ঢাকাঃ

পুলিশি রিমান্ডে থাকা ডিজে নেহা সম্পর্কে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। মামলার অজ্ঞাত আসামি সাফায়েত জামিল সম্পর্কে নেহার চাচাতো ভাই। তারা দু’জনই ডিজে পার্টির আয়োজন করতো। নেহা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে ধনী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কৌশলে সখ্যতা গড়ে তুলতো। তাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতো মদ এবং নারী। এক্ষেত্রে মাদকের জোগানদাতা হিসেবে কাজ করতো সাফায়েত। সাফায়েত রাজধানীর বিভিন্ন বার থেকে মদ সরবরাহ করতো।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের তৃতীয় দিনে নেহার ব্যবহৃত স্মার্টফোন থেকে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর ফোন নম্বর পেয়েছেন।সাংকেতিকভাবে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের নাম মুঠোফোনে সংক্ষিপ্ত অধ্যাক্ষরে সংরক্ষণ করতেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার নিজস্ব ফোনে ‘ক্লায়েন্ট-১, ক্লায়েন্ট-২, ক্লায়েন্ট-৩, ক্লায়েন্ট-৪ ধারাবাহিকভাবেই সংরক্ষণ করা হতো। এসব ক্লায়েন্টদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণীদের সরবরাহ করতো। এভাবেই অসংখ্য ব্যবসায়ীকে মাদক ও নারী চক্রে জড়িয়েছেন নেহা। কখনো বা ডিজে খ্যাত নেহা নিজেই এই ধনাঢ্যদের সঙ্গ দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে নেহা জানিয়েছে ব্যবসায়ী ও ধনী ব্যক্তিদের সঙ্গ দিয়ে বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে পেতো বড় অঙ্কের টাকা এবং উপহার সামগ্রী। বেশ কয়েক বছর আগে নেহার সঙ্গে একজন লন্ডন প্রবাসীর বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সে বিয়ে বেশিদিন টিকেনি। প্রবাসী স্বামী তাকে লন্ডন নিয়ে যেতে চাইলেও উন্মুক্ত জীবন হাতছাড়া করতে চায়নি নেহা। পরবর্তীতে তারা পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যান।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালের শুরুর দিকে চট্টগ্রামের একজন প্রতিষ্ঠিত গাড়ি ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তারা একাধিক জাঁকজমকপূর্ণ পার্টিতে অংশ নেয়। উপহার হিসেবে দামি আইফোন থেকে শুরু করে নগদ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়েছে নেহা। তখন ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দামের আইফোন ১২ প্রো ম্যাক্স ফোন উপহার দেন ওই ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে ফেসবুকের মাধ্যমে আরেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হলে গত পাঁচ মাসে নেহা তার কাছ থেকে প্রায় ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

সূত্র জানায়, ঢাকার বিভিন্ন বার থেকে মদ থেকে শুরু করে যাবতীয় নেশাজাতীয় দ্রব্য সরবরাহের কাজ করতো সাফায়েত। উত্তরার রেস্টুরেন্টে ওই দিনের মদ্যপানের অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল নেহা। ওই পার্টিতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে মদ সরবরাহ করেছে সাফায়েত। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন সাফায়েত পড়ালেখায় অনিয়মিত। বিভিন্ন ক্লায়েন্টের নামের তালিকা প্রস্তুত করা, সময়-তারিখের তালিকা সংরক্ষণ, দরদাম ইত্যাদি ক্ষেত্রে মিডলম্যান হিসেবে কাজ করতো সাফায়েত।

সূত্র জানায়, নেহার চেহারায় এবং চলনবলনে আভিজাত্যের ছাপ থাকায় বোঝার উপায় ছিল না সে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। রাজধানীর আজিমপুরে থাকেন তার বাবা। পেশায় তিনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। পুরান ঢাকায় তিনি কাপড়ের ব্যবসা করেন। তার বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে অনেক আগে। পরবর্তীতে নেহার মা আলাদাভাবে মিরপুরের ভাড়া বাসায় থাকেন। বাবা-মায়ের শাসন এবং সঠিক গাইডলাইন না পাওয়ায় অনেকটা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যায় নেহা। নেহার প্রত্যাহিক রুটিন ছিল সারাদিন ঘুমানো আর রাতে বিভিন্ন অভিজাত এলাকার হোটেল ও বারগুলোতে ডিজে ও মদের পার্টিতে অশ্লীল উদ্দাম নাচে অংশ নেয়া। সম্প্রতি পুলিশের জব্দ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সিসা এবং হুক্কার পাইপ দিয়ে স্লো মোশনে ধোঁয়া ছাড়া, বিদেশি দামি মদের বোতলে চুমো দেয়া, ওয়েস্টার্ন ড্রেসে ডিজে গানের সঙ্গে নৃত্য ইত্যাদি পরিবেশন করছে। এ সময় তাকে সঙ্গ দিতেন একাধিক ছেলে বন্ধু। নেহার নির্দেশনায় চক্রে একাধিক তরুণ-তরুণী কাজ করতো। আর এ সকল সিসা, মদ পার্টি এবং অশ্লীল অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন সমাজের উচ্চ বিত্তের সন্তানরা। সিসা লাউঞ্জ ও মদের পার্টি থেকে নেহার সবচেয়ে বেশি আয় হতো। ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন তরুণীদের ঢাকার বাইরের আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ বলেন, পশ্চিমা দামি সব পোশাক পরে বারে এবং ক্লাবে যেতো নেহা। দামি ব্র্যান্ডের মেকআপ ব্যবহার করে রূপের ঝলক দেখিয়ে আয়োজন করতো ডিজে পার্টির। যেখানে আসতেন ধনীর দুলালরা। অসামাজিক এবং অনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করাই ছিল তার আয়ের অন্যতম উৎস। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এস আই মো. সাজেদুল হক বলেন, নেহাকে তৃতীয় দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। নেহার এবং সাফায়েতের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here