ঢাকা ১১:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জে হোটেল শ্রমিককে মাদক দিয়ে ফাঁসানোসহ অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

Reporter Name

দুইজনকে হাতকড়া লাগানো হলেও মামলা দেওয়া হয়েছে একজনের নামে। ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ।

বিশেষ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় মাদক না পেয়েও মাদক দিয়ে ঘুমন্ত আলমগীর হোসেন নামে এক হোটেল শ্রমিককে ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় নগদ ৭৪ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আলমগীর হোসেন শহরের নিমতলা এলাকার থ্রি-স্টার হোটেলের শ্রমিক ও উপজেলার সোনালীডাঙ্গা এলাকার গোলাম নবীর ছেলে।

জানা গেছে, গত বুধবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত (২১ জুন) ঝিনাইদহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের একটি দল কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজারের ঢাকালে পাড়া এলাকায় জুয়েল রানার বাড়িতে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করেন। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঝিনাইদহ মাদক নিয়ন্ত্রণ অফিসের উপ পরিদর্শক আলতাফ হোসেন। এই সময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিদর্শক মোহাম্মদ বোরহানুর রহমান মৃধা, সহকারী পরিদর্শক আব্দুর রশিদ, সহকারী পরিদর্শক পাপিয়া সুলতানা, ড্রাইভার ইদ্রিস মোল্যাসহ কয়েকজন।

জুয়েল রানার ঘরের মধ্যে রাখা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ঘরের মধ্যে বিভিন্ন আসবাবপত্র, ড্রয়ার তল্লাশি করছেন। এ সময় জুয়েল রানা ও আলমগীর হোসেনকে হ্যান্ডকাপ লাগানো দেখা গেছে। তবে মামলায় শুধুমাত্র আলমগীর হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যাওয়ার আগে জুয়েল রানার শয়ন কক্ষের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর করে রেখে যায়।

মামলার এজাহারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক আলতাফ হোসেন উল্লেখ করেন, শহরের ঢাকালেপাড়া এলাকায় উজ্জল দাসের বাড়ির সামনে ইটের সলিং রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা আসামি আলমগীর হোসেনকে দুপুর ১ টার দিকে ঘেরাও পূর্বক আটক করি। এ সময় স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে তার দেহ তল্লাশি করে ১৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করি। এ মামলায় দুইজনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার ১নং স্বাক্ষী আসাদুল জামান বাবু জানান, ঝিনাইদহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের হাতে তিনি ৬৮ হাজার টাকা প্রদান করেছেন।

মামলার আরেক স্বাক্ষী উপজেলার দেবরাজপুর গ্রামের অধির দাসের ছেলে বিকাশ দাস জানান, তিনি পৌরসভায় কাজ করেন। ওই দিন তিনি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। একটা লোক এসে তাকে ডাক দেয়। তাকে জোরপূর্বক জুয়েলের ঘরে নিয়ে গিয়ে কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। এরপর তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। কাকে আটক করেছে সেটাও জানতেন না। মাদক উদ্ধার এবং এই মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি।

ঢাকালে পাড়ার বাসিন্দা জুয়েল রানা বলেন, আমার বাড়িতে কয়েকদিন ধরে উপজেলার সোনালীডাঙ্গা গ্রামের গোলাম নবীর ছেলে আলমগীর হোসেন নামে এক আত্মীয় অবস্থান করছিল। সে থ্রি স্টার হোটেলে মিষ্টি তৈরির কাজ করে। অভিযানের দিন মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অফিসের কয়েকজন ব্যক্তি আমার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে তল্লাশি করতে থাকে। এক পর্যায়ে কোন মাদক না পেয়ে পাশের ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় আলমগীরকে ডেকে আমাকে সহ আলমগীরকে হাতকড়া পরিয়ে ১৭ পিস ইয়াবার কৌটা হাতে ধরিয়ে দেন উপ পরিদর্শক আলতাফ হোসেন।

তিনি আরো জানান, তাকে ও তার সহধর্মিনীকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। সেখানে উপস্থিত এই মামলার এক নম্বর সাক্ষী আসাদুল জামান বাবুর মাধ্যমে দেন দরবার করে জুয়েলের সহধর্মিনী। পরবর্তীতে বাবুর হাত থেকে সহকারী পরিদর্শক আব্দুর রশিদ ৬৮ হাজার টাকা নগদ গ্রহন করেন এবং তল্লাশি সময়ে জুয়েলের মানিব্যাগ থেকে ৬ হাজার টাকাও তারা নিয়ে নেন। একই সাথে আলাদা ঘরে জুয়েল ও তার স্ত্রীর নিকট থেকে জোরপূর্বক তাদের পক্ষে ভিডিও বক্তব্য ধারণ করেন। এ সময়ে শয়ন কক্ষে থাকা সিসি ক্যামেরা তারা ভাংচুর করে রেখে চলে যায় তারা।

জুয়েল রানার স্ত্রী নাসরিন বেগম জানায়, তাদের কাছে কোন মাদক পাইনি। মাদক তারা নিজেরা এনে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তার স্বামী ও ভাইয়া (আলমগীর) ঘুমিয়ে ছিল। তাদের ঘুমন্ত অবস্থায় উঠিয়ে তাদের হাতকড়া পরানো হয়। এ সময় তারা টাকা লেনদেন না করলে তাকেও মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য বলেন তারা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের উপ পরিদর্শক আলতাফ হোসেন টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তাদের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে। এজন্য সেটি খুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক গোলক মজুমদার বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে প্রমাণ থাকলে আমাকে দেন, আমি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Tag :

