মাগুরাঃ

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম ফয়সাল রাব্বি।

গত দুই বছর যাবৎ এই কলেজটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নানাভাবে আলোচনায় এসেছেন স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান রাব্বি।

মাগুরা জেলার রাজনৈতিক সচেতন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফাহিম ফয়সাল রাব্বির বাড়ি মাগুরার শহরতলী পারনান্দুয়ালি গ্রামে। বাবা মাগুরা জেলা এনজিও কো-অর্ডিটের আবদুল হালিম। ১৯৮০ সালে মাগুরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের হালিম-নজরুল প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

মাগুরা জেলা জামায়াতের সাবেক রাজনৈতিক সচিব বর্তমান জামায়াত নেতা এরশাদ উল্লাহ অহিদ বলেন, ‘আবদুল হালিম আশির দশকে শিবিরের সক্রিয় নেতা হিসেবে রাজনীতি করলেও বর্তমানে আমাদের কোনো পদে নেই।’

তবে এক সময়ের সেই তুখোড় শিবির নেতা আবদুল হালিমের ছেলে ফাহিম ফয়সাল রাব্বিকে মাগুরার খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় ২০১৭ সালে।

তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রুবেল ঢাকায় গণভবনের পাশে বসে কমিটি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের কাছে জমা দেন। সে সময় কোনো কাউন্সিল ছাড়াই কমিটি গঠন এবং কমিটিতে জামায়াত শিবির পরিবারের সদস্যকে ছাত্রলীগের সভাপতির পদ দেয়ায় দলের মধ্যে দারুণ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর নানাভাবে তিনি বির্তর্কের সৃষ্টি করেছেন। বিশেষ করে রাতে মহিলা কলেজ হোস্টেলে ঢুকে মেয়েদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় তার নাম উত্থাপন হওয়ার পর মাগুরার রাজনৈতিক সচেতন মহল এবং বিশেষ করে জেলা ছাত্রলীগের মধ্যে অসন্তোষ আরও ছড়িয়ে পড়েছে।

জনসন্মুখে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হলে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো পরিবারের সদস্য ছাত্রলীগের মতো সংগঠনের বড় পদে আসিন হওয়ার সুযোগ পেত না। কিন্তু সেটি না হওয়ায় জেলার বিভিন্ন কমিটিতেই তাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে জেলা ছাত্রীগের অতিত বর্তমান কমিটির বিভিন্ন নেতা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

মাগুরা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান রুবেল বলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাব্বি ছাত্রলীগের কতিপয় সিনিয়র নেতার সঙ্গে ওঠাবসা শুরু করে। তাদের মাধ্যমেই তার নামটি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং সে সময় যাচাই-বাছাইয়ের কোনো সুযোগ ছিল না।

এদিকে কলেজ হোস্টেলে অনুপ্রবেশ এবং সেখানে দায়িত্বহীনতার অভিযোগে সোমবার দুপুরে হোস্টেলের মেট্রন নাসরিন আকতার, নৈশ প্রহরী আবদুস সালাম এবং রাঁধুনি রাজিয়াকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিষয়টির তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে যারা ইতিমধ্যে তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, মাগুরায় রাতে কলেজ হোস্টেলে প্রায়শই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। দলবল সহকারে ঢুকে যাচ্ছে কারও কক্ষে। রান্না করে খাওয়াতে বাধ্য করা হচ্ছে তাদের।

অনেকদিন ধরেই এমন অরাজকতা চলে আসলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থায় নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন আবাসিক ছাত্রীরা।

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের হোস্টেলে বসবাসরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী সোমবার সকালে কলেজ অধ্যক্ষ দেবব্রত ঘোষের কাছে অভিযোগ জানালেও তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ছাত্রীদের অভিযোগ, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম ফয়সাল রাব্বিসহ ছাত্রলীগ পরিচয়ে বেশ কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘ্নে হোস্টেলে যাওয়া আসা করছে। তাদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে কেউ কেউ। অথচ বিষয়টি জানার পরও কলেজ প্রশাসন এ বিষয়ে একেবারেই নিশ্চুপ রয়েছে।

সর্বশেষ রোববার রাতের ঘটনায় হোস্টেলের প্রায় সবাই নিরাপত্তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন বলে তারা জানান।

হোস্টেলে বসবাসরত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী জানান, ‘রাত সাড়ে ৯টায় রাতের খাবার শেষ করে অন্য মেয়েদের সঙ্গে নিচ থেকে রুমে ফেরার সময় দেখি হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে ছাত্রলীগ নেতা রাব্বি ভাই একটি মেয়েকে খুব খারাপ অবস্থায় জড়িয়ে ধরে রেখেছে। বেশ সুন্দর দেখতে ওই মেয়েটি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও পারছে না। কাঁদছে কিন্তু চিৎকার করতে পারছে না।’

তিনি বলেন, ‘একটু দূরে আরও তিন-চারজন ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ সময় আমি সঙ্গে থাকা অন্যদের সহযোগিতায় ওই মেয়েটিকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। সিঁড়ির রেলিয়ে পড়ে গিয়ে একটি মেয়ের হাতও কেটে যায়। ওই মেয়েটির হাতের ওপর জামার একটি অংশ ছিঁড়ে যায় তখন।’

আরো পড়ুন- রাতে মহিলা হোস্টেলে ঢুকে কলেজ ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের নিপীড়ন!

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here