ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রেমের টানে যশোর থেকে পালিয়ে আসা অপ্রাপ্ত বয়স্ক এক কিশোরীকে উদ্ধার করতে এসে মারধরের শিকার হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য। এদিকে হাতাহাতি ঠেকাতে গিয়ে গুরুত্বর আহত হয়েছেন বাকুলিয়া গ্রামের মাছুরা খাতুন নামে এক গৃহিণী। তিনি উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামের আসাদুজ্জামানের স্ত্রী।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে কালীগঞ্জ শহরের বাকুলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- যশোর কোতয়ালি থানার এএসআই তাপস কুমার, কনেস্টবল রাবেয়া খাতুন ও ফারজানা খাতুন।

স্থানীয়রা জানায়, বাকুলিয়া গ্রামের সুজন হোসেন যশোরের পুলের হাট এলাকার অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গত ২ মে যশোর কোতয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির বাবা। এরপর মেয়েটিকে দিয়ে দেওয়ার জন্য কয়েকবার মেয়ের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে ছেলের পরিবার। তারই প্রেক্ষিতে সোমবার দুপুরে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস যোগে যশোর কোতয়ালি থানার ৪ পুলিশ সদস্য ও মেয়ের বাবা ও ভাই কালীগঞ্জ উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামে আসে। এ সময় অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে নারী কনস্টেবল রাবেয়া টেনেহিচড়ে এবং সেখানে উপস্থিত নারীদের ধাক্কা দিয়ে বের করে নিয়ে আসতে চাই। এ সময় ওই মেয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু নারী কনস্টেবল রাবেয়া ও ফারজানা সবাইকে ধাক্কা দিয়ে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে। এসময় স্থানীয় নারীরা ঠেকাতে গেলে তাদের সাথে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি হয়। এ সময় নারী কনস্টেবল রাবেয়া এক নারীর নাকে ঘুষি দেন। সাথে সাথে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ওই নারী রক্তাক্ত হওয়ার পর স্থানীয় জনতা পুলিশকে ধাওয়া দেয় ও মারধর করে। এ সময় তারা গাড়িতে আশ্রয় নেয়। তবে ওই কিশোরীকে উদ্ধারের সময় কোন পুলিশ সদস্য ইউনিফর্ম পরিহিত ছিল না বলে জানায় স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে কালীগঞ্জ থানার ওসি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত তিন পুলিশ সদস্য ও ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এরমধ্যে আহত তিন পুলিশ সদস্য কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বাকুলিয়া গ্রামের যুবক আহমেদ সুজন বলেন, সাদা পোশাকে কয়েকজন পুলিশসহ ওই ছেলের বাড়িতে আসে। এ সময় তাদের বসতে বলে ছেলের পরিবারের লোকজন। তারা কথা না শুনে ঠেলতে ঠেলতে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ছেলেকে মারধর করে এএসআই তাপস কুমার পাল। পরে ওই মেয়েকে আনার সময় মাছুরার নাকে ঘুষি মারে কনস্টেবল রাবেয়া। এ সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান তিনি। নাক দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। পুলিশের কেউ ইউনিফর্ম পরিহিত ছিল না। ঘটনার পরে পুলিশ কনস্টেবল রাবেয়া মাইক্রোবাসের মধ্যে ইউনিফর্ম পরে।
মাছুরা খাতুনের স্বামী আসাদুজ্জামান বলেন, এটা তাদের পরিবারের কোন বিষয় না। বাড়ির পাশের ঘটনা হওয়ায় তার স্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন। হঠাৎ পুলিশ আমার স্ত্রীর নাকে ঘুসি মারে। তার স্ত্রীর অবস্থা বেশি ভালো না। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার জানান, বাকুলিয়া গ্রামের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরিকে উদ্ধারে গেলে হামলার শিকার হয় তিন পুলিশ সদস্য। আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যশোর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি গিয়ে ভিকটিম কিশোরী ও তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তবে শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত হয়েছে জানি না।
সবুজদেশ/এসএএস
নিজস্ব প্রতিবেদক: 



















