ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জে মৃত ব্যক্তির নামে ভূয়া ঋণ উত্তোলনের অভিযোগ

Reporter Name

ছবিঃ আবদুল হামিদ।

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় মৃত ব্যক্তির নামে ৬ লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা গেছে, আজগার আলীর বাবা আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন ১২ বছর আগে। কিন্তু ৪ বছর আগে তার বাবার নাম ব্যবহার করে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়াও নিতাই কুমার মারা গেছে ২২ বছর আগে। তার নামেও চার বছর আগে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের আবদুল হামিদ এভাবে ২০জন মৃত ব্যক্তির ভ‚য়া ঋণ দেখিয়ে ৬ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন।

এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী আব্দুল হামিদ দাবি করেছেন, টাকাগুলো মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা নিয়েছিল। যা ইতিমধ্যে পরিশোধ হয়ে গেছে। সেখানে নতুন ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম চলছে বলে জানান। আগামী সপ্তাহে এই ঋণ দেওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন ওই কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের দরিদ্র ২০ ব্যক্তির নামে ঋণ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। ওই ঋণের টাকাও উত্তোলন করা হয় ডিসেম্বরেই। এদের মধ্যে ৬ জন আছেন যারা এই ঋণ বরাদ্ধ ও উত্তোলনের অনেক পূর্বেই মারা গেছেন। এরা হলেন, দলিল উদ্দিনের পুত্র আব্দুস সাত্তার, মকলেচুর রহমানের পুত্র আবুল হোসেন, আফজেল হোসেনের পুত্র আনোয়ার হোসেন, তৈয়ব আলীর পুত্র রবিউল ইসলাম, হিরু লালের পুত্র নিতাই কুমার ও মানিক চন্দ্রের পুত্র শক্তিপদ। এছাড়া আব্দুল মান্নানের পুত্র আব্দুল বারিক ৫ বছর পূর্বে বিদেশে গেলেও তার নামে ৪ বছর পূর্বে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে।

সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় ব্যাংকার রেজাউল করিম জানান, এই ঋণের বিষয়ে যা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। তার নামেও ঋণ দেখানো হয়েছে। অথচ তিনি এর কিছুই জানেন না। রেজাউল করিম আরো জানান, তিনিসহ যাদের নামে এই ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে তারা জানতে পেরে সকলেই হতবাক হয়েছেন। এরপর তারা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

একই গ্রামের আজগার আলী জানান, তার বাবা আনুমানিক ১২ বছর পূর্বে এক ট্রেন দূর্ঘটনায় মারা যান। মৃত বাবার নামে ঋণ উত্তোলনের খবরে তিনি হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঋণ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তারা কোনো ঋণ নেননি। তিনি দাবি করেন, যারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হওয়া জরুরী। আরেকজন শাহাদত হোসেন জানান, তার বাবা আব্দুস সাত্তার ঋণ এর টাকা উত্তোলনের পূর্বেই মারা গেছেন। মৃত বাবার নামে এই ঋণ দেখানো হয়েছে। তিনি জানান, বাবা কেন তারা নিজেরাও কখনও ঋণ নেননি। সম্পূর্ণ ভুয়া ভাবে এই ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে।

ব্যাংকার রেজাউল করিম আরো জানান, তারা এই ঋণের বিষয়ে লিখিত দেওয়ার পর কর্মকর্তারা খুব বাড়িতে আসছেন। আনুমানিক এক মাস পূর্বে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে আব্দুল হামিদ নামের ওই কর্মকর্তা এসে তাদের খুব অনুরোধ করেছেন। বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেছেন। তিনি ইতিমধ্যে টাকাও পরিশোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এটা খুবই খারাপ কাজ, মৃত ব্যক্তির নামে ঋণের টাকা উত্তোলন।

এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ সাইদুর রহমান রেজা জানান, তিনি বিষয়টির তদন্ত করেছেন বক্তব্য নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট তদন্ত রির্পোট জমা দিয়েছেন।

