বিশেষ প্রতিনিধিঃ

পড়াশোনার পাশাপাশি ঝিনাইদহে শিশু নিলয় ফাউন্ডেশনে চাকরি করতেন। প্রায় দুই বছর আগে বিয়েও করেন। গত ৫ মাস আগে এক ছেলে সন্তানের বাবাও হয়েছেন। ছেলের নাম রাখেন স্বপ্নীল। কিন্তু পরীক্ষা দিতে গিয়ে আর ছেলের কাছে জীবিত ফিরে আসতে পারেননি সনাতন দাস। বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি।

সনাতন দাস ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের রনজিৎ দাসের ছেলে।

গত বুধবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকার বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে মাস্টার্সের ৬ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।

গত ২৫ জানুয়ারি নিজের ফেসবুকে ছেলের ছবি দিয়ে লেখেন- আমার বাবা, সন্দীপ দাস (স্বপ্নীল)। এর আগে ১৯ জানুয়ারি দুটি ছবির পোস্টে ক্যাপশন লিখেছেন ‘ না জানি কে কবে কোথায় হারিয়ে যায়, এজন্য একটু স্মৃতি ধরে রাখলাম।’ এমএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষার্থী সনাতন দাস।

দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শিক্ষার্থীদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। কালীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের সনাতন কুমার দাসের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর বাবা-মা। রাজমিস্ত্রির কাজ করে ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছিলেন বাবা রণজিৎ কুমার দাস।

বাবা রণজিৎ দাস বলেন, খুব কষ্ট করে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি। খেয়ে না খেয়ে তার খরচ দিচ্ছিলাম। একদিন সে চাকরি করে অভাব ঘুচাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ফিঁকে হয়ে গেছে। তার একটি পাঁচ মাসের সন্তান রয়েছে। কীভাবে তাকে মানুষ করব সেটা ভেবে পাচ্ছি না।

সনাতন দাসের স্ত্রী দিপ্তী রানী বলেন, তাদের একটি ৫ মাসের ছেলে সন্তান রয়েছে। কিভাবে এখন ছেলেকে মানুষ করবো ভেবে পাচ্ছি না।

সন্তানকে হারিয়ে কথা বলতে পারছেন মা দুর্গা রানী। মাঝে মাঝে বলে উঠছেন, আমাদের আগে আমার মনি (সনাতন) চলে গেল। বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের। দুই-একটি কথা বলেই আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।

সরকারি এমএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল মজিদ বলেন, বুধবার মার্স্টাসের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা এলাকার শিক্ষার্থীরা বাসে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে বারোবাজারে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই দুর্ঘটনায় আমাদের কলেজের ৬জন শিক্ষার্থী নিহতের খবর পেয়েছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here