ঢাকা ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জের শতবর্ষী গাছের সড়কটিতেই মিলছে শান্তির বিশ্রাম

 

বিগত কয়েক দিন দেশের দক্ষিণাঞ্চালের ওপর দিয়ে বইয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর প্রভাব পড়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জেও। দিন যত যাচ্ছে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। নীচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। বাড়ছে বৈশ্বিক উঞ্চতা। এতে প্রভাব পড়ছে প্রাণীকুলেও। আর প্রকৃতি যেন ক্রমেই রুক্ষ আর রুষ্ট হয়ে উঠছে। শহর কিংবা গ্রামে পথঘাট অথবা বাসাবাড়িতে গরমে নাভিশ্বাস চলছে। কিন্ত ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সরকারী নলডাঙ্গা ভূষন হাইস্কুল সড়কটি যেন বেশ ব্যতিক্রম। এর কারন এ সড়কের পাশ ঘেষে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে অতিপ্রাচীন শতবর্ষী বেশ কিছু রেন্ট্রি কড়াই গাছ। যেগুলোর ঘন ছায়ায় বেশ শীতল করে রেখেছে সড়কটির আশপাশ। তাইতো প্রচন্ড গরমে যখন হাসফাস অবস্থা তখন পথচারী, রিকসা ভ্যানচালক শ্রমজীবিসহ সব শ্রেণীর মানুষ এ সড়কেই ভীড় জমায়। তারা ঘন ছায়ার শীতলতায় খানিকটা সময় বিশ্রাম প্রান জুড়াচ্ছেন। ফলে প্রচন্ড তাপদাহে শতবর্ষী গাছের এ সড়কটি সকলের জন্য হয়ে উঠেছে স্বস্তির ঠিকানা।

কালীগঞ্জ শহরের সরকারী নলডাঙ্গা ভূষন হাইস্কুল সড়কটির বৈশাখীর মোড় থেকে ডাকবাংলার মোড় পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটারের অধিক সড়ক। একপাশ দিয়ে প্রাচীন ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ৪৩ টি শতবর্ষী বৃহদ আকারের রেন্ট্রি কড়াই গাছ। যেগুলোর ছায়ায় বেশ শীতল হয়ে রয়েছে সড়কটি। এর পাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শহরের একপাশে তাই পরিবেশগত কারনেই কালীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হলুদ ও ভূষিমালের হাট ছাড়াও আড়তগুলো রয়েছে এ সড়কটি ঘেষে। বসবাসের জন্যও গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক ডিজাইনের ঘরবাড়ি।

তথ্যানুন্ধ্যানে জানাগেছে, এক সময়কার নড়াইলে বসবাসরত জমিদার কালীবাবুর মা কয়েকশ বছর আগে ভারতের কাশিপুর তীর্থ যাত্রা করেন। পথে অতিরিক্ত রোদের তাপ থাকায় সে সময় তার মায়ের আদেশে জমিদার ভারতের পাইকপাড়া থেকে নড়াইল, যশোর থেকে ঝিনাইদহ এবং ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের পাশে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায় রেইনট্রি বৃক্ষ রোপণ করা হয়। শতবর্ষী অসংখ্য গাছগুলো শত বছর ধরে মহাসড়কের পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্ত মানুষের প্রয়োজনে আজ সড়কটি বর্ধিতকরন হচ্ছে। সে কারনে সড়কের দু’পাশের শতবর্ষী সব গাছ কাটতে হয়েছে। কিন্ত কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনও দাড়িয়ে আছে কালীগঞ্জ শহরের ভূষন হাইস্কুল সড়কের গাছগুলো। যা এ এলাকার ঐতিহ্য বহন করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আক্তারুল হক সাগর জানান, ভূষন স্কুলের সড়কটির মত বৃহদ আকারের গাছ এখন সচারাচর দেখা যায় না। এগুলো এ এলাকার পুরাতন ঐতিহ্য বহন করে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এর আগে কয়েক দফা ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে শুকনো ডালের পরিবর্তে প্রভাবশালীরা অনেক মোটা মোটা কাঁচা ডাল কেটে পকেট ভরেছেন। তার দাবি এ গাছগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই সঠিকভাবে সংরক্ষনের প্রয়োজন।

জাপানভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতে কিছু এলাকায় এ ধরনের শতবর্ষী রেইনট্রি গাছ দেখা যায়। এছাড়া দেশের আর কোথায় এরকম বর্ষীয়ান গাছ দেখা যায় না। বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ আমাদের পরম বন্ধু। তাই কালীগঞ্জ ভূষন হাইস্কুল সড়কের যে গাছগুলো এখনও মাথা তুলে প্রাণীকুলকের সেবা দিয়ে চলেছে এগুলোর ঐতিহ্য রক্ষায় এবং সংরক্ষনে সকলকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সবুজদেশ/এইউ

