কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রধান সহকারী আমিনুল ইসলাম ঠান্ডুর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তৃতীয় শ্রেণির চাকরি করেও তিনি গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত না হলেও বিগত মেয়রদের আস্থাভাজন হয়ে নানা প্রভাব খাটিয়ে তিনি রাতারাতি সম্পদশালী হয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
আমিনুল ইসলাম ঠান্ডু কালীগঞ্জ উপজেলার মেগুরখির্দা গ্রামের আফসার মণ্ডলের ছেলে। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। বাবার ছিল মাত্র ২ বিঘা জমি। আর্থিক কষ্টে বড় হওয়া ঠান্ডু ১৯৯২ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভায় করণিক পদে চাকরিতে যোগ দেন। এরপর থেকেই তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। ২০০৭ সালে প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, মকছেদ আলী বিশ্বাস ও আশরাফুল আলম আশরাফের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন তিনি। পৌরসভার অনাপত্তিপত্র, অডিটোরিয়াম ভাড়া, বিভিন্ন টেন্ডার ও উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব তার হাত দিয়েই হতো। ঠিকাদারদের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিম্নমানের কাজ করিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া উন্নয়নমূলক প্রকল্পের টাকা থেকেও ঘুস নিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে পৌরসভার ঠিকাদারি লাইসেন্সের টাকা গ্রহণ করেন এই ঠান্ডু। পৌরসভার নির্ধারিত ফি বাদেও লাইসেন্স প্রতি ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুস নেন পৌরসভার এই কর্মচারী।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ সালে শহরের বনানীপাড়ায় ৬ লাখ টাকা শতক দরে ৫ শতক জমি কিনে সেখানে তিনতলা ভবন নির্মাণ করেন আমিনুল ইসলাম ঠান্ডু। ২০২৩ সালে একই স্থানে আরও ৪ শতক জমি কেনেন। বর্তমানে ভবন ও জমির বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। এছাড়া গ্রামের মাঠে ৮ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। এছাড়াও তার ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
মেগুরখির্দা গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমিনুলের বাবার ছিল মাত্র ২ বিঘা জমি। কিন্তু পৌরসভার চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর তিনি গ্রামের মাঠে প্রায় ৮ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে এক দাগেই আছে ৩ বিঘা ১৩ কাঠা জমি।’
পৌরসভার এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে পৌরসভার বেতন ৭-৮ মাস পর্যন্ত বাকি থাকত। কিন্তু ৫ আগস্টের পর নতুন প্রশাসক বকেয়া পরিশোধ করেছেন। পূর্বের মেয়রদের আমলে কর্মচারীরা চরম কষ্টে দিন কাটাত, অথচ ঠান্ডু ছিলেন প্রভাবশালী।’
অভিযোগের বিষয়ে আমিনুল ইসলাম ঠান্ডু বলেন, ‘অনেক কষ্টে বড় হয়েছি। চাকরি পাওয়ার পর স্বাবলম্বী হয়েছি। শহরে তিনতলা বাড়ি ও কিছু জমি কিনেছি। গ্রামের জমি আগেই কিনেছি। বর্তমানে পৌরসভার বেতন নিয়মিত।’ তবে কীভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হলেন, তার সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মো. দেদারুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সবুজদেশ/এসএএস