ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নাকোবাড়িয়া এলাকায় সামাজিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ইউনুছ আলীকে জামায়াতের নির্বাচনী সমাবেশে যোগদানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি (সোমবার) তিনি জামায়াতের নির্বাচনী সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
জানা গেছে, উপজেলার বড় তালিয়ান মাদ্রাসা মাঠে তিনটি নির্বাচনীয় কেন্দ্রের উদ্যোগে নির্বাচনী সমাবেশ ও দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতার্থ মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আবু তালিব, বিশেষ অতিথি ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা ওলিউর রহমান, জামাল ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মোস্তাফিজুর রহমান। প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির পিছনেই বসে ছিলেন জামায়াত কর্মী ইউনুছ আলী এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানাতে দেখা গেছে তাকে।
স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জামাল ইউনিয়নের নজরুল ইসলামের সঙ্গে আরিফ হোসেনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। নজরুল ইসলাম মোল্লা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন এবং ইউনিয়নে নিজের প্রভাব বাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এরই জের ধরে রোববার সকালে ইউনিয়নের নাকোবাড়িয়া গ্রামে নজরুল ইসলাম মোল্লার সমর্থকরা হামলা চালায়। এ সময় আরিফের সমর্থকরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। পরে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে অন্তত ৫ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মহব্বত হোসেন নামের একজনের অবস্থা গুরুতর হলে তাকে ফরিদপুরে রেফার্ড করা হয়। দুপুরে ফরিদপুর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এর একদিন পর যশোরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ইউনুছ আলী। নিহত ইউনুছ আলী ও মহব্বত আলী ছিলেন নজরুল ইসলাম মোল্লার সমর্থক।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ৫৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল ইসলামের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিহত ইউনুছ আলী বিএনপির কর্মী না বলেও দাবি করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।
তবে ইউনুছ আলীকে জামায়াতের কর্মী অস্বীকার করে জামাল ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু বলেন, ইউনুছ আলী বিএনপির কর্মী ছিলেন। জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখে জামায়াতের নির্বাচনী সভায় যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই সভায় সমাজের সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। দায়িত্বশীল না হয়ে মঞ্চে বসার বিষয়ে এড়িয়ে যান তিনি।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে জামায়াতের নির্বাচনী পরিচালক ও উপজেলার সাবেক আমীর মাওলানা ওলিউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করা হচ্ছিল ইউনুছ আলীকে দলে ভেড়ানোর। কিন্তু আমরা পারিনি। ভিডিওতে দেখে মনে হচ্ছে তিনিই ওই সভার আয়োজক এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ছিল আমাদের কৌশল। যে কালার করে ছেড়ে দেওয়া।
সবুজদেশ/এসএএস