কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কৃষি সেচ পাম্প নিয়ে স্থানীয় শেখ গ্রুপের সঙ্গে মোল্লা গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৮ টার দিকে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের উত্তর কয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৯ জন আহত হয়ে কুমারখালী ও কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়াও এ ঘটনায় মোল্লা গ্রুপের বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
শেখ গ্রুপের আহতরা বলেন- মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে হামিদুল শেখ (৫০), তার ছেলে নাঈম শেখ (২২), মৃত ইছাহকের ছেলে ইব্রাহিম শেখ (৬৫), আসলাম শেখের ছেলে ইয়ামিন শেখ (১৯) ও ইউনুসের ছেলে আলম শেখ (২০)। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের হাতে ও মাথায় আঘাতের ক্ষত রয়েছে।
আর মোল্লা গ্রুপের আহতরা হলেন- মৃত নওশের মোল্লার ছেলে ছমসের আলী মোল্লা (৫৫), রবিউল আলম মোল্লার ছেলে রুহুল আলম (৬০) ও শামসুল আলম (৫৮) এবং নান্নু মোল্লা (৫০)। তারা কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ছয় বছর ধরে উত্তর কয়া গ্রামের রবিউল আলম মোল্লা তার কৃষি কাজের সেচ পাম্পটি হামিদুল শেখের কাছে ইজারা দিয়েছেন। হামিদুল দুই বছর অন্তর অন্তর বৈশাখ মাসে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা দেন রবিউলকে। তবে এবছর থেকে রবিউল পাম্পটি ইজারা দিবে না বলে তালা লাগিয়ে দেন। তবুও বুধবার সকালে হামিদুল শেখ তার লোকজন নিয়ে তালা খুলতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর মোল্লা গ্রুপের পুরুষরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেলে অন্তত চারটি বাড়িতে ভাঙচুর করেন প্রতিপক্ষরা।
সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শেখ গ্রুপের অন্তত ৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মাথা ও হাতে ব্যান্ডস বাধা। এ সময় পাম্পের ইজারাদার হামিদুল শেখ বলেন, দুই বছর অন্তর অন্তর ৩৬ হাজার টাকা ইজারা দিই রবিউলকে। এখনও দুইমাস মেয়াদ আছে। তবুও তারা তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। আবার আমাদেরই মাথা ফাঁটিয়েছে। আমি বিচার চাই। থানায় মামলা করব।
তার ভাই কয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ইমরান শেখ বলেন, আমার ভাই হামিদুল ও ভাতিজা নাঈম সকালে বোরিং চালাতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন মোল্লা, রেজাউল মোল্লাসহ তাদের লোকজন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এতে ৫ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দুপুরে সরেজমিন উত্তর কয়া গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রবিউল মোল্লাসহ কয়েকজনের বাড়ির বেড়া ও জানালার গ্লাস ভাঙা। আতঙ্কে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন কেউ কেউ।
এ সময় পাম্প মালিক রবিউল মোল্লার স্ত্রী জাহানারা খাতুন বলেন, পহেলা বৈশাখেই মেয়াদ শেষ হয়েছে ইজারার। ছেলে পেলে নাতিপুতি বড় হয়েছে। এখন নিজেরায় পাম্প চালাবো। কিন্তু হামিদুলরা জোর করেই পাম্প নিতে না পেরে আমাদের লোকজনকে মারধর করেছে। কুপিয়েছে। বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। আমি সুষ্ঠ বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ ছাত্রী বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন মারধরের পর ভাঙচুর করেছে। এখন লুটপাট এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাচনের হুমকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তা চাই।
জানা গেছে, কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম পান্না মোল্লা। তিনি সম্প্রতি শহরে থাকেন। তার বাড়িতে ভাড়া থাকেন বেলতলা এলাকার মারুফ হোসেন ও পলী আক্তার দম্পতি।
এ বিষয়ে পলী আক্তার বলেন, মাস ছয়েক হলো ভাড়া আছি। কিন্তু আজ সকাল থেকে মারামারি চলছে। বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে। প্রতিপক্ষের লোকজন দুই ঘণ্টা আলটিমেটাম দিয়েছেন। সে জন্য মালামাল নিয়ে অন্যেত্রে চলে যাচ্ছি।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকা শান্ত আছে বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, সেচ পাম্পের ইজারা বা মালিকানা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশকিছু লোকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কয়েকটি বাড়িতে হালকা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
সবুজদেশ/এসইউ