ঢাকা ১২:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুল চাষে বছরে আয় ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা

Reporter Name

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় কূল চাষ বেড়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ফলন কিছুটা কমেছে। ফলন কম হওয়ার কারণ হিসেবে সম্প্রতি প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে দায়ী করছে কৃষি বিভাগ ও কুল চাষীরা। কুল চাষ করে জেলায় এ বছর আয় হয়েছে ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

গত পাঁচ বছর কুল চাষ করছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের বাউখোলা গ্রামের আমিনুল ইসলাম মোল্লার ছেলে আজগর আলী মোল্লা। নিজের চার বিঘা জমিতে চলতি বছর কুল চাষ করেছেন এই চাষী। কুল চাষে মোট খরচ করেছেন এক লাখ টাকা। তবে এরই মধ্যে এই কুল চাষী ২ লাখ ২০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করে লাভ করেছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা।

কুলচাষী আজগর আলী মোল্লা বলেন, কম খরচ আবার অধিক লাভ হওয়ায় তরকারি-সবজি চাষ বাদ দিয়ে ৫ বছর আগে কুলের চাষ শুরু করেছিলাম। প্রতি বছরই বেশ লাভবানও হয়েছি। গত বছর ৭৫ হাজার টাকায় তিন বিঘা জমিতে কুল চাষ করে দেড় লাখ টাকার উপরে বিক্রি করেছিলাম। চলতি বছর আরও এক বিঘা বেশী জমিতে কুল চাষ করেছি তবে আশানুরুপ লাভবান হতে পারিনি। কুলের মুকুল আসার শুরুতেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মুকুল পড়ে যায়। যার কারণে আশানুরুপ ফলন পায়নি। ভেবেছিলাম সাড়ে তিন লাখ টাকার উপরে কুল বিক্রি করতে পারবো তবে ফলন কম হওয়ায় বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই লাখ ২০ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির অফিস সহকারি শেখ হাফিজুর রহমান জানান, চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জেলায় কুলের আবাদ হয়েছে ৬৫৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে আবাদ হয়েছে ১০৪ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ৩১৬ হেক্টর, তালা উপজেলায় ১৫৮ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ১৬ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২০ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১৫ হেক্টর, শ্যামনগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে। জেলায় কুল উৎপাদন হয়েছে ৬৭৬০ মেট্রিকটন। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলায় কুল চাষ হয়েছিল ৬৪৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৭০৯২ মেট্রিকটন।

১৪ বছর ধরে কুল চাষ করছেন তালা উপজেলার বাউখোলা গ্রামের কাবিল শেখ। চলতি বছরে তিনি ৫০ বিঘা জমিতে কুষ চাষ করেছেন। নিজস্ব কোন জমি না থাকলেও অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করেন এই কৃষক। ২০ লাখ টাকা খরচ করে এই চাষাবাদ করেছেন তিনি। ৪০-৪২ লাখ টাকার কুল বেঁচাবিক্রির আশা করলেও বিক্রি হয়েছে ২৪-২৫ লাখ টাকার।

স্বাবলম্বী এই চাষী কাবিল শেখ জানান, এক সময়ে সড়কে ভাড়াটে গাড়ি চালিয়েছি। অভাবের সংসার ছিল। ভিটেবাড়ি চাড়া নিজস্ব কোন জমি নেই। ১৪ বছর আগে ২-৩ বিঘা অন্যের জমি লিজ নিয়ে অল্প কুল চাষ শুরু করি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে চলতি বছর ৫০ বিঘা জমিতে কুলচাষ করছি। গত বছর কুল চাষ করে লাভ হয়েছিল ১৪-১৫ লাখ টাকা। এ বছর ২০-২২ লাখ টাকা লাভের আশা থাকলেও সেটি হয়নি। লাভের পরিমাণ কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে এ বছর বর্তমান পর্যন্ত দুই লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এছাড়া জমিতে এখনো ৪-৫ লাখ টাকার কুল রয়েছে।

