ঢাকা ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জে টাকা ছাড়া বই দিলেন না প্রধান শিক্ষক, কাঁদতে কাঁদতে ফিরল শিক্ষার্থীরা

Reporter Name

গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ইনসেটে প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন পাল

ঝিনাইদহঃ

বিনামূল্যের বই নিতেও গুনতে হচ্ছে টাকা। সেশনফি ও উন্নয়ন ফি‘র অযুহাতে বই উৎসবের দিনেও নতুন বইয়ের ঘ্রান থেকে বঞ্চিত হয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। টাকা দিতে না পারায় বই না নিয়েই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাদের। এ নিয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের, প্রধান শিক্ষক সেশনফি ও উন্নয়ন ফি ছাড়া দিচ্ছেন না নতুন বই। ওই টাকা জমা দিয়ে শ্রেণী শিক্ষকের কাছে স্লিপ জমা দেয়ার পর বই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যদিও বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমন হোসেন জানায়, ২শ ৫০ টাকা দিতে পারেনি বলে প্রধান শিক্ষক আমাদের বছরের নতুন বই দেয়নি। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অপু শেখ জানায়, শিক্ষকদের সাথে যাদের ভালো সম্পর্ক শুধু তাদেরই বই দিয়েছেন, আমাদের ২শ ৫০ টাকা সেশনফি ও উন্নয়ন ফি‘র টাকা জমা দিয়ে বই নিয়ে যেতে বলেছেন। ২শ ৫০টাকার জায়গায় ২শ টাকা দিলেও দুইটি করে বই আটকে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক এমন টি জানালেন একাধিক শিক্ষার্থী।

আব্দুল আলিম নামের গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমি গোপালপুর বাজার থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম স্কুলের সামনে এসে দেখি আমার ছেলে সজিব মন্ডল স্কুলের সামনের দোকানে বসে আছে চোখ ছলছল করছে। আমি ছেলেকে বল্লাম কি হয়েছে ? তখন ছেলে বল্লো টাকা ছাড়া স্যার বই দিবেনা। আমি স্কুলের ভিতর প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষক চিত্তরন্জন পালকে বই না দেবার কারন জানতে চাইলাম তখন প্রধান শিক্ষক আমাকে বলে দিলেন সেশনফি ও উন্নয়ন ফি‘র ২শ ৫০ টাকা জমা দিয়ে বই নিয়ে যেতে হবে। টাকা ছাড়া বই দিবে না বলে জানায় প্রধান শিক্ষক চিত্তরন্জন পাল। আমার মতো অনেক অভিভাবক বইয়ের জন্য অনেক অপেক্ষা করেও খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে।

এছাড়াও একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, প্রতি বছর কোনো রকম খাত না দেখিয়ে সেশনফি ও স্কুলের উন্নয়ন ফি‘র নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২’শ ৫০ টাকা করে আদায় করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকদের কাছে বার বার অনুরোধ করেও বই পাননি বলে অভিযোগ করেন।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক চিত্তরন্জন পাল জানান, বাৎসরিক সেশন ফি বাবদ টাকা নেয়া হচ্ছে । আর কাউকে টাকা ছাড়া বই দেয়া হয়নি সেটা আমার জানানেই। বই বিতরন করেছে শ্রেনী শিক্ষক তারা এমনটি করতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মধু সুধন সাহা জানান, আমি বিষয়টি জানতে পেরে ওই স্কুলের সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলেছি প্রধান শিক্ষক কে বলে দিতে টাকা ছাড়া বই দিয়ে দিতে । আর এবিষয়ে কেউ যদি আমাকে লিখিত অভিযোগদেয় তাহলে আমি ব্যবস্থাগ্রহন করবো।

এ ব্যাপারে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্ণা রানী সাহা জানান, বই উৎসবের দিন এই অভিযোগটি আমার কানে আসার পর আমি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বল্লাম বিষয়টি দেখার জন্য। প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে সেশন ফি নেবার দরকার নাই বিনা মূল্যে বই দিতে হবে। সেশন ফি নেবার বৈধতা থাকলেও পরবর্তীতে নিতে হবে । বই উৎসবের দিন নেবার দরকার নেই । পরবর্তীতে আমি প্রধান শিক্ষক কে ডেকে বল্লাম আমি স্কুলের সভাপতি আমাকে না জানিযে কেনো এমনটি কেনো করলেন সেশন ফি নেবার বৈধতা থাকলেও পরে নিতে পারতেন। আপনার এটা করা ঠিক হয়নি।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:১০:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২০
১৩৩৭০ Time View