About Author Information
আপডেট সময় : ১২:০৭:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
৭৭১ Time View

কালীগঞ্জে মৃত ব্যক্তির নামে ভূয়া ঋণ উত্তোলনের অভিযোগ

আপডেট সময় : ১২:০৭:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় মৃত ব্যক্তির নামে ৬ লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা গেছে, আজগার আলীর বাবা আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন ১২ বছর আগে। কিন্তু ৪ বছর আগে তার বাবার নাম ব্যবহার করে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়াও নিতাই কুমার মারা গেছে ২২ বছর আগে। তার নামেও চার বছর আগে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের আবদুল হামিদ এভাবে ২০জন মৃত ব্যক্তির ভ‚য়া ঋণ দেখিয়ে ৬ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন।

এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী আব্দুল হামিদ দাবি করেছেন, টাকাগুলো মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা নিয়েছিল। যা ইতিমধ্যে পরিশোধ হয়ে গেছে। সেখানে নতুন ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম চলছে বলে জানান। আগামী সপ্তাহে এই ঋণ দেওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন ওই কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের দরিদ্র ২০ ব্যক্তির নামে ঋণ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। ওই ঋণের টাকাও উত্তোলন করা হয় ডিসেম্বরেই। এদের মধ্যে ৬ জন আছেন যারা এই ঋণ বরাদ্ধ ও উত্তোলনের অনেক পূর্বেই মারা গেছেন। এরা হলেন, দলিল উদ্দিনের পুত্র আব্দুস সাত্তার, মকলেচুর রহমানের পুত্র আবুল হোসেন, আফজেল হোসেনের পুত্র আনোয়ার হোসেন, তৈয়ব আলীর পুত্র রবিউল ইসলাম, হিরু লালের পুত্র নিতাই কুমার ও মানিক চন্দ্রের পুত্র শক্তিপদ। এছাড়া আব্দুল মান্নানের পুত্র আব্দুল বারিক ৫ বছর পূর্বে বিদেশে গেলেও তার নামে ৪ বছর পূর্বে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে।

সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় ব্যাংকার রেজাউল করিম জানান, এই ঋণের বিষয়ে যা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। তার নামেও ঋণ দেখানো হয়েছে। অথচ তিনি এর কিছুই জানেন না। রেজাউল করিম আরো জানান, তিনিসহ যাদের নামে এই ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে তারা জানতে পেরে সকলেই হতবাক হয়েছেন। এরপর তারা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

একই গ্রামের আজগার আলী জানান, তার বাবা আনুমানিক ১২ বছর পূর্বে এক ট্রেন দূর্ঘটনায় মারা যান। মৃত বাবার নামে ঋণ উত্তোলনের খবরে তিনি হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঋণ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তারা কোনো ঋণ নেননি। তিনি দাবি করেন, যারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হওয়া জরুরী। আরেকজন শাহাদত হোসেন জানান, তার বাবা আব্দুস সাত্তার ঋণ এর টাকা উত্তোলনের পূর্বেই মারা গেছেন। মৃত বাবার নামে এই ঋণ দেখানো হয়েছে। তিনি জানান, বাবা কেন তারা নিজেরাও কখনও ঋণ নেননি। সম্পূর্ণ ভুয়া ভাবে এই ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে।

ব্যাংকার রেজাউল করিম আরো জানান, তারা এই ঋণের বিষয়ে লিখিত দেওয়ার পর কর্মকর্তারা খুব বাড়িতে আসছেন। আনুমানিক এক মাস পূর্বে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে আব্দুল হামিদ নামের ওই কর্মকর্তা এসে তাদের খুব অনুরোধ করেছেন। বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেছেন। তিনি ইতিমধ্যে টাকাও পরিশোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এটা খুবই খারাপ কাজ, মৃত ব্যক্তির নামে ঋণের টাকা উত্তোলন।

এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ সাইদুর রহমান রেজা জানান, তিনি বিষয়টির তদন্ত করেছেন বক্তব্য নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট তদন্ত রির্পোট জমা দিয়েছেন।