কলকাতায় ২ বাংলাদেশি নিহত: সেই গাড়িচালককে জামিন দিল আদালত
সবুজদেশ ডেস্কঃ
চোখের ডাক্তার দেখাতে গিয়ে কলকাতা থেকে লাশ হয়ে ফিরলেন মঈনুল ও তানিয়া নামে দুই বাংলাদেশি। শুক্রবার মধ্যরাতে কলকাতার লাউডন স্ট্রিটের কাছে গাড়িচাপায় মৃত্যু হয় তাদের।
আর এ ঘটনায় পাঁচদিন ধরে আটক অভিযুক্ত গাড়িচালক আরসালান পারভেজকে জামিন দিয়েছেন দেশটির আদালত। জামিন পেয়েছেন তার মামা মহম্মদ হামজাও।
আরসালান জামিন পেলেও গ্রেফতার হয়েছেন তার বড় ভাই রাগিব পারভেজ। ঘটনার তদন্তকারী পুলিশের দাবি, ওই সময় আরসালান নয়, গাড়ি চালাচ্ছিলেন রাগিব।
বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজে রাগিবকে শনাক্ত করেছে পুলিশ।
এদিকে এ মামলায় আরসালান জামিন পেলেও পুলিশের কাছে পাসপোর্ট জমা দিয়ে আসতে হয়েছে তাকে। তার ওপর জারি করা হয়েছে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা। মামলার সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার কাছে সপ্তাহে একবার করে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে তাকে।
এদিকে ঘটনার পাঁচদিন পর প্রধান আসামি পরিবর্তন হয়ে যাওয়াসহ আরসালানের জামিনের খবর প্রকাশ পেলে তুমুল আলোচনা-সমালোচনায় মেতেছেন কলকাতার বাসিন্দারা।
তদন্তের মোড় এভাবে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
দেশটির সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হলে দুঘর্টনার সময় জাগুয়ারটি যে রাগিবই চালাচ্ছিলেন সে বিষয়ে কয়েকটি প্রমাণ সামনে এনেছেন তদন্তকারীরা।
আজ বৃহস্পতিবার আদালতে সেসব তথ্য পেশ করে তারা।
সেখানে জানানো হয়, প্রথমত: ঘাতক জাগুয়ারের ইভেন্ট ডেটা রেকর্ডার (ইডিআর) ও ইনফোটেইনমেন্ট টেলিমেটিক্সের মাধ্যমে যে ফোন রেকর্ড উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা সেখানে আরসালান নয়, তার বড় ভাই রাগিব পারভেজের কণ্ঠ শোনা গেছে।
দ্বিতীয়ত: তদন্তে দেখা গেছে সেদিন সিটবেল্ট না বেঁধে জাগুয়ার গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন অভিযুক্ত। তাই দুর্ঘটনার সময় চালকের মাথা সজোরে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের ভেতরে দিকে অংশে ধাক্কা খায়। উইন্ডস্ক্রিন ২০ইঞ্চির ভাঙা সেই কাঁচে রক্তের দাগ পেয়েছেন তারা। আর সেই রক্ত রাগিবেরই বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
তৃতীয়ত: সেই আঘাতের ফলে চালকের কপালে আঘাত থাকার কথা। কিন্তু এমন কোনো আঘাতের চিহ্ন আরসালানের কপালে পাওয়া যায়নি। কিন্তু রাগিবের কপালে এমন জখমের চিহ্ন দেখা গেছে।
চর্তুথত: ডোপ টেস্টে আরসালান পারভেজকে নেশাগ্রস্ত ছিলেন কিনা, তা প্রমাণিত হয়নি। এসব তথ্যাদি আদালতে উপস্থাপনের পরই জামিন পান আরসালান। তবে জানা গেছে, এবার পারভেজ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রজ্জু করার প্রক্রিয়া চলছে।
তদন্তে অসহযোগিতা, পুলিশকে ভুল পথে চালিত করা, মূল অভিযুক্তকে আড়াল করে তাকে পালাতে সাহায্য করা এবং তদন্তকারীকে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হতে পারে পারভেজ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
জানা গেছে, বুধবার রাগিবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দুবাই থেকে ফেরার পথে বেনিয়াপুকুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হয়েছেন রাগিবের মামা মহম্মদ হামজাও। রাগিবকে দুবাই পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন তিনি।
তবে আজ হামজাকে জামিন দিয়েছে আদালত।
প্রসঙ্গত শুক্রবার গভীর রাতে একটি পুলিশ পোস্টে আশ্রয় নেয়া দুই বাংলাদেশিকে চাপা দিয়ে চলে যায় তীব্র গতিতে ছুটে চলা একটি জাগুয়ার। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
নিহত দুইজনের নাম- কাজী মুহাম্মদ মঈনুল আলম (৩৬) ও ফারহানা ইসলাম তানিয়া (২৮)।
নিহত মঈনুল গ্রামীণফোনের রিটেইল সাপোর্ট ম্যানেজার ছিলেন এবং সিটি ব্যাংকের ধানমণ্ডি শাখার সিনিয়র অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন তানিয়া।