কালীগঞ্জের শতবর্ষী গাছের সড়কটিতেই মিলছে শান্তির বিশ্রাম

Update Time : ১০:৩৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

 

বিগত কয়েক দিন দেশের দক্ষিণাঞ্চালের ওপর দিয়ে বইয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর প্রভাব পড়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জেও। দিন যত যাচ্ছে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। নীচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। বাড়ছে বৈশ্বিক উঞ্চতা। এতে প্রভাব পড়ছে প্রাণীকুলেও। আর প্রকৃতি যেন ক্রমেই রুক্ষ আর রুষ্ট হয়ে উঠছে। শহর কিংবা গ্রামে পথঘাট অথবা বাসাবাড়িতে গরমে নাভিশ্বাস চলছে। কিন্ত ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সরকারী নলডাঙ্গা ভূষন হাইস্কুল সড়কটি যেন বেশ ব্যতিক্রম। এর কারন এ সড়কের পাশ ঘেষে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে অতিপ্রাচীন শতবর্ষী বেশ কিছু রেন্ট্রি কড়াই গাছ। যেগুলোর ঘন ছায়ায় বেশ শীতল করে রেখেছে সড়কটির আশপাশ। তাইতো প্রচন্ড গরমে যখন হাসফাস অবস্থা তখন পথচারী, রিকসা ভ্যানচালক শ্রমজীবিসহ সব শ্রেণীর মানুষ এ সড়কেই ভীড় জমায়। তারা ঘন ছায়ার শীতলতায় খানিকটা সময় বিশ্রাম প্রান জুড়াচ্ছেন। ফলে প্রচন্ড তাপদাহে শতবর্ষী গাছের এ সড়কটি সকলের জন্য হয়ে উঠেছে স্বস্তির ঠিকানা।

কালীগঞ্জ শহরের সরকারী নলডাঙ্গা ভূষন হাইস্কুল সড়কটির বৈশাখীর মোড় থেকে ডাকবাংলার মোড় পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটারের অধিক সড়ক। একপাশ দিয়ে প্রাচীন ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ৪৩ টি শতবর্ষী বৃহদ আকারের রেন্ট্রি কড়াই গাছ। যেগুলোর ছায়ায় বেশ শীতল হয়ে রয়েছে সড়কটি। এর পাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শহরের একপাশে তাই পরিবেশগত কারনেই কালীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হলুদ ও ভূষিমালের হাট ছাড়াও আড়তগুলো রয়েছে এ সড়কটি ঘেষে। বসবাসের জন্যও গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক ডিজাইনের ঘরবাড়ি।

তথ্যানুন্ধ্যানে জানাগেছে, এক সময়কার নড়াইলে বসবাসরত জমিদার কালীবাবুর মা কয়েকশ বছর আগে ভারতের কাশিপুর তীর্থ যাত্রা করেন। পথে অতিরিক্ত রোদের তাপ থাকায় সে সময় তার মায়ের আদেশে জমিদার ভারতের পাইকপাড়া থেকে নড়াইল, যশোর থেকে ঝিনাইদহ এবং ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের পাশে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায় রেইনট্রি বৃক্ষ রোপণ করা হয়। শতবর্ষী অসংখ্য গাছগুলো শত বছর ধরে মহাসড়কের পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্ত মানুষের প্রয়োজনে আজ সড়কটি বর্ধিতকরন হচ্ছে। সে কারনে সড়কের দু’পাশের শতবর্ষী সব গাছ কাটতে হয়েছে। কিন্ত কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনও দাড়িয়ে আছে কালীগঞ্জ শহরের ভূষন হাইস্কুল সড়কের গাছগুলো। যা এ এলাকার ঐতিহ্য বহন করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আক্তারুল হক সাগর জানান, ভূষন স্কুলের সড়কটির মত বৃহদ আকারের গাছ এখন সচারাচর দেখা যায় না। এগুলো এ এলাকার পুরাতন ঐতিহ্য বহন করে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এর আগে কয়েক দফা ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে শুকনো ডালের পরিবর্তে প্রভাবশালীরা অনেক মোটা মোটা কাঁচা ডাল কেটে পকেট ভরেছেন। তার দাবি এ গাছগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই সঠিকভাবে সংরক্ষনের প্রয়োজন।

জাপানভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতে কিছু এলাকায় এ ধরনের শতবর্ষী রেইনট্রি গাছ দেখা যায়। এছাড়া দেশের আর কোথায় এরকম বর্ষীয়ান গাছ দেখা যায় না। বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ আমাদের পরম বন্ধু। তাই কালীগঞ্জ ভূষন হাইস্কুল সড়কের যে গাছগুলো এখনও মাথা তুলে প্রাণীকুলকের সেবা দিয়ে চলেছে এগুলোর ঐতিহ্য রক্ষায় এবং সংরক্ষনে সকলকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সবুজদেশ/এইউ