তিনি বলেন, কুল চাষে খরচ কম আবার লাভও বেশী। জমিতে বাড়তি কোন পরিচর্যা করার দরকার হয় না। এছাড়া কুলের মৌসুম শেষ হলে জমিতে অন্যান্য চাষাবাদও করা হয়। সেখান থেকেও বাড়তি আয় করা সম্ভব। সাতক্ষীরার মাঠ থেকে কুল চলে যায় রাজধানী ঢাকা, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে। এ অঞ্চলের কুলের সব থেকে বড় মোকাম খুলনার কাঁচা বাজার। সেখানকার ব্যবসায়ীরা সাতক্ষীরার কুল চাষীদের নিকট থেকে কুল ক্রয় করেন।

সাতক্ষীরা বড় বাজারের খুচরা কুল বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, ৬০-৭০ টাকায় প্রতিকেজি কুল বিক্রি হচ্ছে বাজারে। কিছুদিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৭০-৮০ টাকায়।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ পরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস জানান, সাতক্ষীরায় পাঁচ হাজার কুল চাষী রয়েছে। সাতক্ষীরার উৎপাদিত কুল ঢাকা, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর কুল চাষ বেড়েছে তবে ফলন কমেছে। এ বছর জেলায় কুল উৎপাদন হয়েছে ৬৭৬০ মেট্রিক টন। কুল থেকে আয় হয়েছে ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৭০৯২ মেট্রিক টন। আয় হয়েছিল ৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের পরামর্শ সহযোগিতা দেওয়া হয়। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় সাতক্ষীরায় কুলের আবাদ বেড়েছে। তবে চলতি বছর দূর্যোগের বুলবুলের কারণে কুল চাষীদের ক্ষতির সম্মূখীন হতে হয়েছে। উৎপাদন কম হওয়ার কারণ হিসেবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে চিহ্নি করা হয়েছে।

About Author Information
আপডেট সময় : ১০:৩৩:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ মার্চ ২০২০
৭৬৭ Time View

কুল চাষে বছরে আয় ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা

আপডেট সময় : ১০:৩৩:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ মার্চ ২০২০

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় কূল চাষ বেড়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ফলন কিছুটা কমেছে। ফলন কম হওয়ার কারণ হিসেবে সম্প্রতি প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে দায়ী করছে কৃষি বিভাগ ও কুল চাষীরা। কুল চাষ করে জেলায় এ বছর আয় হয়েছে ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

গত পাঁচ বছর কুল চাষ করছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের বাউখোলা গ্রামের আমিনুল ইসলাম মোল্লার ছেলে আজগর আলী মোল্লা। নিজের চার বিঘা জমিতে চলতি বছর কুল চাষ করেছেন এই চাষী। কুল চাষে মোট খরচ করেছেন এক লাখ টাকা। তবে এরই মধ্যে এই কুল চাষী ২ লাখ ২০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করে লাভ করেছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা।

কুলচাষী আজগর আলী মোল্লা বলেন, কম খরচ আবার অধিক লাভ হওয়ায় তরকারি-সবজি চাষ বাদ দিয়ে ৫ বছর আগে কুলের চাষ শুরু করেছিলাম। প্রতি বছরই বেশ লাভবানও হয়েছি। গত বছর ৭৫ হাজার টাকায় তিন বিঘা জমিতে কুল চাষ করে দেড় লাখ টাকার উপরে বিক্রি করেছিলাম। চলতি বছর আরও এক বিঘা বেশী জমিতে কুল চাষ করেছি তবে আশানুরুপ লাভবান হতে পারিনি। কুলের মুকুল আসার শুরুতেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মুকুল পড়ে যায়। যার কারণে আশানুরুপ ফলন পায়নি। ভেবেছিলাম সাড়ে তিন লাখ টাকার উপরে কুল বিক্রি করতে পারবো তবে ফলন কম হওয়ায় বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই লাখ ২০ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির অফিস সহকারি শেখ হাফিজুর রহমান জানান, চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জেলায় কুলের আবাদ হয়েছে ৬৫৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে আবাদ হয়েছে ১০৪ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ৩১৬ হেক্টর, তালা উপজেলায় ১৫৮ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ১৬ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২০ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১৫ হেক্টর, শ্যামনগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে। জেলায় কুল উৎপাদন হয়েছে ৬৭৬০ মেট্রিকটন। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলায় কুল চাষ হয়েছিল ৬৪৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৭০৯২ মেট্রিকটন।