About Author Information
Update Time : ১০:১৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩
৮৮ Time View

কালীগঞ্জে হোটেল শ্রমিককে মাদক দিয়ে ফাঁসানোসহ অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

Update Time : ১০:১৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় মাদক না পেয়েও মাদক দিয়ে ঘুমন্ত আলমগীর হোসেন নামে এক হোটেল শ্রমিককে ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় নগদ ৭৪ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আলমগীর হোসেন শহরের নিমতলা এলাকার থ্রি-স্টার হোটেলের শ্রমিক ও উপজেলার সোনালীডাঙ্গা এলাকার গোলাম নবীর ছেলে।

জানা গেছে, গত বুধবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত (২১ জুন) ঝিনাইদহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের একটি দল কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজারের ঢাকালে পাড়া এলাকায় জুয়েল রানার বাড়িতে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করেন। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঝিনাইদহ মাদক নিয়ন্ত্রণ অফিসের উপ পরিদর্শক আলতাফ হোসেন। এই সময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিদর্শক মোহাম্মদ বোরহানুর রহমান মৃধা, সহকারী পরিদর্শক আব্দুর রশিদ, সহকারী পরিদর্শক পাপিয়া সুলতানা, ড্রাইভার ইদ্রিস মোল্যাসহ কয়েকজন।

জুয়েল রানার ঘরের মধ্যে রাখা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ঘরের মধ্যে বিভিন্ন আসবাবপত্র, ড্রয়ার তল্লাশি করছেন। এ সময় জুয়েল রানা ও আলমগীর হোসেনকে হ্যান্ডকাপ লাগানো দেখা গেছে। তবে মামলায় শুধুমাত্র আলমগীর হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যাওয়ার আগে জুয়েল রানার শয়ন কক্ষের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর করে রেখে যায়।

মামলার এজাহারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক আলতাফ হোসেন উল্লেখ করেন, শহরের ঢাকালেপাড়া এলাকায় উজ্জল দাসের বাড়ির সামনে ইটের সলিং রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা আসামি আলমগীর হোসেনকে দুপুর ১ টার দিকে ঘেরাও পূর্বক আটক করি। এ সময় স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে তার দেহ তল্লাশি করে ১৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করি। এ মামলায় দুইজনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার ১নং স্বাক্ষী আসাদুল জামান বাবু জানান, ঝিনাইদহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের হাতে তিনি ৬৮ হাজার টাকা প্রদান করেছেন।

মামলার আরেক স্বাক্ষী উপজেলার দেবরাজপুর গ্রামের অধির দাসের ছেলে বিকাশ দাস জানান, তিনি পৌরসভায় কাজ করেন। ওই দিন তিনি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। একটা লোক এসে তাকে ডাক দেয়। তাকে জোরপূর্বক জুয়েলের ঘরে নিয়ে গিয়ে কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। এরপর তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। কাকে আটক করেছে সেটাও জানতেন না। মাদক উদ্ধার এবং এই মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি।

ঢাকালে পাড়ার বাসিন্দা জুয়েল রানা বলেন, আমার বাড়িতে কয়েকদিন ধরে উপজেলার সোনালীডাঙ্গা গ্রামের গোলাম নবীর ছেলে আলমগীর হোসেন নামে এক আত্মীয় অবস্থান করছিল। সে থ্রি স্টার হোটেলে মিষ্টি তৈরির কাজ করে। অভিযানের দিন মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অফিসের কয়েকজন ব্যক্তি আমার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে তল্লাশি করতে থাকে। এক পর্যায়ে কোন মাদক না পেয়ে পাশের ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় আলমগীরকে ডেকে আমাকে সহ আলমগীরকে হাতকড়া পরিয়ে ১৭ পিস ইয়াবার কৌটা হাতে ধরিয়ে দেন উপ পরিদর্শক আলতাফ হোসেন।

তিনি আরো জানান, তাকে ও তার সহধর্মিনীকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। সেখানে উপস্থিত এই মামলার এক নম্বর সাক্ষী আসাদুল জামান বাবুর মাধ্যমে দেন দরবার করে জুয়েলের সহধর্মিনী। পরবর্তীতে বাবুর হাত থেকে সহকারী পরিদর্শক আব্দুর রশিদ ৬৮ হাজার টাকা নগদ গ্রহন করেন এবং তল্লাশি সময়ে জুয়েলের মানিব্যাগ থেকে ৬ হাজার টাকাও তারা নিয়ে নেন। একই সাথে আলাদা ঘরে জুয়েল ও তার স্ত্রীর নিকট থেকে জোরপূর্বক তাদের পক্ষে ভিডিও বক্তব্য ধারণ করেন। এ সময়ে শয়ন কক্ষে থাকা সিসি ক্যামেরা তারা ভাংচুর করে রেখে চলে যায় তারা।

জুয়েল রানার স্ত্রী নাসরিন বেগম জানায়, তাদের কাছে কোন মাদক পাইনি। মাদক তারা নিজেরা এনে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তার স্বামী ও ভাইয়া (আলমগীর) ঘুমিয়ে ছিল। তাদের ঘুমন্ত অবস্থায় উঠিয়ে তাদের হাতকড়া পরানো হয়। এ সময় তারা টাকা লেনদেন না করলে তাকেও মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য বলেন তারা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের উপ পরিদর্শক আলতাফ হোসেন টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তাদের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে। এজন্য সেটি খুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক গোলক মজুমদার বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে প্রমাণ থাকলে আমাকে দেন, আমি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।