কালীগঞ্জে দু’পক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা নিহত (ভিডিও)
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আরিফুল ইসলাম (৪৫) নামে ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছে পৌর কাউন্সিলরসহ কমপক্ষে ৭ জন।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন কাশিপুর বেদে পল্লীতে এ সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত আরিফ কাশিপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম লস্কারের ছেলে ও পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও আরিফুল ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
স্থানীয়রা জানায়, মাদক ও জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই কাশিপুর বেঁদে পল্লীতে সংঘর্ষ হয়। এরই জের ধরে মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে মনিরুল ও রাসেল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর করা হয়। মনিরুলের সমর্থকরা রাসেলের বাড়িতে গিয়ে হামলা করে তার মাকে মারধর করে। অপরপক্ষে রাসেলের সমর্থকরা মনিরুলের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এরপর সংঘর্ষ থেমে যায়। হঠাৎ রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আবারও দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। নিহত আরিফুলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ সময় তাকে হাসপাতালে নিতেও বাঁধা প্রদান করেন প্রতিপক্ষরা। এরপর তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে যশোরে রেফার্ড করেন। রাতে সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে ফরিদপুর পৌঁছালে আরিফুল ইসলাম মারা যান। বেঁদে সম্প্রদায়ের মনিরুল ইসলাম স্থানীয় কাউন্সিলর মেহেদী হাসান সজল ও শেখ রাসেল যুবলীগ নেতা আরিফুল ইসলামের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। বেঁদে সম্প্রদায়ের মধ্যে মনিরুল ইসলাম ও শেখ রাসেল দুটি গ্রুপে বিভক্ত।
নিহতের বড় ছেলে মাহামুদ হাসান (১৪) জানান, ঘটনার সময় সে বাইরে খেলা র্যাকেট খেলা করছিল। আব্বু ফোন করে বাসায় আসতে বলে। বাসার সামনে গিয়ে দেখি আব্বু মাটিতে পড়ে আছে।
নিহতের স্ত্রী রেশমা খাতুন জানান, মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় কাউন্সিলর মেহেদী হাসান সজল ও মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এরপর বাড়ির সামনে তার স্বামীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়। এ সময় থানা পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও তিনি পাননি। এরপর ৯৯৯ ফোন দিয়ে তিনি সহযোগিতা চাইলে বাড়ির সামনে একটি এ্যাম্বুলেন্স আসে। পরে তার স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। তিনি এ হত্যার বিচার চান। তার ছোট দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় কাউন্সিলর মেহেদী হাসান সজলের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও নিহতের ভাই রেজাউল করিম রেজা জানান, কাশিপুর গ্রামে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ রয়েছে। তার ভাই ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার ভাই ও হামলাকারীরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, কাশিপুরের বেঁদে পল্লী মাদক ও জুয়ার আখড়া। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় মাদক ও জুয়া নিয়ে দুটি গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। এরই জের ধরে গতকাল হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। তবে হামলায় জড়িতদের তদন্তপূর্বক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্ল্যা জানান, বেঁদে সম্প্রদায়ের মধ্যে দুটি গ্রুপ আছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন মনিরুল ও অন্যপক্ষে শেখ রাসেল। কিছুদিন আগে সাবনুর নামে এক মেয়ে বাদী হয়ে শেখ রাসেলের নামে নারী নির্যাতনের মামলা করেন। এরপর গতকাল আবারও শেখ রাসেলের নামে মামলা করেন সাবনুর। এটা নিয়ে গতকাল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হত্যার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতকালকের ঘটনা মাদক ও জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে ঘটেনি।
ভিডিও…