ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাকুলিয়া গ্রামে সাদা পোশাকে কিশোরী উদ্ধারে গিয়ে সাধারণ মানুষের উপর পুলিশের হামলা এবং অন্যায় ভাবে নিরীহ মানুষের নামে মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘন্টাব্যাপী ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের খয়েরতলা-বাকুলিয়া এলাকায় বাকুলিয়া ও খয়েরতলা গ্রামবাসী এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে গ্রাম দুটির শতাধিক নারী অংশ নেয়।
এ ঘটনায় যশোর কোতয়ালী থানার পুলিশ কনস্টেবল শওকত আলী বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু আটককৃতরা ঘটনার সাথে জড়িত না ও সাধারণ কৃষক বলে দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা।

মানববন্ধনে বাকুলিয়া গ্রামের গৃহবধু শিউলি খাতুন বলেন, সোমবার বিকালে কয়েকজন পুলিশ বাকুলিয়া গ্রামে আসে। তাদের শরীরে পুলিশের কোন পোশাক ছিল না। সাদা পোশাকে এসে ওই কিশোরীকে জোরপূর্বক উদ্ধার করে নিয়ে যেতে চাই। এ সময় হাতাহাতি হয়। এরপর এক নারী পুলিশ তার হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে মাছুরার নাকে আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
কনিকা খাতুন নামে আরেক গৃহবধু বলেন, এখনো সেই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের মতো আচরণ করছে পুলিশ। গ্রামে কোন পুরুষ মানুষ নেই। সবাই আতংকে দিন কাটাচ্ছে। এখন ধান কাটার সময়। কিন্তু কেউ মাঠে কাজে যেতে পারছে না। রাত হলে গ্রামে কোন পুরুষ থাকতে পারছে না। পুলিশ এসে নীরিহ মানুষদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। গভীর রাতে মাঠ থেকে ধান আনার সময় দুইজনকে ধরে নিয়ে গেছে এই মামলায়।
আলমগীর হোসেন নামে বাকুলিয়া গ্রামের এক যুবক বলেন, পুলিশের আতংকে বাকুলিয়া গ্রামে পুরুষ মানুষ রাতে বাড়িতে থাকতে পারছে না। রাতে গ্রামের নারীরা সন্তানদের নিয়ে আতংকে রাত কাটাচ্ছে। পুলিশ সাদা পোশাকে পরিচয় না দিয়ে কেন একটা মেয়েকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবে। তারা কেন পুলিশ পরিচয় দেয়নি, কেন পুলিশের পোশাক বাদে এসেছে। এটা তো অন্যায়। তারা অন্যায় করলো অথচ পুলিশ বাদী হয়ে গ্রামের মানুষের নামে মামলা দিয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার (০৫ মে) বিকেলে যশোর কোতয়ালী থানা থেকে এএসআই তাপস কুমার পাল, কনস্টেবল রাবেয়া খাতুন ও ফারজানা খাতুন পুলের হাট এলাকার এক কিশোরীকে উদ্ধারে সাদা পোশাকে (সিভিল পোশাক) বাকুলিয়া গ্রামে যায়। সেসময় তারা প্রথমে সুজনের ঘরে ঢুকে তাকে চড়থাপ্পড় মেরে মেয়েটিকে হাত ধরে টেনে বের করে নিয়ে আসে। সে সময় অন্যরা প্রতিবাদ করলে কয়েকজনকে তারা থাপ্পড় মারে। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হলে তারা হাতাহাতিতে জড়ায়। এ সময় পুলিশ সদস্য রাবেয়া এক গৃহবধুর নাকে ঘুসি মারলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পরে এলাকার ৬/৭ জন ক্ষিপ্ত হয়ে তিন পুলিশ সদস্যকে মারধর করে।
কালীগঞ্জ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ সদস্য শওকত আলী বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
সবুজদেশ/এসএএস