজ ও সুতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে কম। অন্যদিকে যা কয়েকটা কাগজ ও সুতা পাওয়া যাচ্ছে তার দামও অনেক। ফলে দোকানীদের কাছে আগে যেখানে বিক্রয় করা হতো ৩ শ’ টাকা । সেখানে বিক্রি করতে হচ্ছে এখন ৭ শ’ টাকা।

যশোরে প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ছোটবেলায় যেমন ঘুড়ি উড়াতাম, একালে আর ঘুড়ি উড়তে দেখা যায় না। করোনার কারণে অফিস আদালত ও স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় সব বয়সীরা বিকেল হলেই পরিবারের ছোট-বড়রা মিলে বাড়ির ছাঁদে ঘুড়ি উড়াচ্ছে। ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের বদঅভ্যাস থেকে দূরে রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:৫৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ মে ২০২০
৬৯৭ Time View

করোনায় সময় কাঁটছে ছাদে ঘুড়ি উড়িয়ে

আপডেট সময় : ০৯:৫৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ মে ২০২০

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

যশোর সার্কিট হাউজ পাড়ার ফাহিম, রাসেল, মিলন, সাকিব সকলেই বাল্য বন্ধু। স্ব-স্ব কর্মেই ব্যস্ত। তবে করোনার কারণে সবাই আজ নিজ গৃহে বন্দি। করোনায় অফিস-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ থাকায় পড়ন্ত বিকালে ঘুড়ি আর নাটাই নিয়েই সময় কাটছে তাদের। বন্ধুরা সব একত্র হয়ে উঠে পড়েন যেকোন এক বন্ধুর বাড়ি ছাঁদে। বিকেল হলেই যেন বাড়ির ছাঁদেই চলে ঘুড়ি উৎসব। ঘুড়ির সুতোয় কাটাকাটি খেলে কিংবা দূর আকাশে ঘুড়ি পাঠিয়ে এ যেন করোনাকালীন ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করার ফিরে যান শৈশবে। বিকেল হলেই যশোরে অধিকাংশ ভবনের ছাঁদ এবং মাঠে-ময়দানে দেখা যাচ্ছে রঙবে রঙয়ের ঘুড়ি ওড়ানোর দৃষ্ট। অনেকেই আবার ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ফেসবুকেও ছবি আপলোড করছেন।

ঘুড়ি প্রেমিরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি কবে হবে তা বলা যাচ্ছে না। আবার বাসায় দীর্ঘদিন অবস্থান করার ফলে অনেকের মধ্যেই ক্লান্তি ও অবসাদ ভর করছে। অনেকেই ঘুড়ি উড়িয়ে সেই ক্লান্তি ও অবসাদ মুছে ফেলতে চাইছেন। মুক্ত আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে বদ্ধ হয়ে থাকা এক মানসিক যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মেলছে। অন্যদিকে করোনার কারণে এক দিকে যেমন ঘুড়ি বেচাকেনা বেড়েছে তেমনি দোকানপাট বন্ধ থাকায় পর্যাপ্ত কাগজ, সুতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় ঘুড়ি উৎপাদন হচ্ছে কম এবং দাম আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ।

জানা যায়, ঘুড়ি উড়ানো এদেশে ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। মুঘল আমল থেকে খোলা মাঠে ঘুড়ি উড়ানো হত। কিন্তু ব্যস্ততার যাতাকলে পিষ্ট নাগরিক জীবনে ঘুড়ি উড়ানোর প্রবণতা কমেছে। ফলে কালে বির্বতনে প্রাচীন এ ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধিতে মানুষ ঘরে অলস সময় পার করছে। তাইতো শহরে মানুষের একটু অন্য রকম বিনোদনের খোরাক হিসেবে বিকাল বেলায় ছাঁদে ঘুড়ি উড়াছেন তারা। দোকানে ক্রেতা ঘুড়ি কিনতে না পারাই অনেকে বাড়িতে ঘুড়ি তৈরি করছে পাতলা কাগজ বা পলিথিন দিয়ে। ছোটরা পলিথিনের ব্যাগ কেটে নারকেল পাতার শলা দিয়ে ঘুড়ি তৈরি করছে। আর বড়দের জন্য দোকানীরা পাতলা কাগজ ও বাঁশের পাতলা চটা দিয়ে ঘুড়ি তৈরি করে। তবে ঘুড়ি বাহারি রকম নাম রয়েছে। যেমন চোখদ্বার, মালাদ্বার, পঙ্খীরাজ, চশমাদ্বার, কাউঠাদ্বার, চাপালিশ, চানদ্বার, এক রঙা ইত্যাদি নামের ঘুড়ি।

শহরের কারবালা এলাকায় ঘুড়ি উড়াতে দেখা যায় শিক্ষক পলাশ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ‘ছোট বেলায় গ্রামে বন্ধুদের সাথে মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম। কিন্তু প্রযুক্তির দাপটে এখন ঘুড়ি উড়ানোর চলন নেই বললেই চলে। ফলে ছেলে মেয়েরা ঘরের মধ্যে ভিডিও গেমস খেলে সময় পার করে। অনেক দিন পরে ছেলে-মেয়েদের সাথে ঘুড়ি উড়াচ্ছি। সেই ছোট বেলার অনেক পুরানো স্মৃতি মনে পড়ছে’।

সার্কিট হাউজ পাড়ার সাকিব মাহমুদ জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ঘুড়ি বা যেকোন খেলার করার সময় পায়না। করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু বন্ধ থাকায় সব বন্ধুরা মিলে ছাঁদে ঘুড়ি উড়াচ্ছি নিয়মিত। করোনা যেন স্কুল জীবনের স্মৃতিতে ফিরিয়ে দিয়েছে।

শহরের বারান্দী পাড়ার ঘুড়ি কারিগর ফয়সাল ইসলাম বলেন, ‘যশোরের বিগত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ ঘুড়ি চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাজারে প্রর্যাপ্ত কাগজ ও সুতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে কম। অন্যদিকে যা কয়েকটা কাগজ ও সুতা পাওয়া যাচ্ছে তার দামও অনেক। ফলে দোকানীদের কাছে আগে যেখানে বিক্রয় করা হতো ৩ শ’ টাকা । সেখানে বিক্রি করতে হচ্ছে এখন ৭ শ’ টাকা।

যশোরে প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ছোটবেলায় যেমন ঘুড়ি উড়াতাম, একালে আর ঘুড়ি উড়তে দেখা যায় না। করোনার কারণে অফিস আদালত ও স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় সব বয়সীরা বিকেল হলেই পরিবারের ছোট-বড়রা মিলে বাড়ির ছাঁদে ঘুড়ি উড়াচ্ছে। ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের বদঅভ্যাস থেকে দূরে রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।