১৪ বছর ধরে কুল চাষ করছেন তালা উপজেলার বাউখোলা গ্রামের কাবিল শেখ। চলতি বছরে তিনি ৫০ বিঘা জমিতে কুষ চাষ করেছেন। নিজস্ব কোন জমি না থাকলেও অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করেন এই কৃষক। ২০ লাখ টাকা খরচ করে এই চাষাবাদ করেছেন তিনি। ৪০-৪২ লাখ টাকার কুল বেঁচাবিক্রির আশা করলেও বিক্রি হয়েছে ২৪-২৫ লাখ টাকার।

স্বাবলম্বী এই চাষী কাবিল শেখ জানান, এক সময়ে সড়কে ভাড়াটে গাড়ি চালিয়েছি। অভাবের সংসার ছিল। ভিটেবাড়ি চাড়া নিজস্ব কোন জমি নেই। ১৪ বছর আগে ২-৩ বিঘা অন্যের জমি লিজ নিয়ে অল্প কুল চাষ শুরু করি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে চলতি বছর ৫০ বিঘা জমিতে কুলচাষ করছি। গত বছর কুল চাষ করে লাভ হয়েছিল ১৪-১৫ লাখ টাকা। এ বছর ২০-২২ লাখ টাকা লাভের আশা থাকলেও সেটি হয়নি। লাভের পরিমাণ কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে এ বছর বর্তমান পর্যন্ত দুই লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এছাড়া জমিতে এখনো ৪-৫ লাখ টাকার কুল রয়েছে।

তিনি বলেন, কুল চাষে খরচ কম আবার লাভও বেশী। জমিতে বাড়তি কোন পরিচর্যা করার দরকার হয় না। এছাড়া কুলের মৌসুম শেষ হলে জমিতে অন্যান্য চাষাবাদও করা হয়। সেখান থেকেও বাড়তি আয় করা সম্ভব। সাতক্ষীরার মাঠ থেকে কুল চলে যায় রাজধানী ঢাকা, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে। এ অঞ্চলের কুলের সব থেকে বড় মোকাম খুলনার কাঁচা বাজার। সেখানকার ব্যবসায়ীরা সাতক্ষীরার কুল চাষীদের নিকট থেকে কুল ক্রয় করেন।

সাতক্ষীরা বড় বাজারের খুচরা কুল বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, ৬০-৭০ টাকায় প্রতিকেজি কুল বিক্রি হচ্ছে বাজারে। কিছুদিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৭০-৮০ টাকায়।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ পরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস জানান, সাতক্ষীরায় পাঁচ হাজার কুল চাষী রয়েছে। সাতক্ষীরার উৎপাদিত কুল ঢাকা, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর কুল চাষ বেড়েছে তবে ফলন কমেছে। এ বছর জেলায় কুল উৎপাদন হয়েছে ৬৭৬০ মেট্রিক টন। কুল থেকে আয় হয়েছে ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৭০৯২ মেট্রিক টন। আয় হয়েছিল ৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের পরামর্শ সহযোগিতা দেওয়া হয়। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় সাতক্ষীরায় কুলের আবাদ বেড়েছে। তবে চলতি বছর দূর্যোগের বুলবুলের কারণে কুল চাষীদের ক্ষতির সম্মূখীন হতে হয়েছে। উৎপাদন কম হওয়ার কারণ হিসেবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে চিহ্নি করা হয়েছে।