কুষ্টিয়াঃ

ভারতের ফারাক্কার সবকটি গেটে খুলে দেয়ার কারণে কুষ্টিয়ার পদ্মা ও গড়াই নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল স্রোত এখন আঘাত হানছে শহর রক্ষা বাঁধের গুরুত্বপূর্ণ অংশে।

শুধু তাই নয়, উপজেলার এলাকার বিভিন্ন স্থানে নদী রক্ষা বাঁধেও প্রবল স্রোত এখন আঘাত হানছে। এতে আকস্মিক এই বন্যা প্লাবনে কৃষি জমির ফসল বিনষ্টের সাথে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে দুর্গত এলাকার মানুষ। আক্রন্তদের অভিযোগ, চরম বিপদ সংকুল অবস্থায় ন্যুনতম জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও পাননি এখনও।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে পদ্মা নদীতে ক্রমবর্ধমান পানিতে প্রথমদিকে দৌলতপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৩৭টি গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়। কিন্তু এখন এই বন্যা প্লাবন আর নিম্নাঞ্চলই নয় আরও ৪টি উপজেলার আংশিক লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। বন্যার বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু জানান, ভারতের উত্তরাঞ্চলে অব্যহত ভারি বর্ষণের ফলে গঙ্গা অববাহিকায় বিগত ১৬/১৬দিন পূর্ব থেকে পানি বাড়তে থাকে। শুরু থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাত্রা পরিমাপক পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও গড়াই নদীর গাড়াই রেল ব্রিজ পয়েন্ট থেকে পানি বৃদ্ধির মাত্রা সংগ্রহ করা হচ্ছিল।

সংগৃহীত তথ্যমতে, প্রতিদিন গড় দশমিক ৪ থেকে ৮ সে:মি: পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জব্রীজ পয়েন্টে সোমবার পানি বৃদ্ধির পরিমান ছিলো ১৪.১০ সে:মি:। যেখানে নির্ধারিত বিপদসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সে:মি:। কিন্তু আকস্মিক ভাবে গত ২৪ ঘন্টায় পানি বৃদ্ধির হার দ্বি-গুন বেড়ে যাওয়ায় তা বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে। সর্বশেষ আজ বুধবার বেলা ৩টায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে কাউন্ট হয়েছে ১৪ দশমিক ২৮ সে:মি:। এই বৃদ্ধির মাত্রা অব্যহত রয়েছে। পূর্বাভাষ মতে এই বৃদ্ধির মাত্র আগামী আরও ৭দিন থাকবে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস জানান, আবাদি কৃষি জমির ১৩শ ৫৯ হেক্টর জমিতে থাকার বিভিন্ন ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্টের রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ পানি বৃদ্ধির মাত্রা হঠাৎ যেভাবে দ্বি-গুন হারে দেখা দিয়েছে এবং পূর্বভাষের তথ্যমতে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে আরও দ্বি-গুন বা তারও বেশী কৃষি জমির ফসল বিনষ্টের আশংকা করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখনও আক্রান্ত এলাকায় তথ্য সংগ্রহ কাজ চলছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ এমুহুর্তে বলা সম্ভব নয়।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন জানান, তাৎক্ষনিক ভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের সম্ভাব্য সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সংশিষ্ট উর্দ্ধতন মহলে অবগত করা হয়েছে এবং ত্রান ও দুর্যোগ মন্ত্রনারয়ের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তার জন্য।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here