কালীগঞ্জে দরিদ্র স্কুলছাত্র নাইমের মাস্ক সেবা
ঝিনাইদহঃ
শহর কিংবা গ্রামে সকল স্থানে প্রচার মাইকে স্বাস্থবিধি মানার জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। মহামারী থেকে রেহাই পেতে দেশের গনমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্য কর্তাদের ভাষ্য একই। সর্দি, হাছি ,কাঁশি থেকেই করোনার সংক্রমন ঘটছে। আর কার দেহে এ ভাইরাস আছে কে কোথায় থুথু ফেলছে তা কেউ জানেন না। ফলে সংক্রমনের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে মুখে মাকস পরার বিকল্প নেই। কিন্ত লকডাউনে কাপড়ের দোকান বন্ধ। ফার্মেসিগুলোতেও প্রয়োজন মত মাস্ক নেই। কিছু কিছু ফার্মেসিতে পাওয়া গেলেও লোক বুঝে দাম নিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ অল্প টাকার মাস্কে দাম নিচ্ছেন কয়েকগুন বেশি। এগুলো দেখেই ঘর থেকে বের হওয়া। নিজের ক্ষতির সম্ভাবনা মাথায় নিয়েই শহরের বিভিন্ন এলাকার পাড়া মহল্লায় ঘুরে মাস্ক বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন স্কুলছাত্র নাইম হোসেন।
সে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার হেলাই গ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে ও সরকারী নলডাঙ্গা ভূষন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র।
নাইম হোসেন জানায়,আমার বাবা শহরে দিনমজুরের কাজ করেন। এখন লকডাউনে কাজও বন্ধ। অভাব অনাটনের সংসার আমাদের। বাজারে এখন করোনা সুরক্ষার মাকস সংকট ছাড়াও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এমন অবস্থায় সাধারন দরিদ্র পরিবারগুলোর সকলের জন্য কিনতে কষ্ট হচ্ছে। এতে নিজের কিছুটা রোজগারের পাশাপাশি মানুষের সেবাও হচ্ছে। নাইম আরো জানায়, অনেক রিকসা ভ্যানচালককে শুধু কেনা দামে দিচ্ছি। একেবারেই যার টাকা নেই আবার মুখে এখনও মাস্ক পরেননি সংখ্যায় কম হলেও সে সমস্ত অসহায়দেরকে টাকা ছাড়াই বিবেকের তাড়নায় দিচ্ছি।
নাইম আরো জানায়, কুষ্টিয়া থেকে পাইকারী দামে কিনে এনে তা অত্যন্ত স্বল্প লাভে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বিক্রি করছি। লাভের টাকাটা লকডাউনের সময়ে ঘরে বসে থাকা বাবার হাতে দিচ্ছি। যা আমাদের সংসারের কাজে আসছে। অন্যদিকে আমরা গরীব মানুষ এ দুর্যোগ মূহুর্তে আমাদের কিছু দেয়ার সামর্থ নেই। নিজের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মাস্কটা কম দামে মানুষের হাতে তুলে দিয়ে মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছি।
বাবা মফিজুর রহমান জানান, আমার দুইটা ছেলে নাইম আর নাহিদ। তারা দুজনই হাইস্কুলে পড়ে। করোনার প্রভাবে এখন তাদের স্কুল বন্ধ। নিজে একজন দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ। প্রতিদিনের রোজগারে চলে তার সংসার। তারপরও দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হয়। এখন বড় ছেলে মাস্ক কিনে এনে বাজারে ঘুরে বিক্রি করছে। সব মানুষকে এখন ঘরে থাকার কথা তাই প্রথমদিকে নাইমকে বাধা দিয়েছি। কিন্ত বর্তমান সময়ে মাকস সকলেরই দরকার আর ছেলের জোরাজুরিতে আর বাধা দিইনি। এদিকে ঔষধের দোকানে মাকসের ঘাটতি। পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি নিচ্ছে। তাই এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাড়াতেই এ কাজ করছে নাইম।