ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার আড়পাড়া ও চাপালী শ্রীরামপুর গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়া ৩৩ হাজারের ‘হাই-ভোল্টেজ’ তারের নিচে জীবনবাজি রেখে প্রায় দুইশতাধিক পরিবারের বসবাস। বিদ্যুৎ আইন বলছে, ‘হাই-ভোল্টেজ’-এর সঞ্চালন লাইনের নিচে কোনও ঘরবাড়ি বা স্থাপনা থাকতে পারবে না, ডানে ও বামে কমপক্ষে ১০ ফুট ফাঁকা থাকতে হবে। কিন্তু এসবের দিকে সেই আমল থেকেই এ পর্যন্ত কোন খেয়াল করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই এলাকায় বহু বাসাবাড়ির ওপর বিপজ্জনকভাবে ঝুলে রয়েছে এই ভয়ংকর ৩৩ হাজার ভোল্টেজের সঞ্চালন  লাইনের তার।
সরেজমিনে যেয়ে কথা হয় আড়পাড়া ও চাপালী শ্রীরামপুর গ্রামে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সাথে আড়পাড়া দরগাপাড়া গ্রামে ব্যাংকার মোজাম্মেল হক ও পল্লী চিকিৎসক আব্দুল জব্বার জানান, আড়পাড়া (নদীপাড়া), আড়পাড়া (মধূপট্টি), আড়পাড়া  (কোটচাঁদপুর রোড), আড়পাড়া (মাঠপাড়া), আড়পাড়া (দরগাপাড়া) চাপালী, শ্রীরামপুরসহ এই এলাকার বাসা বাড়ির ওপরে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে ৩৩ হাজার হাই-ভোল্টেজের সঞ্চালন বিদ্যুৎ লাইনের তার। আমরা আমাদের পরিবারের কোমলমতি শিশু, বৃদ্ধাসহ সবাই খুবই নিরাপত্তা হীনতা ভাবে বসবাস করছি।
আজ থেকে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ বছর আগে এটা স্থাপিত হয়। ৩৩ হাজার ভোল্টেজের এ লাইনটি যখন স্থাপন করা হয় তখন এ এলাকায় বাসাবাড়ি তেমন ছিল না। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠে। এই এলাকায় উচ্চ ভোল্টেজের তারের নিচেই আমাদের অসংখ্য বাসাবাড়ি রয়েছে। দীর্ঘ দিনের এই তার ধীরে ধীরে ঝুলে পড়েছে। স্থাপনের পর থেকে অদ্যবদি এই সঞ্চালন লাইনের মেরামত বা সংস্কার হয়নি। বর্তমানে লাইনটি অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ লাইনে দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২০ বছরে এই এলাকায় বাড়ি ঘর নির্মান করতে যেয়ে নির্মাণ শ্রমিকসহ ৪/৫ জন অকালে প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে অনন্ত ১৫ জন। এখনও পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকে। আমরাও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছি। ‘কারেন্টের (বিদ্যুতের) তার এই এলাকার বেশিরভাগ ঘরবাড়ির ছাদ ও চাল লাগে লাগে অবস্থা।  কিন্তু এটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। কতো মানুষ যে লাইনে শখ খেযেছে তার কোনও হিসাব নাই।
কয়েকমাস আগে তারের সাথে আরেক তারের সংযোগ লেগে আড়পাড়া গ্রামের দরগা পাড়ায় বেশ কয়েকটি বাসার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। মাঝে মাধ্যেই ঘটছে এ ধরনের দুর্ঘটনা। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহতসহ এত দুর্ঘটনারও পর এ লাইনের কোন সু-ব্যবস্থা করছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
লাইনের ডান-বামের পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতো। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে বিদ্যুতের উচ্চ ভোল্টেজের লাইন যাওয়ায় অনেকে বাসাবাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। আবার অনেকে বাসার কাজ শেষ করতে পারছে না। এ কারণে জায়গা জমি থাকার পরও অনেকের জমি পতিত পড়ে আছে। কেউ আবার অনেক কষ্টে কেনা জায়গা বেচে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায়ই শোনা যায় ছাদে কাজ করতে গিয়ে আহত হওয়ার খবর । তারা  লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সুস্থ হন। অনেকেই ছাদে উঠার সিঁড়িটি বন্ধ করে দিয়েছে। এ এলাকার বহু পরিবার রীতিমতো জীবনবাজি রেখে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের তারের নিচে বাসাবাড়িতে বসবাস করছেন।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাদের বাসার ছাদ বা চালের দুই থেকে আড়াই ফুট ওপরেই ৩৩ হাজার ভোল্টেজের লাইন। আরো বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।  জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লেও বিদ্যুৎ বিভাগ মেরামত, তার উঁচু করা বা সরানোর কোন ব্যবস্থা হাতে নিচ্ছে না। ‘বহু আগে থেকেই এ লাইনটি ব্যবহার হচ্ছে কিন্তু এটি ঝুঁকিমুক্ত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছেনা। বসত বাড়ির উপর দিয়ে যাওয়া বিপদজনক এই তারে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ যদি কভার পরিয়ে তার উঁচু করে দিতো তাহলেও কিছুটা নিরাপদে এলাকাবাসী বসবাস করতে পারতো।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলার ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী (ওজোপাডিকোর) নির্বাহী প্রকৌশলী পরিতোষ চন্দ্র সরকারের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এটা অনেক আগে  স্থাপিত হয়েছে এখন এটা রক্ষনা-বেক্ষন করা হয়। এটা উঁচু করা যায়, কিন্তু সরানো সম্ভাব কি ভাবে? এটা সরানো অনেক ব্যায় বহুল। আর এ তারে কভার লাগালে পুড়ে যেতে পারে। তারের নিচে এভাবে বসত বাড়ি করছে আপনারা বাঁধা দেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সমান্য গাছের ডাল কাটতে গেলে তাই পাবলিক মারতে আসে আর তারের এপাশে ১০ ফুট ও পাশে ১০ সরায়ে বাদি তৈরীর কথা বলি আমাদের মার খেয়ে সেখান থেকে আসতে হবে। এটা এখন কিছু করা সম্ভব না। কারো জীবনের মায়া যদি না থাকে তাহেলে ৩৩ হাজার ভোল্টেজ তারের নিচে ঘর করবে আমাদের এতে কি সমস্যা। মরার ইচ্ছা থাকলে তাকে বাঁচাবে কে? এভাবেই কথাগুলো বলেন এই প্রকৌশলী।
এলাকাবাসী এই বিপদজনক ৩৩ হাজারের হাই-ভোল্টেজ তারের নিচে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস থেকে নিরাপদে বসবাসের জন্য স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য, ঝিনাইদহের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুধী সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here