কালীগঞ্জে বিশ্বমানের মসজিদে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
সবুজদেশ ডেস্ক:
সুবিশাল এরিয়া জুড়ে বিশ্বমানের একটি মসজিদ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটি উন্নত ইসলামিক রাষ্ট্রের আদলে নির্মিত। অবাক করা বিষয় হলো, একদম অজোপাড়াগাঁয়ে নির্মিত বিশ্বমানের দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন অনেক মানুষ। মসজিদের বিশাল কমপ্লেক্স ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
বলছিলাম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের বেলাট গ্রামের নামানুসারে নির্মিত মসজিদটির কথা। দুই একর জমির ওপর ২০১৯ সালের শেষের দিকে মসজিদটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে উদ্বোধন করা হয়।
প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেছে আদ্ব-দ্বীন ফাউন্ডেশন। তৃতীয় তলাবিশিষ্ট মসজিদটির রং করা হয়েছে আকাশি রঙে। ধবধবে সাদা ও হালকা আকাশি রঙের সংমিশ্রণে নির্মিত মসজিদটিতে রয়েছে রঙের সঙ্গে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন সব কারুকাজ।
মসজিদটির চারপাশের বাউন্ডারি ওয়ালেও রয়েছে ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য। মসজিদে ঢুকেই ডানে বিশাল গোরস্থান ও বামে রয়েছে বিভিন্ন ফুলের বাগান। নারী-পুরুষের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ওযু ও নামাযের ব্যবস্থা। প্রায় এক হাজার মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন এই মসজিদে। মসজিদটি একনজর দেখতে ও নামাজ আদায় করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা আসছেন প্রতিনিয়ত। মসজিদের সঙ্গেই রয়েছে বিশালাকার মিনার।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুবিশাল এরিয়া জুড়ে বিশ্বমানের মসজিদ কমপ্লেক্সটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদের ১ম ও ২য় তলায় পুরুষ ও নারীদের নামাজের সুব্যবস্থা আছে। ৩য় তলায় রয়েছে হাফেজিয়া মাদ্রাসা। একটানা দুই বছর মসজিদটির নির্মাণ কাজ চলছে। মসজিদটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
দেয়ালে লাগানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আল্লাহ ও মুহাম্মদ (সা.) লেখা বিভিন্ন রঙের দামি টাইলস। মসজিদের এক পাশে কবরস্থান, অন্যপাশে ফুলের বাগান। গ্রামের মধ্যে এমন আধুনিক নকশা ও উন্নত নামাজের ব্যবস্থা গর্বিত এলাকাবাসী।
কালীগঞ্জ সরকারি মাহাতাব উদ্দীন কলেজের প্রভাষক ইসমাইল হোসেন জানান, তিনি অনেক দিন ধরেই শুনে আসছেন বেলাট গ্রামে একটি বিশ্বমানের মসজিদ হয়েছে। তাই শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়তে ও দেখতে এসেছেন। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আরব দেশগুলোতে যেমন মসজিদ দেখেছেন, ঠিক তেমনি এই গ্রামের মসজিদটি। মসজিদটি একনজর দেখতে ও জুম্মার নামাজ আদায় করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিদের সমাগম হচ্ছে এই বেলাট গ্রামে।
বেলাট গ্রামের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, তাদের গ্রামে ছোট একটি মসজিদ ছিল, তবে সেটি তেমন সুন্দর ছিল না। তখন বাইরে থেকে কেউ তাদের গ্রামে আসত না। পরবর্তীতে আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এই মসজিদটা নির্মাণ হয়েছে। এখানে অনেক সুন্দর ব্যবস্থা আছে। মসজিদটি তিন তলাবিশিষ্ঠ, প্রথম তলায় শুধু পুরুষ ও ২য় তলার এক পাশে পুরুষ ও এক পাশে নারীদের নামাজের স্থান এবং ৩য় তলায় মাদ্রাসা রয়েছে। এমনকি পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা আলাদা অযুর ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের গ্রামে এখন প্রতিদিন এই মসজিদটি দেখতে বাহির থেকে শত শত দর্শনার্থী আসছে।
গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল গণি বিশ্বাস জানান, এই মসজিদ চত্বরে তার বাবা, দাদা সবাই শায়িত আছেন। আগেও এখানে মসজিদ ছিল, কিন্তু সেটা ছোট ছিল। আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন ২০১৯ সালে এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করে। তিন তলাবিশিষ্ট এই মসজিদের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। এখন মসজিদে ঢুকতেই এক পাশে কবরস্থান ও এক পাশে ফুলের বাগান দেখে মনে হয় এটি জান্নাতের বাগিচা।
বারোবাজারে অনেক পুরাতন কীর্তি মসজিদ আছে। কিন্তু আমাদের এই বেলাট গ্রামে বিশ্বমানের মসজিদ দেখতে প্রতিদিন অনেক লোক আসছেন। আমাদের গর্বের বিষয় হলো, বিশ্বমানের মসজিদের কারণে এই গ্রামকে দেশের মানুষ চিনতে পারবে।
বেলাট মসজিদের ইমাম আল আমিন বলেন, এখানে আগে ছোট একটা মসজিদ ছিল, তখন নামাজের সময় তেমন মুসল্লি হতো না। এই মসজিদটি নির্মাণ হবার পর থেকে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি অনেক বেড়েছে। আবার প্রতি শুক্রবার বাহির থেকে অনেক মুসল্লি আসছেন একনজর দেখা ও জুম্মার নামাজ আদায় করতে।
তিনি আরও বলেন, আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এই গ্রামকে আগে মানুষ চিনতো না। সেখানে অনেক দূর থেকে মানুষ আসছেন শুধুমাত্র এক নজর দেখতে। আগন্তুক অনেকেই চাচ্ছেন এ মসজিদের আদলে তাদের এলাকায় তারা মসজিদ নির্মাণ করবেন।
এই মসজিদের ৩য় তলায় এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। মসজিদের খরচ, শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার খরচ সবই আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন দিচ্ছে। এমন একটি মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পেয়ে আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।