কালীগঞ্জে টাকা ছাড়া বই দিলেন না প্রধান শিক্ষক, কাঁদতে কাঁদতে ফিরল শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় : ০৬:১০:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২০

ঝিনাইদহঃ

বিনামূল্যের বই নিতেও গুনতে হচ্ছে টাকা। সেশনফি ও উন্নয়ন ফি‘র অযুহাতে বই উৎসবের দিনেও নতুন বইয়ের ঘ্রান থেকে বঞ্চিত হয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। টাকা দিতে না পারায় বই না নিয়েই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাদের। এ নিয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের, প্রধান শিক্ষক সেশনফি ও উন্নয়ন ফি ছাড়া দিচ্ছেন না নতুন বই। ওই টাকা জমা দিয়ে শ্রেণী শিক্ষকের কাছে স্লিপ জমা দেয়ার পর বই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যদিও বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমন হোসেন জানায়, ২শ ৫০ টাকা দিতে পারেনি বলে প্রধান শিক্ষক আমাদের বছরের নতুন বই দেয়নি। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অপু শেখ জানায়, শিক্ষকদের সাথে যাদের ভালো সম্পর্ক শুধু তাদেরই বই দিয়েছেন, আমাদের ২শ ৫০ টাকা সেশনফি ও উন্নয়ন ফি‘র টাকা জমা দিয়ে বই নিয়ে যেতে বলেছেন। ২শ ৫০টাকার জায়গায় ২শ টাকা দিলেও দুইটি করে বই আটকে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক এমন টি জানালেন একাধিক শিক্ষার্থী।

আব্দুল আলিম নামের গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমি গোপালপুর বাজার থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম স্কুলের সামনে এসে দেখি আমার ছেলে সজিব মন্ডল স্কুলের সামনের দোকানে বসে আছে চোখ ছলছল করছে। আমি ছেলেকে বল্লাম কি হয়েছে ? তখন ছেলে বল্লো টাকা ছাড়া স্যার বই দিবেনা। আমি স্কুলের ভিতর প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষক চিত্তরন্জন পালকে বই না দেবার কারন জানতে চাইলাম তখন প্রধান শিক্ষক আমাকে বলে দিলেন সেশনফি ও উন্নয়ন ফি‘র ২শ ৫০ টাকা জমা দিয়ে বই নিয়ে যেতে হবে। টাকা ছাড়া বই দিবে না বলে জানায় প্রধান শিক্ষক চিত্তরন্জন পাল। আমার মতো অনেক অভিভাবক বইয়ের জন্য অনেক অপেক্ষা করেও খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে।

এছাড়াও একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, প্রতি বছর কোনো রকম খাত না দেখিয়ে সেশনফি ও স্কুলের উন্নয়ন ফি‘র নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২’শ ৫০ টাকা করে আদায় করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকদের কাছে বার বার অনুরোধ করেও বই পাননি বলে অভিযোগ করেন।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক চিত্তরন্জন পাল জানান, বাৎসরিক সেশন ফি বাবদ টাকা নেয়া হচ্ছে । আর কাউকে টাকা ছাড়া বই দেয়া হয়নি সেটা আমার জানানেই। বই বিতরন করেছে শ্রেনী শিক্ষক তারা এমনটি করতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মধু সুধন সাহা জানান, আমি বিষয়টি জানতে পেরে ওই স্কুলের সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলেছি প্রধান শিক্ষক কে বলে দিতে টাকা ছাড়া বই দিয়ে দিতে । আর এবিষয়ে কেউ যদি আমাকে লিখিত অভিযোগদেয় তাহলে আমি ব্যবস্থাগ্রহন করবো।

এ ব্যাপারে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্ণা রানী সাহা জানান, বই উৎসবের দিন এই অভিযোগটি আমার কানে আসার পর আমি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বল্লাম বিষয়টি দেখার জন্য। প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে সেশন ফি নেবার দরকার নাই বিনা মূল্যে বই দিতে হবে। সেশন ফি নেবার বৈধতা থাকলেও পরবর্তীতে নিতে হবে । বই উৎসবের দিন নেবার দরকার নেই । পরবর্তীতে আমি প্রধান শিক্ষক কে ডেকে বল্লাম আমি স্কুলের সভাপতি আমাকে না জানিযে কেনো এমনটি কেনো করলেন সেশন ফি নেবার বৈধতা থাকলেও পরে নিতে পারতেন। আপনার এটা করা ঠিক হয়নি।