কি ধরনের কথা এটা …
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে করা মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অপরাধী এবং পলায়নপর মনোবৃত্তি থাকাতেই তিনি (খালেদা জিয়া) বিচারের মুখোমুখি হতে চাচ্ছেন না।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন।
বাসসের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া গত ছয় মাসে একবারও আদালতে হাজির হননি এবং আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন তিনি আর আদালতে আসবেন না।’ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন ‘এটা কি ধরনের কথা, কোনো নাগরিক, যিনি আইন ও সংবিধান মেনে চলেন তিনি কি এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করতে পারেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ছয় মাসে কয়েকবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া একবারও এই মামলায় আদালতে হাজির হননি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রীর অপরাধী মানসিকতার জন্যই তিনি বিচার এড়িয়ে চলছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) পলায়নপর মনোবৃত্তি রয়েছে এবং সেভাবেই তিনি চলছেন, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
খালেদা জিয়ার ক্যামেরা ট্রায়াল করা হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগ খণ্ডন করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা কোনো ক্যামেরা ট্রায়াল নয়। তিনি বলেন, ‘এটা ক্যামেরা ট্রায়াল নয়। পুরো দরজা খোলাই ছিল। তাঁদের কোনো কোনো আইনজীবী গেটে গিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু কোর্ট রুমে ঢোকেননি। তাঁরা আশপাশে বসে ছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) নড়াচড়া করতে অসুবিধা। তিনি ভেতরে থাকেন, সেখান থেকে জেলখানায় আসবেন। তাই ওখানে কোর্ট বসেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে প্রশ্ন করেন ‘অবাধে সবাই যাতায়াত করতে পেরেছে, এটা ক্যামেরা ট্রায়াল হলো কীভাবে?’
জেলগেটে আদালত বসা কোনো নতুন ঘটনা নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতেও বহুবার জেলগেটে আদালত বসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে কর্নেল তাহেরের বিচারের জন্য জিয়াউর রহমানের জেলগেটে আদালত বসানোর কথাও উল্লেখ করেন। কারাগারে আদালত বসানোকে অসাংবিধানিক দাবি করায় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে দলের জন্ম হয়েছে অসাংবিধানিক উপায়ে, সংবিধান লঙ্ঘন করে দল গঠনকারী যারা তার কাছে আমাদের সংবিধান শিখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘তার মানে জিয়া অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে তিনি জেলগেটে বিচার করতে পারবেন, বাকিরা পারবেন না? তারা (বিএনপি) যদি সেটা বোঝাতে চায় তো বলুক।’
আদালত কক্ষে আইনজীবীরা কেন গেলেন না, এই প্রশ্ন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে আমরা কী মনে করব? যে প্যানেল জানে খালেদা জিয়া দোষী? তাকে ডিফেন্ড করে খুব বেশি লাভ হবে না? তাই কোনো ছুতো ধরে তারা বোধ হয় তাঁকে (খালেদা) আর ডিফেন্ড করতে চায় না?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত যথার্থই খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিয়েছে। কারণ তিনি এতিমদের টাকা এতিমদের দেননি বরং আত্মসাৎ করেছেন।
উল্লেখ্য, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বুধবার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখানে ন্যায়বিচার নেই। যা ইচ্ছে তাই সাজা দিতে পারেন। যত ইচ্ছে সাজা দিতে পারেন। আমি অসুস্থ। আমি বারবার আদালতে আসতে পারব না। আর এভাবে বসে থাকলে আমার পা ফুলে যাবে। আমার সিনিয়র কোনো আইনজীবী আসেনি। এটা জানলে আমি আসতাম না।’