কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ

কুষ্টিয়ায় পিয়াস হোসেন নামে ৯ বছরের এক শিশুকে ফাঁস ও বস্তা চাপা দিয়ে হত্যা করেছে দুলাভাই শাকিল।

মঙ্গলবার বিকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দোস্তপাড়া এলাকায় আবদুল মজিদ বাবলুর মালিকানাধীন সনি রাইস মিলের গোডাউনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে শাকিলকে আটক করেছে স্থানীয়রা।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ সনি রাইস মিলের ভ্যানচালক ছিদ্দিক, মনজের ও নাজমুলকে আটক করেছে।

নিহত পিয়াস হোসেন দোস্তাপাড়ার সুলতান শেখের একমাত্র ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।

আটক শাকিল একই এলাকার বাহাদুরের ছেলে। এক বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে পিয়াসের বোনকে বিয়ে করে শাকিল।

স্থানীয়রা জানান, নিহত পিয়াসের দুলাভাই শাকিল সনি রাইস মিলের গুড়ার গোডাউনে কাজ করেন। ঘটনার আগে ওই রাইস মিলের ভিতরে শিশু পিয়াস আরেক শিশুর সঙ্গে খেলা করছিল। এ সময় পিয়াসকে তার দুলাভাই শাকিল ডাক দেয়। কিন্তু পিয়াস যেতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায় দুলাভাই শাকিল।

ওই রাইস মিলের গোডাউনে নিয়ে শাকিলসহ আরও কয়েকজন গলায় রশি পেঁচিয়ে পিয়াসকে হত্যা করে এবং বস্তা চাপা দিয়ে রাখে। ঘটনা বুঝতে পেরে পিয়াসের সঙ্গে থাকা অন্য শিশুটি দৌড়ে বাড়ির লোকজনকে জানায়।

পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে আসলে দুলাভাই শাকিল দৌড়ে পালাতে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে ধাওয়া করে আটক করে। সংবাদ পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বস্তার নিচে চাপা দেয়া অবস্থায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করে।

নিহত পিয়াসের বাবা সুলতান শেখ জানান, খাজানগর গ্রামের বাহাদুরের ছেলে শাকিলের সঙ্গে এক বছর আগে তার মেয়ে সুবর্ণার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে শাকিল তার মেয়েকে মারধর ও নির্যাতন করত। দেড় মাস আগে পারিবারিকভাবে সালিশ বিচার করে সুবর্ণাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায় শাকিল।

তিনি জানান, ১৫ দিন আগে আবারো মেয়েকে মেরে মাথা ফাটিয়ে ঘরে আটকে রাখে। খবর পেয়ে আমরা যেয়ে সুবর্ণাকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। এ ঘটনার জের ধরে শাকিল আমাদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছিল।

তিনি বলেন, সকাল ১১টার দিকে ছেলে পিয়াসকে শাকিল ও তার ভাই শাহিন এবং সনি রাইস মিলের গুড়া মিস্ত্রী নুর ইসলাম প্রস্তাব দেয় ক্যানালে গেলে ৫০০ টাকা দেব। তখন পিয়াস দুলাভাই শাকিলকে বলে মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করে আসি। পিয়াস মার কাছে জিজ্ঞাসা করলে তার মা ক্যানালে যেতে নিষেধ করেন। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে আমার ছেলে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান বাবা সুলতান শেখ। নিহত পিয়াসের মা পিয়ারা খাতুন বলেন, ঘাতক শাকিল ও তার আরও ৩-৪জন সহযোগী মিলে আমার ছেলেকে গুড়ার গোডাউনে হত্যা করে লাশ বস্তার নিচে চাপা দিয়ে রাখে।

শাকিলের স্ত্রী সুবর্ণা জানায়, বিয়ের পর দেখতে পায় শাকিল একজন মাদকাসক্ত। প্রতিনিয়ত সে আমাকে মারধর করত। বাবার বাড়ি চলে আসার সময় শাকিল হুমকি দেয়, তোকে অথবা তোর ভাইকে মেরে ফেলব।

সনি রাইস মিলের মালিক আবদুল মজিদ বাবলু জানান, ৩ বছর ধরে শাকিল ও নুর ইসলাম আমার মিলে মিস্ত্রির কাজ করে।

কুষ্টিয়া মডেলের থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, পিয়াস হত্যার মুল ঘাতক শাকিলকে আটক করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here