‘কলিজার মেয়েটার মুখ আর দেখা হলো না ফায়ার সার্ভিস কর্মীর’
সবুজদেশ ডেস্ক:
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পাঁচজন ফায়ার সার্ভিসকর্মী। তাদের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তার নাম মো. মনিরুজ্জামান। তিনি কুমিরা ফায়ার স্টেশনে নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে।
মনিরের বড় মামা মির হোসেন সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে (চমেক) এসে ভাগনের মরদেহ শনাক্ত করেন।
লাশ শনাক্তের পর হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন নিহত মনিরের মামা মির হোসেন।
তিনি জানান, মৃত্যুর আগে মো. মনিরুজ্জামান বলছিলেন তাকে বলছিলেন, ‘আমার শরীর পুড়ে গেছে। আমি হয়তো আর ফিরব না। আমার কলিজা মেয়েটার মুখ আর দেখা হবে না মামা। তুমি একটু দেখে রাখিও।’
মির হোসেন জানান, মনির আট বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে কর্মজীবন শুরু করেন। গেল দুই মাস আগে তিনি কুমিরা ফায়ার স্টেশনে যোগ দেন। দুই মাস বয়সী এক কন্যাসন্তান রয়েছে তার।
মির হোসেন বলেন, দুদিন আগে কুমিরায় গিয়ে মনিরের সঙ্গে সারা দিন ঘুরেছি। অনেক আড্ডা দিয়েছি। সকালে ফোন করে তাকে পাচ্ছিলাম না। তাই হাসপাতালে ছুটে আসি। আমি তাকে চিনতে পেরেছি, সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। কথাগুলো বলেই তিনি আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের ১৫ কর্মী এখনো সিএমএইচসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আরও দুই কর্মীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ কর্মী নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। এর মধ্যে মনিরুজ্জামান নামে একজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। মরদেহগুলো পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় এখনো দুজন কর্মী নিখোঁজ ও ১৫ জন গুরুতর আহতাবস্থায় এমএইচসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে ইউনিট আরও বাড়ানো হয়।
সবশেষ তথ্যানুযায়ী, ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের ১৮৩ কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এ ছাড়া নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করছেন।